Breaking News

গ্রেটার খুলনা কমিউনিটি জাপান’র আয়োজনে জাপানে প্রথমবারের মতো নবান্ন উৎসব ১৪২৫ পালিত

 রাহমান মনি // একটি সময় ছিল যখন বাংলার ঘরে ঘরে অগ্রহায়ন মাসে নতুন শস্যে পিঠা-পায়েসের ধুম পড়ে যেতো। আমন্ত্রণ জানানো হতো  আত্মীয়-পরিজনকে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হতো পিঠামেলার। উৎসব মুখর পরিবেশে আসর বসানো হতো পালা গানের। যাকে বলা হতো “নবান্ন উৎসব”।
      প্রথম দিকে কেবলমাত্র হিন্দু সমাজেই সাড়ম্বরে নবান্ন উৎসব পালিত হলেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশে সকল মানুষের সবচেয়ে অসাম্প্রদায়িক উৎসব হিসেবে বাংলা নববর্ষ উদযাপন এর পরই নবান্ন উৎসব স্থান করে নিয়েছে বর্তমানে । ১৯৯৮ সাল থেকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘নবান্ন উৎসব’ ব্যাপক আকারে শুরু হয় ।
       নিজস্ব সংস্কৃতি প্রিয় জাপান প্রবাসীরা  জাপানে  এপর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও ধর্মীয় আচার-অনুস্টান  পালন করে আসলেও এই উৎসবটি এখনো পর্যন্ত কেহই পালন করার উদ্যোগ নেয়নি। যদিও পিঠা-পুলি বা পিঠা উৎসব নামে বিভিন্ন স্থানে এর আয়োজন করা হয়েছিল ।
       এই প্রথমবারের মতো জাপানের “গ্রেটার খুলনা কমিউনিটি জাপান” জাপানে “নবান্ন উৎসব ১৪২৫” নামে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করে। একটি আঞ্চলিক সংগঠনের ব্যানারে উৎসবটির আয়োজন করা হলেও ধর্ম বর্ণ , দল মত , আঞ্চলিকতা নির্বিশেষে  সর্বস্তরের প্রবাসীরা উৎসবে যোগ দিয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে থাকেন দিনভর।  
অনুষ্ঠানের উদ্ভোধনী অংশে বক্তব্য রাখেন মুন্সী কে আজাদ, গুল মোহাম্মদ মনি ঠাকুর, জাকির হোসেন জোয়ারদার, মাসুদুর রহমান। অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্ভোধনী ঘোষণা প্রদান করেন কাজী মাহফুজুল হক লাল। এছাড়াও উপদেষ্টা নাজনিন রহমান উপস্থিত অনুষ্ঠানে ছিলেন।
    প্রবাসীদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ দুতাবাসের ইকোনোমিক মিনিস্টার ডঃ সাহিদা আকতার , কমার্স কাউন্সেলর মোঃ হাসান আরিফ, কাউন্সেলর (শ্রম) মোঃ জাকির হোসেন সহ দুতাবাসের অন্যান্য  কর্মকর্তা কর্মচারী বৃন্দ। এছাড়া স্থানীয় জাপানী অতিথিরাতো ছিলেনই।
      ১১ নভেম্বর ২০১৮ রোববার টোকিওর অদূরে সাইতামা প্রদেশের সোকা সিটি সেজাকি কমিউনিটি সেন্টার-এ আয়োজিত প্রথমবারের মতো ব্যাতিক্রম এ আয়োজনে জাপান প্রবাসীদের ঢল নেমেছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে আয়োজকদের হিমসিম খেতে হয়। তারপরও আপ্যায়নে কোন ত্রুটি ছিল না। বরং বেশ আন্তরিকতার সাথেই বিপুল সংখ্যক অতিথিকে আপ্যায়িত করা হয়।
নবান্ন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব। বাংলার কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যে সকল আচার-অনুস্টান ও উৎসব পালিত হয়, নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম।
 ‘নবান্ন শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ‘নতুন অন্ন’। নতুন ধান থেকে উৎপাদিত চালে প্রথম রান্না উপলক্ষ্যে আয়োজিত উৎসবই হচ্ছে নবান্ন উৎসব । আর অগ্রহায়ন মাসে নতুন আমন ধানের চালে তৈরি বিভিন্ন পিঠা হচ্ছে নবান্ন উৎসবের অন্যতম উপকরণ।
তাই গ্রেটার খুলনা কমিউনিটি আয়োজিত নবান্ন উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল পিঠা। ১০ টি জেলার সমন্বয়ে গ্রেটার খুলনার বিভিন্ন অঞ্চলের ভাবীদের হাতে তৈরি হরেক রকম পিঠা  প্রবাসীরা উপভোগ করেছেন বেশ। সাথে চিংড়ি ঘের খ্যাত খুলনার বিখ্যাত চিংড়ি সহ দেশীয় স্বাদে মুখরোচক রাতের আহার তো ছিলই।
 উৎসব মানেই বিনোদনের ব্যাবস্থা রাখা , যার অন্যতম অংশ সঙ্গীত। সেই চিন্তা মাথায় রেখেই বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুস্টান সাজানোয় আয়োজনকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
গোলাম মাসুম জিকোর পরিকল্পনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের সাথে সামঞ্জস্য থাকায় যথেষ্ট মুনশীয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। বিশেষ করে উদ্বোধনী পরিবেশনা । উদ্বোধনী গীতিনাট্যটি নির্দেশনায় ছিলেন জেসমিন সুলতানা কাকলি ও বহ্নি আহমেদ । অনুষ্ঠানের নৈশভোজ এবং পিঠা সমন্বয় হিসেবে কাজ করেছেন তফসির আহমেদ তুহিন , মোস্তাফিজুর রহমান জনি , জেসমিন সুলতানা কাকলি প্রমুখ। 
 পুরো আয়োজনকে পাঁচটি পর্বে ভাগ করা হয়েছিল । এগুলো হচ্ছে উদ্বোধন , কবিতা সন্ধ্যা , নবান্নের নৃত্যানন্দ  , নবান্নের গীত সন্ধ্যা , এবং কনসার্ট। আর এগুলোর উপস্থাপনার প্যানেলে ছিলেন জিকো , বহ্নি আহমেদ , ববিতা পোদ্দার , কাউসার হাসান লাজু , শিলা আফরোজ , তনুশ্রী গোলদার বিশ্বাস প্রমুখ ।
বিশেষ সহযোগিতায় ছিল স্থানীয় প্রবাসী সাংস্কৃতিক সংগঠন স্বরলিপি ও উত্তরণ । গ্রাম বাংলার আবহে মঞ্চটি তৈরি করেছেন শিল্পী সজীব । সহযোগিতায় ছিলেন জিকো , বিপ্লব , লাজু , জনি প্রমুখ ।
        সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন শিলা , লাজু , তনুশ্রী , লাবনী , জিকো , সম্প্রীতি , প্রগতি , তন্বী , যেরোম  গোমেজ , তানিয়া ইসলাম , ছুটি দত্ত , শরাফুল ইসলাম , মৌসুম হোসাইন , শব্দ , বাচ্চু দত্ত , নুপুর , সাকুরা , মিতালী ঘোষ , ফারিয়াল রামিহা , আফরিন জাহান রোশনি , জনি , শেখ মোঃ বাদল , দীপ্ত , সুমী চৌধুরী , মুহিত এবং বাবু ঢালী প্রমুখ । এছাড়াও যন্ত্রে ছিলেন ইমতিয়াজ বাবু , পাপ্পু , পিনু, সোমা, সাইমন এবং মোঃ নাজিম উদ্দিন প্রমুখ।
       নবান্ন উৎসব বাংলার মানুষের কাছে এক অতি আপন সংস্কৃতি , যা বাঙালী মননের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ । তাই ,  প্রতি বছর এই উৎসব আয়োজনের আশাবাদ ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় ।
প্রতিবেদনঃ রাহমান মনি
সৌজন্যেঃ সাপ্তাহিক
   

About admin

Check Also

১৫ই আগষ্ট আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন জাপানি নভোচারী ফুরুকাওয়া

জাপানের নভোচারী ফুরুকাওয়া সাতোশির দ্রুত হলে ১৫ই আগষ্ট আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে দ্বিতীয় ভ্রমণ নির্ধারণ করা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *