প্রবীর বিকাশ সরকার :: আজকে ১৫ই আগস্ট জাপানি জনজীবনে এবং রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস। এই দিন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে পরাজয় ঘোষণার দিন। এশিয়া মহাদেশে যুদ্ধ শেষের দিন। তাই এই দিবসটিকে জাপানিরা বলেন, 終戦記念日。অর্থাৎ যুদ্ধ সমাপ্তির স্মারক দিবস।
এই দিবসটিকে জাতীয়ভাবে উদযাপন করা হয়। সম্রাট বুদোওকান ভবনে দেশ-বিদেশে যাঁরা জীবন দিয়েছেন নানাভাবে তাঁদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বক্তব্য রাখেন। টোকিওর ইয়াসুকুনি জিনজা মন্দিরে সমবেত হন হাজার হাজার মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে শহীদদের প্রতি। সাড়ে ২৪ লক্ষের বেশি শহীদ আবালবৃদ্ধবনিতার আত্মা এই মন্দিরে সমাহিত আছে।
সারাদিনই সারা দেশ থেকে লোকজন এখানে আসেন। আসেন তাইওয়ান থেকে। বহু বিদেশিও শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন জাপানের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে এবং বিদেশ থেকে। লোকেলোকারণ্য থাকে সারাটি দিন।
প্রতি বছরের মতো এবারও সস্ত্রীক সারাদিন কাটালাম বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। এরমধ্যে সবচে যে বড় সমাবেশ হয় সেটা আয়োজন করে জাপানের বৃহৎ জাতীয়তাবাদী সংগঠন নিপ্পন কাইগি বা জাপান কনফারেন্স। এটা ১৯৯৭ সালে গঠিত এবং এর সদস্য সংখ্যা ৩৮,০০০। এই সংগঠনের তরুণ শাখাটি আয়োজন করে ইতিহাসবিষয়ক সম্মলনের। এবারও আমি আমন্ত্রিত হয়েছিলাম। বিশিষ্টদের সঙ্গে আমিও কথা বলার সুযোগ পেলাম তরুণদের উদ্দেশে। রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষকসহ নানা পেশাজীবী এতে অংশগ্রহণ করেন। কেউ দলবাজি করেন না, বাপ-চাচাদের কথা বলেন না, এন করেছেন, তেন করেছেন বলেন না, মন্দির-মসজিদ করে দেবার কথা বলেন না, ধর্মীয় আগড়ম-বাগড়মও বলেন না ভুলেও।
তারা বলেন ইতিহাস নিয়ে, ভুলভ্রান্তি নিয়ে, কীভাবে স্বদেশকে বিশ্বের সেরা একটি দেশে পরিণত করা যাবে, বিশ্বের সাথে কীভাবে তাল মিলিয়ে চলা যাবে এসব বলেন।কীভাবে আরও অবদান রাখা যাবে মানবকল্যাণে সেকথা বলেন। আর স্মরণ করেন যাঁদের জীবনের বিনিময়ে জাপান দেশটি রক্ষা পেয়েছে, জাপানিরা বেঁচে আছেন, তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন। প্রবীণরা স্মৃতির কথা বলেন। স্বাদেশিক গান হয়। পান-ভোজন হয়। প্রতিটি আয়োজন যেমন শৈল্পিক তেমনি সুশৃঙ্খল। অতিরিক্ত কথা নেই, হামবড়া ভাব নেই, ঘনঘন অহেতুক স্লোগান নেই, চিৎকার নেই। মাস্তানি নেই। পুলিশি ঝামেলা নেই।
ব্যক্তিগতভাবে অনেক বছর ধরে জাপানের ইতিহাস, সংস্কৃতি, জনজীবন নিয়ে গবেষণা করছি। জাপান-বাংলাদেশ, জাপান-ভারত, জাপান-এশিয়া সম্পর্ক নিয়ে কাজ করছি ফলে কিছু মতামত রাখতে পারি। রবীন্দ্রনাথ, রাসবিহারী বসু, নেতাজি, বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সম্পর্কে বলি তখন জাপানিরা দারুণ আগ্রহ প্রকাশ করেন। জানতে চান কত কিছু। যা জানি তাই বলি। শ্রদ্ধায় মাথা নত করেন তারা। যখন বলি যে এঁরা সবাই বাঙালি—-শুনে অবাক হয়ে যান! বাংলাদেশে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এই যে সুযোগগুলো আছে সেগুলোকে কাজে লাগাতে পারে প্রবাসীরা বা দূতাবাস। কিন্তু সে গুড়ে বালি।
আগামী বছর ইয়াসুকুনি জিনজা মন্দিরের ১৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিক। বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান করবে নিপ্পন কাইগি। সেই উপলক্ষে কিছু প্রস্তাব আজকে দিয়েছি।