২০১১ সালের ২৫ মার্চ খালিশপুরে এক জনসভায় খুলনায় একটি আইটি পার্ক নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে অনুযায়ী ২০১১ সালের ২১ ডিসেম্বর নগরীর শিরোমনি এলাকায় আইটি ভিলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। কিন্তু জমি স্বল্পতার অজুহাতে সেখানে আর আইটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রতিশ্রুতির ৬ বছর পর গতবছর খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) এর ৮ একর জমিতে আইটি পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয় এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়।
এবার অনিশ্চয়তার কবলে খুলনার তথ্য প্রযুক্তি পার্ক বা আইটি পার্ক। কুয়েটে আইটি পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিল। নতুন করে দাদা ম্যাচের সাড়ে ৩ একরের মতো জমি বন্দোবস্ত চেয়েছে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ
তথ্য প্রযুক্তি পার্ক বা আইটি পার্ক সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে এক বিশাল কর্মযজ্ঞের জায়গা। এই পার্ককে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে নতুন উপ-শহর, তৈরি হয় ব্যাপক কর্মসংস্থান। এ সব কথা মাথায় রেখেই নগরীর একটি প্রান্তে সহজে যোগাযোগ করা যায় এমন জমিতে পার্কটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, খুলনার বিভিন্ন সংগঠন ও খুলনা বাসী দের দাবীর মুখে পরবর্তীতে কুয়েটের ৮ একর জমিতে এই পার্ক নির্মাণের বিষয়ে ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সংগে এক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছিলো। সে মোতাবেক, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভূমি উন্নয়ন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, অ্যাপ্রোচ সড়ক ও সড়ক বাতি নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। পরবর্তিতে কাজ ও শুরু হয় এবং বর্তমান সর্বশেষ অবস্থা অনুযায়ী সড়ক ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। প্রায় ২১ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মানাধীন পাঁচতলা ইনকিউবেশন কাম ট্রেনিং সেন্টারের প্রথম তলার কাজ শেষ হয়েছে। । বর্তমান গতিতে কাজ চললে হয়তোবা আগামী বছরের মার্চ বা এপ্রিলে এই কাজ শেষ হতে পারে। মূলত ট্রেনিং সেন্টারটি নির্মাণের পরেই অন্যান্য অবকাঠামোর কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কুয়েটে আইটি পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিল করায় অন্যান্য স্থাপনা আর নির্মাণ করা হবে না। এজন্য গত বছরের নভেম্বর থেকে প্রথম পর্যায়ে ৪টি প্যাকেজের মাধ্যমে শুরু হয় অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। অন্যান্য প্যাকেজের কাজ চলতি বছর শুরু হওয়ার কথা ছিলো।
কিন্তু মাঝ পর্যায়ে এসে বলা হচ্ছে কুয়েটের ওই জমিতে আইটি পার্ক বা হাইটেক পার্ক করা হবে না। এজন্য নতুন করে জমি খুঁজতে হবে। ইতোমধ্যে বন্ধ ঘোষিত দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির ভেতরে সাড়ে ৩ একর জমি বন্দোবস্ত চেয়ে চিঠি ও পাঠিয়েছে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। তবে কুয়েটের ওই জমিতে নির্মাণাধীন ইনকিউবেশন ও ট্রেনিং সেন্টারের কাজ যথাসময়ে শেষ হবে এবং সেন্টারটি চালু হবে। আপাতত ৬২ হাজার বর্গফুটের ৫ তলা একটি আইসিটি ইনকিউবেশন ও ট্রেনিং সেন্টার ভবন নির্মাণ করা হবে। এবং এই ভবন নির্মাণ করেই এই প্রকল্প এখানেই শেষ হয়ে যাবে। হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের তত্ত্ববধানে এটি পরিচালিত হবে। কুয়েটের শিক্ষার্থীরা এখান থেকে সেবা নিতে পারবে। আর পূর্ণাঙ্গ আইটি পার্ক নির্মাণের জন্য খুলনা নগরীর অপর অংশে জমি দেখা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ১২ আইটি পার্ক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় পূর্ণাঙ্গ আইটি পার্কটি নির্মাণ করা হবে। কিন্তু নতুন করে জমি বন্দোবস্ত, প্রকল্প তৈরি ও অনুমোদন এবং অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু করতে অনেক সময় লাগবে। ফলে আবারও দীর্ঘসূত্রিতা এবং এক প্রকার অনিশ্চয়তার কবলে পড়তে যাচ্ছে খুলনার মানুষের কাক্সিক্ষত আইটি পার্ক প্রকল্প। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ খুলনার নাগরিক নেতারা। গ্লোবাল খুলনার আহবায়ক এবং এই প্রতিবেদক মনে করেন, অতীতের বিভিন্ন প্রকল্পের মতো এটিও মুখ থুবড়ে না পড়ে। বঞ্চিত খুলনাবাসী সম্প্রতি পাইপ লাইনে মাধ্যমে গ্যাস আনার প্রকল্প বাতিল হতে দেখেছে। উক্ত প্রকল্পটির পাইপ বসানোও হয়েছিলো। কিন্তু গ্যাসের মডুদের স্বল্পতা এবং গ্যসের চাপ কমে যাওয়ার অজুহাতে সে প্রকল্প বন্ধ করে দেয়া হয়। আর তাই গ্লোবাল খুলনার আহবায়ক খুলনা বাসীদের এ বিষয়ে সোচ্চার হবার ও আহবান জানিয়েছেন।
ইতোমধ্যে খুলনার দাদা ম্যাচের সাড়ে ৩ একরের মতো জমি হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ বন্দোবস্ত চেয়েছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি অনুমোদনের জন্য জেলা প্রশাসনের ভূমি শাখা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবও পাঠিয়েছে। অবশ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।