রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে ভেনেজুয়েলাতে চলছে খাদ্য ও ওষুধের তীব্র সংকট। গত এক সপ্তাহে জীবাণুবাহিত রোগে দেশটির অন্তত ১৪ শিশু মারা গেছে বলে জানিয়েছে আলজাজিরা। পর্যাপ্ত ওষুধের অভাবে অনেক হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ভর্তি অনেক শিশুর চিকিৎসা করা যাচ্ছে না বলেও জানা যায়।
দেশটির উপকূলীয় শহর বার্সেলোনার লুইস রাজেত্তি হাসপাতালের অবস্থা ভয়াবহ। প্রতিদিন অনেক শিশু হাসপাতালটিতে ভর্তি হচ্ছে জীবাণুবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে। খাদ্যাভাবে শিশুদের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটনায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমেছে তাদের।
হাসপাতালটির কর্মী হোসে প্লেনস জানান, ‘তিন বছর আগেই হাসপাতালে গজ কাপড় এবং অ্যালকোহল আসা বন্ধ হয়ে গেছে। পর্যাপ্ত সিরিঞ্জ আর সিরাপ নেই শিশুদের জন্য।’ হাসপাতালে ভর্তি একটি শিশুর মা লেডি চেকন বলেন, ‘আমার মেয়ের ডায়রিয়া হয়েছে। তার প্রায় হার্ট অ্যাটাক হওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল। আমাদের কিছু নেই। কোনোমতে আমরা এখানে পৌঁছেছি।’ হাসপাতালের বাস্তব চিত্র বহির্বিশ্বের কাছে দেখানোর শর্তে হাসপাতালটিতে সাংবাদিকদের প্রবেশে অনুমতি দেওয়া হয়।
চলতি সপ্তাহেই ম্যারেল্লা মারিনো নামের এক মায়ের দুই বছর বয়সী শিশু মারা গেছে। কফিন কিনে লাশ দাফন করার পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় নিজের সন্তানের লাশ হাসপাতালেই রয়ে গেছে। ম্যারেল্লা বলেন, ‘এখানে কিছু নেই, তাদের কাছে কোনো ওষুধ এবং খাবার নেই। আমার সন্তানও মারা গেছে।’
আন্দোলন এবং অর্থনৈতিক অচলাবস্থার মাঝে ভেনেজুয়েলায় মানবিক সংকট চলছে। যদিও দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ভেনেজুয়েলার স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র কিছু সহায়তা পাঠিয়েছিল ভেনেজুয়েলায়। কিন্তু তা নিতে অস্বীকৃতি জানান মাদুরো। কলম্বিয়ার সীমান্তের কাছেই ওই ত্রাণবাহী ট্রাক আটকে দেওয়া হয়। এদিকে দেশটির স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট হুয়ান গুইদো দেশবাসীর প্রাণ বাঁচাতে অবিলম্বে ত্রাণ সহায়তা দরকার বলে জানান।
কলম্বিয়া-ভেনেজুয়েলার সীমান্তবর্তী এলাকা কুকুতা। প্রতিদিন এই অঞ্চল দিয়ে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ কলম্বিয়ায় প্রবেশ করছে বলে জানায় কলম্বিয়ান মাইগ্রেশন কর্র্তৃপক্ষ। অবশ্য অনেকেই সীমান্ত পাড়ি দেয় খাবার এবং ওষুধ কেনার জন্য, যা ভেনেজুয়েলায় পাওয়া যাচ্ছে না। আবার অনেকে ইকুয়েডর এবং পেরুতে যাওয়ার রুট হিসেবেও কলম্বিয়াকে ব্যবহার করছে।
হুয়ান গুইদোকে দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বীকৃতি দেওয়ার পর পুরো পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এখন মাদুরো সরকারের একমাত্র ভরসা দেশটির সেনাবাহিনী। ইতোমধ্যে গুইদো সেনাবাহিনীকে মাদুরোর প্রতি সমর্থন প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু এই আহ্বানে সাড়া দেয়নি ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনী। উল্টো বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রয়োজনের সময় সেনাবাহিনী যেন মাদুরোকে সমর্থন না দেন এ নিয়ে দেনদরবার করছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও এ নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।