নারী মুক্তির প্রেরণা ও নারী আন্দোলনের অন্যতম অগ্রদূত সুফিয়া কামাল। শুধু নারী আন্দোলন নয়, গণতান্ত্রিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও তার অবদান অপরিসীম। ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধসহ শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তার প্রত্যক্ষ উপস্থিতি ছিল। আর একারণেই তাকে ‘জননী সাহসিকা’ উপাধিতে অভিষিক্ত করা হয়েছে। এই মহীয়সী নারীর আজ ১০৫ তম জন্মদিন। ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সুফিয়া কামাল। পেশায় আইনজীবী বাবা সৈয়দ আব্দুল বারি সুফিয়ার জন্মের সাত বছরের মাথায় গৃহত্যাগ করেন। এরপর মা সৈয়দা সাবেরা খাতুনের স্নেহাস্পর্শেই বড় হতে থাকেন তিনি। মায়ের কাছেই সুফিয়ার পড়ালেখার হাতেখড়ি। মাত্র ১২ বছর বয়সে সৈয়দ নেহাল হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। স্বামীর অনুপ্রেরণায় তিনি সাহিত্যপাঠে মনোনিবেশ করেন। যা তাকে পরবর্তীতে সাহিত্য রচনায় উদ্বুদ্ধ করে। ১৯২৩ সালে রচনা করেন প্রথম গল্প ‘সৈনিক বধূ’। এটি প্রকাশিত হয় বরিশালের তরুণ পত্রিকায়। ১৯২৬ সালে সওগাত পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’। তিনি ছিলেন বেগম পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।
১৯২৯ সালে তিনি বেগম রোকেয়ার ‘আঞ্জুমান-ই-খাওয়াতিন-ই-ইসলাম’ এ যোগ দেন। এ সময় বেগম রোকেয়ার আদর্শ তাকে আলোড়িত করে। ১৯৩১ সালে তিনি মুসলিম মহিলাদের মধ্যে প্রথম ইন্ডিয়ান মহিলা ফেডারেশনের সদস্য নির্বাচিত হন। সাহিত্যে সুফিয়া কামালের সৃজনশীলতা ছিল অবিস্মরণীয়। শিশুতোষ রচনা ছাড়াও দেশ, প্রকৃতি, গণতন্ত্র, সমাজ সংস্কার এবং নারীমুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার লেখনী আজও পাঠককে আলোড়িত ও অনুপ্রাণিত করে।
‘জননী সাহসিকা’ সুফিয়া কামালের জন্মদিনে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, কবি সুফিয়া কামাল নারী সমাজকে কুসংস্কার আর অবরোধের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের নারী সমাজের এক উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় আদর্শ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুফিয়া কামাল ছিলেন একদিকে আবহমান বাঙালি নারীর প্রতিকৃতি, মমতাময়ী মা; অন্যদিকে বাংলার প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলো তার আপোষহীন দৃপ্ত পদচারণা। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার চিন্তাধারা কবি সুফিয়া কামালের জীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সুফিয়া কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা হোস্টেলকে ‘রোকেয়া হল’ নামকরণের দাবি জানান। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্র সংগীত নিষিদ্ধ করলে এর প্রতিবাদে আন্দোলন করেন। শিশু সংগঠন কচিকাঁচার মেলা’র তিনি প্রতিষ্ঠাতা।
প্রধানমন্ত্রী কবি বেগম সুফিয়া কামালের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর সুফিয়া কামাল মৃত্যুবরণ করেন। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে সমাহিত করা হয়।