কাতারের বিরূপ পরিবেশে কাজ করতে গিয়ে প্রতি বছর মারা যাচ্ছেন শত শত অভিবাসী শ্রমিক। ব্রিটিশ সংবাদপত্র গার্ডিয়ানের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন উপলক্ষে দেশটিতে যে ব্যাপক নির্মাণযজ্ঞ চলছে তা বাস্তবায়নে অত্যধিক তাপমাত্রার মধ্যে কাজ করে যেতে হচ্ছে শ্রমিকদের। দেশটিতে প্রতিদিন প্রায় ১০ ঘণ্টা তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে থাকে।
কাতার কর্তৃপক্ষ বলছে, উপসাগরীয় অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সংগতি রেখে তাপসংক্রান্ত সমস্যা থেকে শ্রমিকদের রক্ষা করার চেষ্টা করছে। জুনের মাঝামাঝি থেকে আগস্ট পর্যন্ত বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সব ধরনের কাজ বন্ধ করেছে।
প্রতি বছর কাতারে কর্মরত শত শত শ্রমিক মারা যাচ্ছেন, যাদের বেশির ভাগেরই বয়স ২৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। বেশির ভাগ মৃত্যুর পেছনেই হূদরোগের ভূমিকা রয়েছে, যাকে কাতারের কর্তৃপক্ষ ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ হিসেবে বর্ণনা করছে।
কিন্তু কার্ডিওলজি জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে শীর্ষ জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও কার্ডিওলজিস্টরা বলছেন, হিটস্ট্রোকে ওই মৃত্যুগুলো হয়েছে। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ১ হাজার ৩০০ নেপালি শ্রমিকের মৃত্যুর সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তারা। গবেষণায় দেখা গেছে, শীতের মাসগুলোতে বছরওয়ারি মৃত্যুর ২২ শতাংশ হূদরোগের কারণে হচ্ছে। গরমের মাসগুলোতে এ মৃত্যুর হার ৫৮ শতাংশে দাঁড়ায়।
২০২২ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন উপলক্ষে কাতারে নির্মাণ খাত চাঙ্গা হয়েছে। সেখানে কাজ করা প্রায় ১৯ লাখ শ্রমিকের বেশির ভাগই এসেছেন নেপাল, ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে। ভাগ্যের সন্ধানে কাতারে কাজ করা ওই তরুণরা বিশ্বকাপকে সামনে রেখে দেশটির স্টেডিয়াম, রাস্তা, হোটেল নির্মাণে কাজ করে যাচ্ছেন। একদিকে যখন জৌলুশপূর্ণ বিশ্বকাপ প্রস্তুতি চলছে, তখন জীবন বিপন্ন করে কাজ করে যাওয়া শ্রমিকরা থেকে যাচ্ছেন পাদপ্রদীপের আড়ালে।