Breaking News

দুশো বছরের পুরাতন পাঠাগারের পুনরুজ্জীবন

২০৪ বছরের পুরনো এই পাঠাগারটির নাম মাদ্রাজ লিটারারি সোসাইটি।

অবস্থান ভারতের দক্ষিণের নগর চেন্নাই, যা আগে মাদ্রাজ নামে পরিচিত ছিল।

পাঠাগারটিতে ৫৫ হাজারের বেশি বই রয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। সেগুলোর মধ্যে অনেক বই ১৫০ থেকে ৩০০ বছরের পুরানো।

পাঠাগারের বর্তমান ভবনটি লাল ইটের তৈরি, ১৯০৫ সালে নির্মিত ভবনটির সঙ্গে ব্রিটিশ আমল নিয়ে বানানো চলচ্চিত্রগুলোতে দেখানো ভবনগুলোর দারুণ মিল রয়েছে।

১৮১২ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা করে। কোম্পানির কর্মীদের প্রশাসন, ভাষা, আইন, ধর্ম এবং ‘স্থানীয়দের কাছ থেকে শুল্ক’ আদায়ের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে পাঠাগারটি স্থাপণ করা হয়েছিল।

ওই সময় পাঠাগারটির অবস্থান ছিল সেন্ট জর্জ দুর্গের ভেতর। ১৮৫৪ সাল পর্যন্ত পাঠাগারটি সেখানেই ছিল। ১৯০৫ সালে বর্তমান ভবনে স্থানান্তর করা হয়।

পাঠাগারে থাকা প্রাচীনতম বইগুলোর একটি আইজ্যাক নিউটনের লেখা ‘ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথেম্যাটিকস’- ১৭২৯ সালে বইটি প্রকাশ পায়।

এছাড়া ভারত ব্রিটিশ সম্রাজ্যের অধীনে থাকার সময় ভারতে দায়িত্ব পালন করা ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের স্মৃতিকথা নিয়ে রচিত ‘দ্য হিস্ট্রি অব বাকিংহ্যাম ক্যানেল’-১৮৯৮ সালে বইটি প্রকাশ পায়।

যদিও প্রাচীন এইসব বইয়ের অনেকগুলোই অযত্নে-অবহেলায় চরম খারাপ অবস্থায় পৌঁছে গেছে।

বেহাল দশার ওই সব বইগুলো রক্ষা করতে প্রতিটির জন্য ৫ হাজার থেকে ১২ হাজার রুপি প্রয়োজন। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে বইগুলো ধূলায় পরিণত হবে।

একদল তরুণ স্বেচ্ছাসেবক পাঠাগারটি রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন।

তাদের একজন ৩৮ বছর বয়সী রাজিথ নায়ার।

জুনে বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “প্রথম যখন আমি বইয়ের তাকগুলো দেখি, আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম।”

“আমি শুধু চলচ্চিত্রে এ ধরণের পাঠাগার দেখেছি। আমি ভাবতাম, শুধুমাত্র ইউরোপে এ ধরণের পাঠাগার ও জাদুঘর দেখতে পাওয়া যায়।”

তারপর থেকে অনেক তরুণ পাঠাগারটির সদস্য হন। তারা সক্রিয়ভাবে অন্যদের পাঠাগারটিতে নিয়ে আসেন।

পাঠাগারটি রক্ষা করতে তারা নানা রকম উদ্যোগ নেন। যেমন: সবার জন্য পাঠাগারটি উন্মুক্ত করে দেওয়া, ‘অ্যাডপ্ট-এ-বুক’ ক্যাম্পেইন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালানো।

২৬ বছর বয়সী হেরিটেজ কনসালটেন্ট থিরুপুরা সুন্দরী সেভেল। যিনি প্রতি শনিবার পাঠাগারে যান এবং বই সংরক্ষণে সাহায্য করেন। একই সঙ্গে তিনি অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের বই সংরক্ষণের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন।

নতুন করে সংরক্ষিত বইগুলোর মধ্যে একটি কার্টুনের বই রয়েছে। প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট জেমস গিলারির আঁকা ওইসব কার্টুন ১৭৯৮ থেকে ১৮১০ সালের মধ্যে প্রকাশ পায়।

গত বছর ভারতের লেখক কেআরএ নারাসিয়াহ বাকিংহাম ক্যানাল নিয়ে পত্রিকায় ধারাবাহিক লেখা লিখতে গিয়ে গবেষণা কাজে ওই পাঠাগারটিতে যান। সেখানেই তিনি প্রথম কার্টুনের বইটি দেখতে পান।

তিনি বলেন, “এটা একটি অসাধারণ আবিষ্কার। কার্টুনগুলোতে ওই সময়ের রাজনৈতিক অবস্থা চমৎকার ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আমি বুঝতে পেরেছিলাম এটা বিশেষ কিছু, যেটিকে অবশ্যই পুনরায় জাগিয়ে তুলতে হবে।”

বর্তমানে পাঠাগারটির সদস্য সংখ্যা সাড়ে তিনশ এবং তারা বছরে সাড়ে আটশ রুপি চাঁদা দেয়।

কর্তৃপক্ষ আশা করছেন, দ্রুতই এই সদস্য সংখ্যা হাজারের ঘরে পৌঁছাবে এবং পাঠাগারটিতে থাকা ইতিহাসের মূল্যাবান দলিল বইগুলো সংরক্ষণ করার স্বপ্ন পূরণ হবে।

About admin

Check Also

কিউশুতে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় দুর্যোগের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে

 জাপানের কিউশুতে বুধবার প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত আবারও আঘাত হানছে। অব্যাহত বৃষ্টিপাত ভূমির উপরিভাগ আলগা করে দেয়ায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *