ননমুসলিম দেশে বসবাসরত প্রবাসীদেরও কি ঈদ মানে কয়েকদিনের ছুটি, কেনা-কাটা, দলবেধে ঈদের জামাতে যাওয়া, নামাজ শেষে প্রিয়জনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দোয়া করা, সারাদিন বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে ঘুরাঘুরি, সন্ধ্যার পর সবাই মিলে জম্পেশ আড্ডা আর বিভিন্ন চ্যানেলের অনুষ্ঠানগুলো উপভোগ করা ? সাপ্তাহিক কর্ম দিবসে ঈদ হলে, বলতে গেলে এগুলোর কোনকিছুই নেই এইসব ননমুসলিম দেশে বসবাসরত প্রবাসীদের মাঝে ! এসব দেশে ঈদ উপলক্ষে কোন ছুটি নেই ! কর্ম দিবসে ঈদের দিন খুব ভোরে ঈদের নামাজ আদায় করে সময়মত কর্মস্থলে যাওয়া, দিবস শেষে ঘরে ফেরা !! তাই বলে কি ঈদে কোন আনন্দ হবে না ? তাই ননমুসলিম দেশে বসবাসরত প্রবাসীরা তাকিয়ে থাকে ঈদ পরবর্তী সাপ্তাহিক ছুটির দিকে । এবারে টোকিও ও এর আশেপাশে বসবাসরত প্রবাসীদের মাঝে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে গুনমা-তচিগি অঞ্চলে এক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত সাকুরা লেডিস ক্লাব ৯ই জুন রোববার দিনভর ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করে । এতে বাংলাদেশ কমিউনিটির বিশিষ্টজন, ব্যাবসায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-ছাত্র, গৃহবধূ, শিশু-কিশোর মিলিয়ে প্রায় ৩০০ অতিথির অংশগ্রহণে এ বর্ষপূর্তি ও ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান যেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
দুপুর থেকেই অতিথিরা নিজস্ব গাড়িতে করে রাজধানি টোকিও থেকে প্রায় ১০০ মেইল পশ্চিমে সবুজ ধান খেতে ঘেরা এক মনোরম পরিবেশে অবস্থিত তাতেবায়্যাসি কমিউনিটি সেন্টারে আসতে শুরু করে । মুহূর্তেই ভোরে উঠে অনুষ্ঠানস্থল । সাকুরা লেডিস ক্লাবের পক্ষ থেকে সবাইকে সুস্বাদু ও মজাদার সব খাবার দিয়ে দুপুরে আপ্যায়ন করা হয় । দুপুরের প্রীতিভোজের পর সবার মাঝে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে আয়োজন করা হয় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পর্বের । প্রথমেই সাকুরা লেডিস ক্লাবের সদস্য, নার্গিস আইরিন, সুলতানা রহমান, টুম্পা মনি, মুন্নি, জাকিয়া হোসাইন, যূথী চৌধুরী, জান্নাতুল সরকার শম্পা, রিফাত রহমান কচি ও আয়েশা হান্নান মীম কে পরিচয় করিয়ে দেন ক্লাবের সভাপতি মুনা ইব্রাহীম । মুন্নির উপস্থাপনায় ছোট্ট মনি মুগ্ধ, নেসওয়ান ও মাস্রুর এর কোরান থেকে তেলওয়াত ও জাপানীজ এ তর্জমার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব । আমাদের আরেক ছোট্ট মনি সুলাইমান সাদ (ঈশা) অতি মধুর কন্ঠে পরিবেশন করেন – থ্রিভুবনে প্রিয় মুহাম্মাদ —-। লেডিস ক্লাবের সকল সদস্য – পরিবার পরিবেশন করেন ঈদুল ফিতরের থিম সং – ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ —। এরপর মিতু ও জাকিয়া কবিতা আবৃতি করে শোনান । জাকিয়ার, — বাংলা টা ঠিক আসে না — কবিতার আবৃতি সবারই মনোযোগ আকর্ষণ করেছে ।
নাচ-গান ছাড়া কি কোন অনুষ্ঠান উপভোগ্য হয় । আমাদের গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাচে যে কত প্রতিভা লুকিয়ে আছে তার প্রমান ক্লজ-আপ ওয়ানের মত অসংখ্য ট্যালেন্ট হান্টিং প্রোগ্রাম গুলো । ঠিক তেমনি প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশীদের মধ্যেও লুকিয়ে আছে অজানা প্রতিভা । তাইতো প্রথমবারের মত গান ও নাচ পরিবেশন করে দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন টুম্মা মনি ও নার্গিস আইরিন । লেডিস ক্লাবের সদস্যদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতির প্রথম পর্বের সমাপ্তি করা হয় চিটাগাংগের ভাষার কুইজ পর্ব দিয়ে, অর্থাৎ চিটাগাং এর ভাষার শুদ্ধ বাংলা অর্থ । ১০-১৫ টি শব্দ বলল, আমি একটিও বুঝলাম না !! পর্বটি সবাই খুব উপভোগ করেছে । দ্বিতীয় পর্বে একের পর গান পরিবেশন করে দর্শকদের মাতিয়েছেন টোকিও থেকে গোলাম মসুম জিকো এর নেতৃতে আগত একদল তরুণ শিল্পী। এ তরুন গ্রুপটিতে জিকো ছাড়াও ছিলেন, দীপ্ত (ঝিঝি পোকা , ভোকালিষ্ট), অভি (ঝিঝি পোকা, কিবোর্ড), সাইমন (স্বরলিপি, বেস), সপ্তর্ষি (স্বরলিপি , গিটার) ও দুর্জয় (স্বরলিপি- ড্রাম)।
পোশাক –পরিচ্ছদ ও সাজ-সজ্জা, ঈদের অবিচ্ছেদ্য অংশ । আগত অতিথিরা যেমন ছিল জমকালো, চুখ-ধাধানো সাজ-সজ্জাই সজ্জিত, মুল হল্রুমটার সাজানোটা ছিলো সবার কাছে একটা বাড়তি আকর্ষণ । প্রতিটি কর্মেই যেন ছিল চারুকলায় অঘাধ জ্ঞান সমৃদ্ধ এক শৈল্পিক হাতের ছোঁয়া । সেজন্যই সাকুরা লেডিস ক্লাবের পক্ষ থেকে তানিয়াকে বিশেষভাবে পুরস্কৃত করা হয় । কেহ কারো প্রতিপক্ষ না, একে অপরের পরিপূরক । এই মন্ত্র ধারন করেই টোকিও ভিত্তিক সংগঠন বাংলাদেশ ওইমেন্স ক্লাবের পক্ষ থেকে কাকলি, সুবর্ণা, সোমা সাকুরা লেডিস ক্লাবের বর্ষপূর্তিতে অভিনন্দদন ও শুভেচ্ছা জানান ।