ঢাকা ডেস্ক: ১ম পর্ব: অবশেষে মার্চ মাসের ২৫ তারিখ থেকে জাপানে গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দূতাবাসের নতুন ঠিকানা (চিওদা কু-র, কিওই-চো এলাকায়) নিজস্ব জমিতে নির্মিত নিজস্ব ভবনে দূতাবাসের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। টোকিওর মেগুরো কু-র বর্তমান দূতাবাস ভবনের দুটো অংশই ৩১ মার্চ ২০১৬ পর্যন্ত কার্যকারী থাকবে, যদিও অতি জরুরী কনস্যুলার বিভাগের কার্যক্রমের ডেটাবেজ সংরক্ষণ ও বিবিধ কারনে একটা সমান্তরাল নেটওয়ার্ক আরো কিছুদিন দু’জায়গায় যোগসূত্র রক্ষা করে চলবে।
জাপান সরকারের গুরুত্বপূর্ন প্রশাসনিক এলাকায়, পার্লামেন্ট ভবন, বিভিন্ন মন্ত্রনালয়, প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ের কাছাকাছি বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থে, জাপান সরকারের কাছে পাঁচ বছর মেয়াদী কিস্তিতে কেনা ৭১৪ বর্গ মিটার জমিতে প্রায় নব্বই কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত এই ভবনটি এখন জাপানে বাংলাদেশের মর্যাদার প্রতীক, লাল সবুজ পতাকার বাংলাদেশ এখন বিশ্বের তৃতীয় পরাশক্তি জাপানের রাজধানী টোকিওর প্রাণকেন্দ্রে সদর্ভে দাড়িয়ে।
দূতাবাস ভবন তথ্য:-
জমির পরিমান: ৭১৪ বর্গ মিটার
(জাপান অর্থ মন্ত্রনালয়ের মালিকানাধীন ৭১৪ বর্গ মিটার সমতল ভূমি, ১১১ কোটি ইয়েন (প্রায় এক কোটি ডলার) মূল্যে ৫ বছর মেয়াদী সুদহীন কিস্তিতে বাংলাদেশ সরকার ক্রয় করতে সক্ষম হয়।)
ইমারত: ৪৪৫.৬৫ বর্গ মিটার
ফ্লোর স্পেস: ১৪২৭.৩০ বর্গ মিটার
নকশা ও স্থাপত্য উপদেষ্টা: KPA (জাপান) এবং Vernacular Architects (বাংলাদেশ)
নির্মাণ প্রতিষ্ঠান: Muramoto Corporation
নির্মাণ ব্যায়: ৯০ কোটি টাকা
নির্মাণ সমাপ্ত: ২০১২ সাল (টার্গেট)
প্রকৃত সমাপ্তি : মার্চ ২০১৬
২০১০ সালের ২৮ নভেম্বর, প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা টোকিওস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১২ সালে নির্মাণ সমাপ্তির টার্গেট থাকলেও প্রায় ৪ বছর দেরীতে তা সম্পন্ন হয়। জাপানে বিধিবদ্ধ নিয়ম কানুন, বাংলাদেশের সরকারী কার্যক্রমে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এই বিলম্বের কারন। একটি সূত্রে জানা গেছে গত ক’বছরে বেশ কটি দেশ জাপানে তাদের দূতাবাস নির্মাণ করেছে কিন্তু এতটা সময় ক্ষেপন অন্য কোন দেশের ক্ষেত্রে হয়নি।
রাষ্ট্রদূত আশরাফ-উদ দৌলার উদ্দোগে জমি কেনা ও ভবন নির্মাণের প্রচেষ্টা শুরু হয়। দুটো সরকারের সাথে যোগাযোগ ও তা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ার দূরুহ কাজে সে সময়ের দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবদান ছিল। ৱাষ্ট্রদূত দৌলার সময়ে একাধিক কিস্তির টাকাও পরিশোধ করা হয়। পরবর্তিতে রাষ্ট্রদূত মুজিবুর রহমানের সময় প্রধানমন্ত্রী দূতাবাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্হাপন করেন এবং প্রাথমিক কার্য্যাদিও সম্পন্ন করেন।
নির্ধারিত সময়ে নির্মাণ কাজ শুরু না হওয়া, এত ছোট কাজে বড় বড় নির্মাতার অনিহা, নানান জটিলতায় একসময় নির্মাণ কাজ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন তার কার্যকালে আবার উদ্দোগ নেন এবং তার সহকর্মী দূতাবাস কর্মকর্তাদের নিরবিচ্ছিন্ন সহযোগিতায় ও প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহ ও নির্দেশে শেষ পর্যন্ত এই অসাধ্য সাধন হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে যোগদানের জন্য জাপান ছাড়ার দু’দিন আগে দূতাবাস ভবনের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাতে কমিউনিটি ও মিডিয়ার সবাইকে নিয়ে নির্মানাধীন দূতাবাস ভবনে একটি চা চক্রের আয়োজন করেন ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন।
ভিডিও ক্লিপ দেখার জন্য এখনে ক্লিক করুন অথবা নীচের URL-টি কপি করে ব্যবহার করুন ৷
জাপানে বাংলাদেশ দূতাবাসের নিজস্ব ভবন নির্মাণের অগ্রগতি নিয়ে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের বক্তব্য ও প্রর্যালোচনা ৷
সদ্য নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমার সময় দূতাবাস ভবনের কাজ সম্পন্ন ও স্থানন্তর হচ্ছে, সম্পৃক্ত চারজন রাষ্ট্রদূতের প্রতি আমরা জাপান প্রবাসীরা কৃতজ্ঞতা জানাই।
দূতাবাস ভবনের সাথে জড়িত রয়েছেন বাঙ্গালী স্থপতি, একদা জাপান প্রবাসী ডঃ মাসুম ইকবাল। জাপান প্রবাসীরা বিশেষ একটি কারনে তাকে মনে রাখবেন, জাপান প্রবাসীদের আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে তিনি সর্বপ্রথম জাপানে শহীদ মিনার নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, পরবর্তিতে বৈশাখী মেলা কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশের পরম হিতৈশী জাপানী বন্ধুদের সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকারের অর্থে টোকিওতে শহীদ মিনার নির্মিত হয়। টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাস ভবনের ডিজাইন প্রণয়নের সাথে স্থপতি মাসুম ইকবাল এবং তার প্রতিষ্ঠান জড়িত হবার এই ঘটনাটি বিশেষ তাৎপর্যময়।
#কাজী ইনসানুল হক
kaziensan@gmail.com