সম্প্রতি কয়েকটি পত্রিকার উদ্বৃতির মাধ্যমে জানা গেছে, সুন্দরবন বিভাগ সম্পূর্ণ মনগড়া কারন দেখিয়ে জুন, জুলাই, আগষ্ট সুন্দরবনে সব ধরনের পর্যটন নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব পাঠিয়েছে মন্ত্রনালয়ে। যেটি পাশের অপেক্ষায় আছে। প্রস্তাবে উক্ত সময়কে বন্যপ্রানীর প্রজনন মৌসুম উল্লেখ করে পর্যটন বন্ধ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
গতকাল প্রেস ক্লাবে “সুন্দরবনে বন্যপ্রাণী সংরক্ষন ও পর্যটন শিল্প: সংকট, সম্ভাবনা ও করনীয় বিষয়ের উপর এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন এই সেমিনারের আয়োজন করেছিলো। সংবিধান প্রণেতা সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট মো: এনায়েত আলীর সভাপতিত্বে এবং প্রফেসর আনোয়ারুল কাদীর মিরুর সঞ্চালনায় সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, নাজমুল আযম ডেভিড। উপ প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ম. জাভেদ ইকবাল, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মণ্ডলী যথাক্রমে প্রফেসর ড. নাজমুস সাদাত, প্রফেসর ড. ওয়াসিউর রহমান, প্রফেসর ড. সালমা বেগম, ট্যুরিষ্ট পুলিশের কর্মকর্তা বৃন্দ, ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনের সৈয়দ মাহবুবুল ইসলাম বুলু, মোঃ নজরুল ইসলাম বাচ্চু, মোঃ তসলিম আমিন শোভন, খুলনা উন্নয়ন কমিটির শেখ আশরাফ উজ জামান, এডভোকেট কুদরত ই খুদা, প্রেসক্লাব সভাপতি ফারুক আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক, মল্লিক সুধাংশু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুন রেজা, কে ইউ জে সম্পাদক সাংবাদিক শাহ আলম, এইচ এম আলাউদ্দিন, সোহেল আহমেদ, এস এ টিভির সুনীল রায় সহ অনেকে। সামাজিক সংগঠন গ্লোবাল খুলনার আহবায়ক ও নিহন বাংলা ডট কমের উপদেষ্টা সম্পাদক শাহ মামুনুর রহমান তুহিন এবং বিশিষ্ট সুধীজন উক্ত সেমিনারে বক্তব্য প্রদান করেন।
উল্লেখ্য সম্প্রতি বন বিভাগের কর্মকর্তারা কোন ধরনের বিশেষজ্ঞ মতামত ছাড়াই সম্পূর্ন কল্পনা প্রসূত তথ্য উপস্থাপন করে মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে, জুন থেকে আগষ্ট এই তিন মাস নাকি প্রানীদের প্রজনন মৌসুম। তাই এই তিন মাস পর্যটন বন্ধ থাকবে। বিষয়টি পর্যালোচনা করে এই সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞরা বিস্মিত ও হতবাক হয়েছেন। বন বিভাগ এই তথ্য কোথা থেকে জোগাড় করলো এই নিয়ে সকলেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
উপস্থিত বিশেষজ্ঞগন স্পষ্ট ভাবে বলেছেন প্রানীকূলের সকল প্রানীর প্রজনন সময়কাল এক সময়ে হয়না। সুতরাং নিশ্চয়ই কোন অসততা আছে এর মধ্যে। এবং সেটা অবশ্যই খতিয়ে দেখা উচিৎ। সাথে সাথে তারা এ ও বলেন, যদি বনবিভাগের কাছে সত্যি সত্যি এধরনের তথ্য থেকে থাকে, তা সকলের সম্মুখে প্রকাশ করা উচিৎ। সে ক্ষেত্রে ঢালাওভাবে ক্রম বিকাশমান পর্যটন শিল্পকে বন্ধ করে কোন ভাবেই সরকারকে রাজস্ব আয় এবং পর্যটকদের আসা যাওয়া বন্ধ করা ঠিক হবে না। তবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে প্রয়োজন সাপেক্ষে।
গ্লোবাল খুলনার আহবায়ক ও নিহন বাংলা ডট কমের উপদেষ্টা সম্পাদক তার বক্তব্যে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত উল্লেখ করে বলেন, বাঘ, চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, ইরাবতী ডলফিন, লোনা পানির কুমির, বন্য শুকর, মহিষ, উদ বিড়াল সহ ৩৭৫ টি প্রজাতির বন্য, জলজ এবং অন্যান্য প্রানী আছে এই সুন্দরবনে। একেক প্রানী বা প্রজাতিভেদে প্রজননের সময়কাল একেক সময়ে। যদি সুন্দরবনের বা বাংলাদেশের পরিচিত রয়েল বেংগল টাইগার বা হরিণ বা কুমির অথবা অন্য প্রানীকূলের প্রজনন সময় হিসাব করা হয়, তাহলে দেখা যায়, বাঘ সারাবছর ধরেই প্রজনন ক্রিয়া করে, তবে অঞ্চল ভেদে বা তাপমাত্রা ভেদে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত তারা প্রজনন বেশী করে। হরিণ বছরের যে কোন সময়েই প্রজনন করে। কুমির সাধারণত: আগষ্ট থেকে নভেম্বর প্রজনন করে থাকে। এছাড়া ও অন্যান্য প্রানী কুলের প্রজনন উপরোক্ত বিভিন্ন সময়ে হয়ে থাকে। তাই বনবিভাগ তাদের সুপারিশে যে বিষয়াদি উল্লেখ করে পর্যটন নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছে, তা শুধু যুক্তিহীন ই নয়, প্রকারান্তরে সরকারকে রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত করা, গবেষকদের গবেষণা থেকে বিরত রাখা, পর্যটকদের বিনোদন থেকে বঞ্চিত করা এবং প্রকারান্তরে ব্যাপক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হওয়া এ শিল্পকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া। তিনি অসমর্থিত সূত্রের উল্লেখ করে বলেন, মূলত: মে, জুন, জুলাই, আগষ্ট এ অঞ্চলে বর্ষায় টইটুম্বুর থাকে, এবং এ সময়েই সুন্দরবনের বিভিন্ন গাছ, বাঘ, হরিণ শিকার করে সবথেকে বেশী। সেটা বেশীরভাগই বন বিভাগের কতিপয় অসৎ ব্যক্তিবর্গের মদদে। তাই এই সময়কালকে বন বিভাগের প্রজনন মৌসুম উল্লেখ করেছেন তিনি। এছাড়া তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছিলেন যে, বন বিভাগের এ অঞ্চলে সর্বশেষ সি এফ হিসাবে দায়িত্ব পালন করা জহির উদ্দিন সাহেবের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে করা সুন্দরবন বিষয়ক নীতিমালাতে ও এধরনের কোন বিষয় উল্লেখ ছিলোনা।
উপস্থিত সকল বক্তা একমত পোষন করেন যে, মনগড়া বা অনুমানের ভিত্তিতে নয়, বিশেষজ্ঞ, বনজীবি, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল, সাংবাদিক, সুধীজনকে নিয়ে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কিছু নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যেতে পারে, একেবারে বন্ধ নয়। কারন তথ্য প্রযুক্তির কল্যানে এখন প্রতিটি বিবেকবান মানুষই পার্শ্ববর্তী দেশ সহ বিভিন্ন দেশের পর্যটন সহ তথ্য উপাত্ত সহজেই পেয়ে যায়। উপস্থিত সকলে এও বলেন, যদি সুপরিকল্পিত ভাবে বন বিভাগের কেউ কেউ এ ধরনের মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে সরকারকে রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত করা, মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা অথবা দেশে, বিদেশের পর্যটকদের ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ভ্রমন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে থাকে, তাহলে প্রয়োজনীয় তদন্ত সাপেক্ষে তাকে বা তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা উচিৎ।