Breaking News

ইতিহাস গড়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ নারী দল

ষ্পোর্টস ডেষ্ক:
শেষ এক বলে ২ রান। ক্রিজে জাহানারা, অন্য প্রান্তে নবাগত সালমা। হারমানপ্রিতের বল ডাউন দ্য উইকেটে এসে জাহানারা আলমের শট মিড উইকেটে। পড়িমরি করে দ্রুত দুটি রান নিয়ে নিজেকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়া। রান পুরো করে যখন মাটিতে শুয়ে জাহানারা, তখন বিজয় পতাকা নিয়ে মাঠে ঢুকে পড়ে তার সতীর্থরা। ত্বরিত উঠে উল্লাসে মেতে ওঠেন জাহানারাও। উড়ছে বাংলাদেশের সমর্থকরাও। শেষ বলে দুই রান নিয়ে ইতিহাস গড়া জয়। গত ৫ বারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে হারিয়ে নারীদের টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপ জিতল বাংলাদেশ। সাকিব-মুশফিকরা যেটা জিততে পারেনি এতদিন।

২১ বছর আগে মালয়েশিয়ায় আইসিসি ট্রফি জিতে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পায় আকরাম-বুলবুল-নান্নুরা। ওই মালয়েশিয়াতেই রচিত হলো আরেকটি ইতিহাস। আগের সব আসরের চ্যাম্পিয়ন, প্রবল পরাক্রমশালী ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে এশিয়া কাপ ক্রিকেটে শিরোপা জিতল বাংলাদেশের নারী দল। সালমা-রুমানাদের হাত ধরেই এলো দেশের ক্রিকেটের প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা। কুয়ালালামপুরে রোববার (১০ জুন) দারুণ বোলিংয়ে ভারতকে ১১২ রানে থামায় বাংলাদেশ। উত্তেজনাপূর্ণ রান তাড়ায় অনেক চড়াই-উৎরাই শেষে রোমাঞ্চকর জয় ধরা দেয় শেষ বলে।

এশিয়া কাপে প্রায় অপরাজেয় ভারতের বিপক্ষে ফাইনালের জয় স্রেফ একটি ম্যাচে অঘটন নয়। প্রাথমিক পর্বেও দারুণ খেলে ভারতকে ৭ উইকেটে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এশিয়া কাপের ইতিহাসে সেটা ছিল ভারতের প্রথম পরাজয়। শ্রীলঙ্কার কাছে হার দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরুর পর টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে শিরোপা জিতল সালমা খাতুনের দল।

শেষ ২ ওভারে ১৩ রানের সহজ সমীকরণ অনেক কঠিন হয়ে পড়েছিল শেষের আগের ওভারে মাত্র ৪ রান করায়। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৯ রান। ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনালে শেষ ওভারে ঠিক ৯ রান করার চেষ্টায় হেরেছিল সাকিবরা।

প্রথম বলে ১ রান নেন সানজিদা। পরের বলে দুর্দান্ত ইনসাইড আউটে রুমানা আহমেদের চার। পরের বলে ১। ৩ বলে যখন প্রয়োজন ৩ রান, ছক্কায় শেষ করতে গিয়ে সীমানায় ধরা পড়েন সানজিদা। জমে ওঠে ম্যাচ। পরের বলে এক রান নেয়ার পর নিজের বোকামিতে রান আউট রুমানা। ২২ বলে ২৩ রানের মহামূল্যবান ইনিংস খেলেন রুমানা। কিন্তু তার বিদায়ে শঙ্কা বাড়ে। শেষ বলে স্ট্রাইকে যে নতুন সালমা। কিন্তু না, জাহানারার ব্যাটেই রচিত হয় স্বপ্ন জয়ের ইতিহাস।

এর আগে রান তাড়ায় বাংলাদেশকে ভালো শুরু দিয়েছিলেন শামিমা সুলতানা ও আয়েশা রহমান। দুজনের ৩৫ রানে জুটির পরই জোড়া ধাক্কা। লেগ স্পিনার পুনম যাদবের পরপর দুই বলে আউট দুজন। তৃতীয় উইকেটে সেই ধাক্কা সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন ফারজানা হক ও নিগার সুলতানা। এই জুটিও ভাঙেন পুনম। ফিরিয়ে দেন প্রাথমিক পর্বে এই দুই দলের লড়াইয়ে ম্যাচ জেতানো ফিফটি করা ফারজানাকে। দ্বাদশ ওভারে তখন বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ৫৫। একটু শঙ্কায় দল। কিন্তু ঠা-া মাথায় দলকে এগিয়ে নেন নিগার সুলতানা ও রুমানা আহমেদ। ৬ ওভারে যখন প্রয়োজন ৪৭ রান, ভারতের অভিজ্ঞতম বোলার ঝুলন গোস্বামির টানা তিন বলে চার মেরে জয়ের পথ সহজ করেন নিগার। কিন্তু শেষ করতে পারেননি তিনি। আবারও বাধা সেই পুনম। যদিও ভুল নিগারের, আউট হন ফুলটস বলে। ২৪ বলে করেছেন ২৭ রান।

তখন হাল ধরেন দলের সেরা ক্রিকেটার রুমানা। শেষ দিকে দ্রুত রান তোলার দায়িত্ব যার, সেই ফাহিমা ফেরেন ৭ বলে ৯ রান করে। নাটক আরও জমে ওঠে শেষাংশে গিয়ে। কিন্তু শেষ হাসি নারী দলের।

ম্যাচের শুরুটাও বাংলাদেশের ছিল দুর্দান্ত। টস জিতে বোলিংয়ে নামা বাংলাদেশ শুরুতেই ভারতকে চমকে দিয়েছিল কৌশল পাল্টে। নতুন বলের নিয়মিত বোলার জাহানারা নয়, বাংলাদেশ ইনিংস শুরু করে নাহিদা আক্তারের বাঁ-হাতি স্পিনে। আরেক পাশে যথারীতি সালমার অফ স্পিন। ফলে ভারতের ইনিংস শুরুতেই গতিহারা। নিজেদের অন্যতম সেরা স্মৃতি মান্ধানাকে রান আউটে হারায় ভারত। বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে তারা করে মাত্র ২১ রান। নাহিদার ৩ ওভার থেকে মাত্র ৬ রান!

জাহানারা বোলিংয়ে এসেই নেন বড় উইকেট। বোল্ড করেন দিপ্তি শর্মাকে। খাদিজা ফিরিয়ে দেন এশিয়ার সফলতম ব্যাটার মিতালি রাজকে। রান নেয়ার সময় দিক বদলে অবস্ট্রাক্টিং দা ফিল্ড আউট হয়ে ফেরেন অনুজা পাতিল। নবম ওভারে ভারতের রান তখন ৪ উইকেটে ৩২। সেখান থেকে দলকে উদ্ধারের অভিযানে নামেন অধিনায়ক হারমানপ্রিত কাউর। জুটি গড়ার চেষ্টা করেন ভেদা কৃষ্ণমূর্তির সঙ্গে। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙতে দ্বিতীয় স্পেল করেন অধিনায়ক সালমা। সফলও হন। সুইপ করত গিয়ে বোল্ড ভেদা। রুমানা এরপর এক ওভারেই আউট করেন তনিয়া ভাটিয়া ও শিখা পান্ডেকে। ৭৪ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে আরও বিপদে ভারত। কিন্তু হারমানপ্রিত ছিলেন টিকে। নারী ক্রিকেটে সময়ের সেরা ব্যাটারদের একজন তিনি। দারুণ অভিজ্ঞ, হাতে জোর ও শট অনেক। প্রয়োজনের সময় দারুণ খেলে আবারও এগিয়ে নিলেন দলকে। শেষ দিকে দলকে দেন দ্রুত রান। ৪২ বলে ৫৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে আউট হন ইনিংসের শেষ বলে। ভারত ততক্ষণে লড়বার মতো ১১২ রান করে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত : ২০ ওভারে ১১২/৯ (মিতালি ১১, স্মৃতি ৭, দিপ্তি ৪, হারমানপ্রিত ৫৬, অনুজা ৩, ভেদা ১১, তানিয়া ১, শিখা ১, ঝুলন ১০, একতা ১*; নাহিদা ০/১২, সালমা ১/২৪, খাদিজা ২/২৩, জাহানারা ১/২৩, রুমানা ২/২২, ফাহিমা ০/৮)

বাংলাদেশ : ১১৩/৭ (শামিমা ১৬, আয়েশা ১৭, ফারজানা ১১, নিগার ২৭, রুমানা ২৩, ফাহিমা ৯, সানজিদা ৫ জাহানারা ২*, সালমা ০*; একতা ০/১৩, শিখা ০/১০, দিপ্তি ০/১৯, অনুজা ০/২৩, পুনম ৪/৯, ঝুলন ০/২০, হারমানপ্রিত ২/১৯)।

প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ : রুমানা আহমেদ। প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজ : হারমানপ্রিত কাউর।

About admin

Check Also

১৫ই আগষ্ট আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন জাপানি নভোচারী ফুরুকাওয়া

জাপানের নভোচারী ফুরুকাওয়া সাতোশির দ্রুত হলে ১৫ই আগষ্ট আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে দ্বিতীয় ভ্রমণ নির্ধারণ করা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *