সঞ্জয় দা নেই, এ কথা আমরা ভাবতেও পারি না। দৈহিকভাবে তিনি হয়তো নেই, কিন্তু স্মৃতিতে প্রিয় সঞ্জয় দা আমাদের হৃদয়ে চির অম্লান থাকবেন। সঞ্জয় দা আমাদের শিখিয়ে গেছেন নেতা হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় না দৌড়িয়ে কিভাবে মানুষের হৃদয়ের নেতা হওয়া যায়, দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের হৃদয় জয় করে হৃদয়ের আসনে আসীন হওয়া যায়। পর্দার আড়ালে কাজ করা নেপথ্যের কারিগর, একজন সফল সংগঠক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, জাপান প্রবাসীদের প্রিয় মুখ সঞ্জয় দত্তের শ্রাদ্ধ আয়োজনে প্রবাসীরা এভাবেই মূল্যায়ন করে তাদের প্রিয় ব্যক্তির স্মৃতিচারণ আলোচনায়।
১ ডিসেম্বর ২০১৬ অতিপ্রত্যুষে চিকিৎসাধীন (অবচেতন অবস্থায় দীর্ঘ এক বছর অতিবাহিত করার পর) অবস্থায় শ্রী সঞ্জয় দত্ত শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ রোববার তার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে সর্বস্তরের প্রবাসী নেতৃবৃন্দ একত্রিত হয়ে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং স্বর্গবাস কামনা করেন। অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জাপানি সুহৃদরাও উপস্থিত থেকে স্মৃতিচারণ করেন।
নিয়াজ আহমেদ জুয়েলের পরিচালনায় স্মৃতিচারণে অংশ নিয়ে তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু এশিয়ান পিপলস্ ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি (এপিএফএস)’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাৎসুও ইয়োশিনারি বলেন, আমার জানামতে ১৯৮৬ সালে সঞ্জয় দত্ত জাপান আসেন। সেই সময় বাংলাদেশিসহ প্রচুর বিদেশি জাপানে ভিসা সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন। তাদের এই সমস্যায় সহযোগিতা দেয়া সঞ্জয়ের সাথে আমার ৩০ বছরের সখ্য এবং বন্ধুত্ব। জাপান আসার মাত্র এক বছরের মাথায় তিনি প্রবাসীদের কল্যাণের কথা ভাবতেন যা আমাকে বিমোহিত করেছিল। এই ৩০ বছরে আমি একটিবারের জন্যও সঞ্জয় দত্তকে রাগতস্বরে কথা বলা কিংবা কোনোরূপ বিরক্তবোধ হতে দেখিনি। সর্বদাই হাসির ছলে তিনি ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করে যেতেন। হিসাব অনুযায়ী, বয়স অনুসারে আমারই তার আগে চলে যাবার কথা, অথচ সে-ই আমার আগে চলে গেল।
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রবাসী নেতৃবৃন্দ বলেন, সঞ্জয় দা’র কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। তার মতো নিরীহ এবং পরোপকারী বন্ধুবাৎসল্য ব্যক্তি মেলা ভার। অনেকেই বলেন, অসুস্থ হবার কিছুদিন তিনি বলতেন, আসেন, আমরা সারা রাত বসে কথা বলেই কাটাই কোনো অনুষ্ঠান ছাড়াই। তাই কথাটি তিনি একাধিক ব্যক্তিকে বলেছিলেন। কিন্তু তার সেই কথা আর বলা হয়নি। আমাদেরও তা শোনা হয়নি। কি এমন কথা ছিল তার? কোনো দিকনির্দেশনামূলক নয় তো?
সঞ্জয় দত্তের অনুজ বাচ্চু দত্ত প্রবাসীদের কাছে অনুরোধ জানান, তার অগ্রজ যদি নিজের অজান্তে কোনো ভুল করে থাকেন বা তার আচরণে কেউ যদি মনোকষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে সবাই যেন তা ক্ষমা করে দেন এবং তার ভাই যেন স্বর্গবাসী হন সেই প্রার্থনা করার আহ্বান জানান।
সবশেষে সঞ্জয় দত্তের সহধর্মিণী সিমা দত্ত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং তার দুই পুত্র সৌম্য দত্ত (১২) এবং শুভ্র দত্ত (৪)’র জন্য আশীর্বাদ কামনা করেন।
প্রবাসীরা যে কোনো প্রয়োজনে পরিবারের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানটি সফলভাবে আয়োজনে উত্তরণের প্রতিটি সদস্য নিরলসভাবে কাজ করেন। সঞ্জয় দত্ত ছিলেন উত্তরণের প্রাক্তন লিডার এবং সার্বজনীন পূজা কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
সৌজন্যে: সাপ্তাহিক ডট কম