শোকসভার শুরুতে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর শিল্পীরা সমবেতকণ্ঠে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল গেয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং দুটি শোক সঙ্গীত পরিবেশন করেন। জসিম উদ্দীন মন্ডল-এর নাতনি ছোট্ট বন্ধু নাবা হক পন্থা “ধন্য ধন্য বলি তারে…” লালনগীতি গেয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
ঢাকার তোপখানা রোডে বিএমএ অডিটোরিয়ামে আজ ১৫ অক্টোবর ২০১৭, বিকেল ৪ টায় ” মৃত্যুতে নিঃশেষ নয় তোমার স্বপ্ব” সশ্রদ্ধ বাণীতে জসিম উদ্দীন মন্ডল-এর শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়।
মানুষের মুক্তিসংগ্রামে নিবেদিতপ্রাণ আজীবন বিপ্লবী কমরেড জসিম মন্ডল-এর শোকসভায় সভাপতিত্ব করেন সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। পঙ্কজ ভট্টাচার্য, রাশেদ খান মেনন, মঞ্জুরুল আহসান খান, খালেকুজ্জামান, সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি, মোশরেফা মিশু, ইসমাইলন হোসেন, শহিদুল ইসলাম, অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, ডা. শাহাদত হোসেন, শাহ আলমসহ প্রগতিশীল গণতন্ত্রমনা নবীন ও প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শোকসভায় গভীর শোক প্রকাশ করেন। এবং তাঁর কৃতিত্ব, আদর্শিক ও সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে আলোকপাত করেন। ভারত, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও শোক বার্তা পাঠিয়েছেন।
সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মেহনতি মানুষের মুক্তিসংগ্রামী অনলবর্ষী বক্তা জসিম উদ্দীন মন্ডল ১৯২০ সালে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার কালিদাসপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব কাটে সিরাজগঞ্জ, রানাঘাট, পার্বতীপুর, ঈশ্বরদী ও কলকাতায়। কিশোরকাল থেকেই সিপিআই’ র মিছিল মিটিংয়ে যোগ দিতেন তিনি। ১৯৪০ সালে শিয়ালদহে রেলের চাকরীতে যোগ দেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পার্বতীপুরে বসবাস শুরু করেন। বাংলাদেশে এসে সিপিবি-তে যোগ দেন এবং ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে রেল শ্রমিকসহ মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আমৃত্যু লড়াই করেন। ২ অক্টোবর, ২০১৭ তারিখে এই লড়াকু মানুষের মৃত্যু হয়।
জসিম উদ্দীন মন্ডল তাঁর জীবনে বক্তৃতায় বলতেন, “দরখাস্ত করে, হুজুরের পানিপড়া দিয়ে, শ্লোগান দিয়ে এই সমাজ একচুলও পরিবর্তন করা যাবে না। সমাজতন্ত্র ছাড়া কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না। শ্রমিকের রাজনীতি বুঝো, অঙ্ক করে জীবনবাজি রেখে লড়াই করে এই সমাজ ভাঙ্গতে হবে এবং ভাঙ্গিতেই হইবে। শ্রমিককেই লড়াই ও বিপ্লবের মাধ্যমে এই বড়লোকের সমাজ ভেঙ্গে তার নিজের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হব।”
“এই সমাজ পচেঁ গেছে, এই সমাজ বদলাইতে হবে।”
জসিম উদ্দীন মন্ডল স্মরণে তাঁর গ্রামের বাড়িকে জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলার প্রস্তাব করেন তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা মনা।