জানুয়ারিতে জাপানের ম্যানুফ্যাকচারারদের আস্থা কমে দুই বছরের সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে টানা তৃতীয় মাসের মতো আস্থা নিম্নমুখী রয়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থনীতির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ও চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্ট বাণিজ্য উত্তেজনার কারণেই করপোরেট খাতটি সংকটে রয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। আর একই কারণে আসন্ন অর্থবছরে দেশটি মন্দায় নিমজ্জিত হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন অর্থনীতিবিদরা। খবর রয়টার্স।
রয়টার্সের মাসিক মতামত জরিপে দেখা গেছে, জাপানের সেবা খাতে আস্থা এখনো গতিশীল অবস্থায় রয়েছে। এর ওপর ভর করে বহির্বিশ্ব থেকে সৃষ্ট অস্থিরতা প্রশমিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু আগামী তিন মাসে ম্যানুফ্যাকচারিং ও সেবা খাতে ব্যবসায়ীদের আস্থা কমে যাবে।
সেমিকন্ডাক্টর, মোবাইল ফোন ও অন্যান্য যন্ত্রাংশের চীনা কোম্পানিগুলো জাপানের তৈরি যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এখানে জাপানের রফতানি কমছে।
বড় ও মাঝারি মোট ৪৮০টি কোম্পানির ওপর জরিপটি পরিচালনা করেছে রয়টার্স। সেখানে সবাই নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিজেদের মতামত দিয়েছে। আস্থা কমে যাওয়া প্রসঙ্গে রফতানিকারকরা অভিযোগ করছেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্যের চাহিদা কমে গেছে এবং দেশটির শীর্ষ দুই বাণিজ্য সহযোগীর মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বও তাদের উদ্বিগ্ন করে রেখেছে।
পরিবহন যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী এক কোম্পানির ব্যবস্থাপক বলেন, ‘বৈশ্বিক পর্যায়ে চাহিদা ক্রমে নাজুক হয়ে পড়ছে। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই ভালো পারফর্ম করছে না যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু চীন, ভারত ও মেক্সিকোর মতো অন্য দেশগুলো প্রথমার্ধের কিছু সময় পর থেকে শ্লথ হওয়া শুরু করেছে।’
ম্যানুফ্যাকচারারদের আস্থার সূচকটি বর্তমানে ১৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে, এটি পূর্ববর্তী মাসের তুলনায় ৫ পয়েন্ট কম। তবে সেবা খাতের সূচকটি ৩১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এ জরিপটি ৭ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত পরিচালিত হয়।
এদিকে রয়টার্সের পৃথক এক জরিপে বলা হয়েছে, এপ্রিলে শুরু হতে যাওয়া অর্থবছরে জাপান সম্ভবত মন্দা এড়াতে সক্ষম হবে। সদ্য বিদায়ী বছরে বার্ষিক আড়াই শতাংশ হারে সংকুচিত হওয়ার পর আগামী অর্থবছরে তা দশমিক ৮ শতাংশ সম্প্রসারিত হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তবে এই আউটলুক খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে অক্টোবরে বিক্রয় কর বৃদ্ধির যে পরিকল্পনা নিয়েছেন, তা মঙ্গলজনক হবে না বলেই আভাস দিচ্ছে তা। বয়স্ক জনসংখ্যার হার বেড়ে যাওয়ায় বর্ধিত কল্যাণ ভাতার চাপ হ্রাসে এপ্রিল থেকে বিক্রয় কর ৮ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী আবে।
অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের জাপানবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ শিগেতো নাগাই বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বিবাদের ফলে মূলধন বিনিয়োগে উৎসাহ পাচ্ছে না চীন। এ অবস্থায় জাপান থেকে মূলধনি পণ্যের রফতানি কমে যাওয়ায় দেশটির অর্থনীতি প্রভাবিত হচ্ছে।’