Breaking News

নারী’র ক্ষমতায়ন ভাবনা: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

একুশ শতকে সারা বিশ্ব জুড়ে সর্বাধিক আলোচিত বিষয়ের মধ্যে যে বিষয়গুলো আলোচনার ঝড় তুলেছে নারীর ক্ষমতায়ন এর মধ্যে অন্যতম। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নারীর ক্ষমতায়ন শব্দটির ব্যবহার ১৮৬০ এর সমসাময়িক সময়ে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে আশির দশকে তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। যদিও তখন নারীর ক্ষমতায়ন অত্যন্ত সংকীর্ণ অর্থে রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনকে বোঝাতো। বর্তমানে নারীর ক্ষমতায়ন একটি ব্যাপক পরিসর লাভ করেছে। একজন নারীর যে মানবেতর অবস্থান কেবল তা থেকেই মুক্তি নয়, সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় যে কোনো ধরণের সমস্যার সমাধান ও নীতি নির্ধারণে নারীর অংশগ্রহণকে অন্যতম অপরিহার্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ উইথ উইমেন ফর নিউ ইরা নারীর ক্ষমতায়নের সংঙ্গা ব্যাখ্যা করেছে এভাবে-‘এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে জেন্টার বৈষম্যহীন এক পৃথিবী গড়ে তোলা। যেখানে পৃথিবীতে ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নারী তাঁর নিজের জীবনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে।’ গবেষকের দৃষ্টিকোণ থেকে নারীর ক্ষমতায়নের অর্থ হলো, নারীর স্বাধীনতা ও সকল ক্ষেত্রে অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, বিশেষ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করা। নারীর জন্য সমাজের প্রতিটি স্তরে এমন একটি সুষ্ঠ পরিবেশ গড়ে তোলা যেখানে নারী আপন মহিমায় স্বাধীন ও মর্যাদার অধিকারী হয়ে ওঠবে; নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে বস্তুগত, মানবিক ও জ্ঞানগত সম্পদের ওপর। সূত্র মতে, এ যাবৎকালে ১৯৯৪ সালে অনুষ্ঠিত কায়রো সম্মেলনে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টিকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়া হয়। ১৭৯টি দেশের অংশগ্রহণে ১১৫ পৃষ্ঠার একটি প্রস্তাবনায় সাম্য, ন্যায়বিচার, সন্তান ধারণের প্রশ্নে নারীর ইচ্ছার প্রাধান্য, নারীর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রভৃতি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

এবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল-‘সময় এখন নারীর : উন্নয়নে তাঁরা বদলে যাচ্ছে গ্রাম-শহরে কর্ম জীবন ধারা।’ নারীর ক্ষমতায়ন এবং উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো সমম্বিত উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সচেতনা বৃদ্ধি। এ লক্ষ্যে নারীর ক্ষমতায়ন সর্বোপরি বাড়াতে হবে। সর্বস্তরে সচেতনা বৃদ্ধি করতে হবে। সময় এসেছে নারীকে আরো এগিয়ে নেয়ার। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই আমাদের এগোতে হবে। নারীকে তাঁর জীবনের বাস্তব দিকগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে সমাজে তাঁর অবস্থান কোথায় তা উপলব্ধি করতে হবে। কেননা, নারীর ক্ষমতায়ন লাভ এবং নারী মুক্তি তখনই সম্ভব যখন নারীরা সমাজের প্রতিটি কর্মকা-ে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। সেটা ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ পর্যায়ে হতে পারে। আর নারীকে মুক্তি দেয়ার জন্য, নারীর উন্নয়নের জন্য এবং নারীর ক্ষমতায়নের জন্য দরকার সব ধরণের প্রতিবন্ধকতার অবসান। নারী স্বাধীনতা, নারীর সুপ্ত প্রতিভা এবং সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশের সুযোগ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও মতামত প্রদানে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারলে নারীর ক্ষমতায়নে আর কোনো অপশক্তি বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সামাজিক দৃষ্টিকোণ এবং কাঠামোগত সংস্কার হয়নি। নারীর প্রতি সহিংস আচরণও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা মোটেও কাম্য নয়। তবুও বাংলাদেশের নারীরা থেমে থাকেনি। এদেশের নারীরা নানা বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো ক্ষমতা লাভের যুদ্ধে এগিয়ে যাবার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তাঁর গবেষণায় তুলে ধরেছেন-‘অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ের নারীরা অর্থনৈতিক দিক থেকে এগিয়েছে।’ বর্তমান বাংলাদেশে সামাজিক উন্নয়ন, ধারাবাহিক অর্থনৈতিক গতিশীলতা, ক্ষুদ্র্ ঋণ ব্যবহার, ভোটের হিসেবে সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণ, পোশাক রপ্তানিতে প্রথম সারিতে স্থান লাভ সব কিছুর পেছনে এই নারীর অবদান উল্লেখযোগ্য। ক্ষমতায়নের মূল কেন্দ্র বিন্দু রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের দিক থেকে বলা যায়, স্বাধীনতা লাভের পর থেকে নারীরা এক্ষেত্রে ধীরে ধীরে সফলতা লাভ করেছে।

গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অন্যতম পূর্বশর্ত অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং স্বাধীন, সার্বভৌম ও জবাবদিহিমূলক ‘আইন সভা’ বা জাতীয় সংসদ’। নব্বই এর দশকে বাংলাদেশে ৩টি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ৫ম ও ৭ম জাতীয় নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। ফলে এই দু’টি সংসদ হয়ে ওঠে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার কেন্দ্র বিন্দু। পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ৫ম ও ৭ম সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে দেশ পরিচালনার সুযোগ পায়। উল্লেখিত এই দুই সংসদের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম ছিল এর ‘নারী সদস্য’। বিশেষ করে এরশাদ সরকারের শাসনামলে যাঁদেরকে বলা হতো ‘সংসদের শোভা’, নব্বই এর দশকে তাঁরাই সংসদের নারী সমাজের ‘অহংকার’ হিসেবে ফিরে আসে। ৫ম ও ৭ম সংসদে ৩০টি আসন নারী সদস্যের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও উভয় সংসদে যথাক্রমে ৫ ও ৮ জন নারী সরাসরি আসনে বিজয়ী হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। অন্যদিকে, এই সংসদের সংসদ নেত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রী উভয়েই ছিলেন নারী। এটিও আমাদের তথা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। বর্তমানে জাতীয় সংসদে সর্বমোট ৫০ জন নারী সংসদ সদস্য সংসদে নারী সমাজের প্রতিনিধিত্ব করছেন। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী ও সংসদ উপনেতা, স্পিকার প্রত্যেকেই নারী। বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়েও নারীরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এখন সচিব, বিচারপতিও নারী আছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সেক্টরে নারীরা ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশেও নারীদের দৃঢ় অবস্থান রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী দেশের ৫ কোটি ৪১ লাখ কর্মজীবীর মধ্যে ১ কোটি ৬২ লাখ নারী। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ১৬ হাজার ৬৯৭ জন। বিদেশে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত ৭৬ লাখ প্রবাসীর মধ্যে ৮২ হাজার ৫৫৮ জন নারী। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধানতম ক্ষেত্র তৈরি পোশাক খাতে ৮০ ভাগ কর্মীই নারী। দেশের ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবহারকারীও নারী। বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে নারীর ব্যাপক হারে অংশগ্রহণ সারা পৃথিবীতে নজির সৃষ্টি করেছে।

তবে, আছে বিপরীত চিত্রও। নারীর সাফল্য গাঁথার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নারীর প্রতি নির্যাতন ও সহিংসতা। এসব সহিংসতা আর নির্যাতন দিয়ে নারীর অগ্রযাত্রাকে বাঁধাগ্রস্ত করা যাবে না বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ ড. জিনাত হুদা। আর আমি মনে করি, যাঁরা বিশ্বাস করে নারীর জীবনের প্রতিকূলতা তাঁকে অন্যায়ের সাথে আপোস করতে শেখাবে একদিন, তাঁদের জন্য প্রচুর করুণা আর ভালোবাসা। মেরুদন্ড আর ঘাড় সোজা রেখে চলার রোগটা নারীর জাতিগতভাবে পাওয়া, সহজে ঠিক হবে না। তাইতো একুশ শতকে নারী নিয়ে ভাবনার যেন অন্ত নাই। বা, নারীকে নিয়ে কথা বলার জন্য বিশেষ কোনো দিবসের প্রয়োজনিয়তা রাখে না। নারীর জন্য বাণী-‘নারীর চরম দুর্বলতাই নারীর চূড়ান্ত অনুপ্রেরণা হোক।’ সেই সাথে পুরুষ শাসিত সমাজে নারীর জীবনকে নরক বানানোর নিরলস প্রচেষ্টার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ, আপনাদের এই বিশাল কর্মকা- কেবল নারী জাতিকে চেতনায় সমৃদ্ধ করুক এই কামনা রাখি।

নারীর আত্মনির্ভরশীলতা, আত্মমর্যাদা, দাসপ্রথার চর্চা, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নারী বৈষম্য, সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ও মানসিক মুক্তি, রাস্তা-ঘাটে নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা, সর্বোপরি নারীর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক মুক্তি নিশ্চিত করা সম্পর্কে নতুন করে গতানুতিক নিয়ম মাফিক আলোচনা করে লেখা দীর্ঘায়িত করবো না। যুগের পর যুগ এসবের বাস্তবতা একুশ শতকে এসে এতোটুকু অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়নি বরং বেড়েছে বলা যায়। কেবল নারীর প্রতি আত্মঅবমাননা ও নির্মমতা সম্পর্কে একটু বলি। যেখানে যতো বেশি ক্ষমতার অপব্যবহার, সেখানে ততো বেশি অবমাননা ও নির্মমতা জন্মায়। অপচয়িত ক্ষমতার অপব্যবহারের কথা না বলে, জেনে নির্মমতা নিয়ে কথা হওয়াটা হাস্যকর। শিশুকাল থেকে নারীর ভেতর বপন করা হয় নীচতার এক বীজ। এর জন্যে অনেকখানি দায়ী পিতৃতান্ত্রিক মতাদর্শ, ধর্মীয় গোঁড়ামি। ক্ষমতায়নের লক্ষ্যই যেন পিতৃতান্ত্রিক মতার্দশ ও অধস্তনতার অনুশীলনকে রূপান্তর করা। নারীর ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়া পুরুষের বিরুদ্ধে নয় বরং পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্য নির্যাতক ও শোষকের অবস্থান থেকে পুরুষকে মুক্ত করা। বিদ্যমান সমাজে পুরুষের দায়িত্বের পাশাপাশি নারীর দায়িত্ব, অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এক্ষেত্রে সম অধিকার ও দায়িত্বের ভিত্তিতে পুরুষরা গৃহস্থালি ও সন্তান পালনে সমানভাবে অংশগ্রহণ করবে, পাশাপাশি নারীরাও পুরুষের দায়িত্ব পালনে সমানভাবে অংশ নেবে।

আমরা এদেশের নারীদের নিরাব্বই দশমিক নয় শতাংশ আটপৌড়ে শাড়ি পরা, আত্মগ্লানি, আত্মবঞ্চনা দেখতেই অভ্যস্ত ছিলাম। ….ঞযব ষবংংড়হ ড়ভ যরংঃড়ৎু রং ঃযধঃ হড় নড়ফু ষবধৎহং ভৎড়স যরংঃড়ৎু. নারী আত্মঅবমাননার ইতিহাস পর্যালোচনা এজন্য যে, এদেশের নারীদের নিজস্ব কোনো প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না, নেই বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কি গড়ে তুলেছি? উত্তর তো নিশ্চয়ই না বোধক। আহ্লাদ হয় না, রাগ হয় রাগ। যেখানে নারীর মর্যাদা নেই সেটা নারীর সংসার না, হতে পারে না। মার খেয়ে পড়ে থাকা, জমি কামড়ে থাকার চেষ্টাও অপরাধ। এসব কেন শেখে না মেয়েরা। নিউটনের তৃতীয় সূত্রের মতো ইটের বদলে পাটকেল, একটা মারের বদলা নিতে দশটা মার আর লাথি মেরে, ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে শিখুক সব নারী জাতি। নিজেকে অবমুক্ত করতে শিখুক, ভালোবাসতে শিখুক। বেগম রোকেয়া , বিবি রাসেলের অসম লড়াইয়ে সব প্রতিরোধই শেষ পর্যন্ত পরাস্ত হয়েছিল অদম্য মনোবল আর প্রবল ইচ্ছা শক্তি দ্বারা। কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা হলো লড়াকুদের আত্মঅবমাননার চেতনা, যার ব্যাখ্যা হবে-‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সুচাগ্র মেদিনী বা জ্বলে পুড়ে ছাড়খার তবুও মাথা নোয়াবার নয়।’

পরিশেষে বলা যায়, নারীর ক্ষমতায়ন এবং উন্নয়ন তখনই সফল হবে যখন রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁদের অংশগ্রহণ থাকবে। নারীর ক্ষমতায়ন ও একটি অবাক সুন্দর পৃথিবী একে অন্যের হাত ধরাধরি করে খুব পাশাপাশি অবস্থান করে। দেখা যায়, একজন কর্মক্ষম নারী আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হলে পরিবার, সমাজ তাঁর সিদ্ধান্তের প্রতি গুরুত্ব দেবে। এছাড়া অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী নারীর সংস্পর্শে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্ম বেড়ে ওঠে সিনা টান করা আত্মমর্যাদার সাথে। নারী তখনই পরাজিত যখন তাঁর হাত খালি। তাই যতোদিন নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন না হবে ততোদিন তাঁদের স্বাধীনতা আসবে না। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র শহরমুখী নারীর ক্ষমতায়ন নয়, শুরু হোক গ্রাম থেকে। দু’টি সেলাই মেশিন, তিনটি গরু, একজোড়া ছাগল অনুদান দিয়েই সরকার দায় সারছে। এর পাশাপাশি প্রযুক্তি আর বিজ্ঞান নির্ভর শিক্ষা শুরু হোক গ্রাম থেকে। তবেই দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। আরো একটি বিষয় লক্ষনীয় যে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে বৈদেশিক মাস্টার্স প্রশিক্ষণে নারীদের জন্য কোনো কোটা সংরক্ষণ করা হয় না। এটা খুব জুরুরী নারীর ক্ষমতায়নের জন্য। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও যাতে তাঁদের পেশাগত উন্নয়নের জন্য সমতালে কাজ করতে পারে এবং প্রাথমিক শিক্ষার সাথে মেয়েদের একটা নিবিড় সম্পর্কের কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে নারীর জন্য কোটা সংরক্ষন করা একান্ত অপরিহার্য। রাষ্ট্রের উন্নয়নের স্বার্থেই নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের পথে সকল অন্তরায় দূরীভূত করা এখন সময়ের দাবি। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন লিখেছেন, “তোমরা কন্যাগুলোকে শিক্ষা দিয়ে ছেড়ে দাও, নিজেরাই নিজেদের অন্নের সংস্থান করুক…..”

নারীরা হচ্ছে সভ্যতার দূত। যুগে যুগে দেশে-বিদেশে নারীরাই আন্তর্জাতিকতার বাহক। নারীরা পৃথিবীর যেখানে যায় সেখানে ভালোবাসার একটা নীড় তৈরি করে, কোনো জাতপাত ভেদ, কোনো জাতীয়তাবাদী সংকীর্ণতা নারীদের স্পর্শ করে না। তাই বোম্বাই জন্মে তাঁরা রেঙ্গুনে ঘর বাঁধতে পারে, ঢাকায় জন্মে পারে মাদ্রাজে ঘর বাঁধতে। ঘরে-বাইরে, কাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে আজ সে রেখেছে সফলতার স্বাক্ষর। সুতরাং, একুশ শতকের নারীর ক্ষমতায়ন, তাঁর মহাতেজ চির জাগরুক আগুন হয়ে জ্বলে উঠুক পৃথিবীর প্রতিটি নারীর মধ্যে।

About admin

Check Also

১৫ই আগষ্ট আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন জাপানি নভোচারী ফুরুকাওয়া

জাপানের নভোচারী ফুরুকাওয়া সাতোশির দ্রুত হলে ১৫ই আগষ্ট আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে দ্বিতীয় ভ্রমণ নির্ধারণ করা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *