শান্তিপূর্ণ সমাধান চাইলেও উত্তর কোরিয়া তাদের পরমাণু অস্ত্র প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রাখলে বড় ধরনের সংঘাত শুরু হয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজ কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, কোরীয় উপদ্বীপের চলমান সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান তিনি চান। এজন্য উত্তর কোরিয়ার উপর নতুন করে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও বিবেচনা করছেন তিনি।
তবে সামরিক অভিযানের বিষয়টিও তার বিবেচনায় রয়েছে বলে জানান ট্রাম্প।
তিনি বলেন, “উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বড় ধরনের সংঘাতে মাধ্যমেও আমরা সমস্যার ইতি টানাতে পারি।” “যদিও আমরা কূটনৈতিকভাবেই সমস্যার সমাধান করতে আগ্রহী, কিন্তু সেটা খুবই কঠিন।” উত্তর কোরিয়া তার জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা বলেও মনে করেন ট্রাম্প। এদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই সতর্ক করে বলেন, সেখানে বর্তমানে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাতে কোরীয় উপদ্বীপের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে রাশিয়ার একজন কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠকে ওয়াং এ কথা বলেন বলে এক বিবৃতিতে জানায় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিশ্বের সঙ্গে প্রায় বিচ্ছিন্ন উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র দেশ চীন। কিন্তু গত কয়েকমাসে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র ও দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চীনের ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উত্তর কোরিয়াকে নিয়ন্ত্রণে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের চেষ্টার প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প। ট্রাম্প বলেন, “তিনি নিরন্তর চেষ্টা করছেন বলেই আমার বিশ্বাস। তিনি নিশ্চিতভাবেই অশান্তি ও মৃত্যু দেখতে চান না। তিনি একজন ভালো মানুষ।”
চীন তাদের প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়াকে আর কখনও পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা না করার আহ্বান জানিয়েছে বলেও জানান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। না হলে একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়েও চীন সতর্ক করেছে বলে জানান তিনি। তবে কি ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে সে বিষয়ে টিলারসন কিছু বলেননি। যদিও চীন ফেব্রুয়ারিতেই উত্তর কোরিয়া থেকে কয়লা আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য কয়লা।
উত্তর কোরিয়া উসকানি মূলক আচরণ অব্যাহত রাখলে তাদের তেলের চালানের উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে বলে এ মাসে চীনা গণমাধ্যমগুলোতে খবর প্রকাশ পায়। দীর্ঘদিন ধরেই উত্তর কোরিয়ার পরমাণু প্রকল্প নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে চীন। যদিও উত্তর কোরিয়া বারবারই যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেওয়া হুমকি দিয়ে আসছে।
ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার যেকোনো হামলা প্রতিরোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শক্তি প্রদর্শনের জন্য তিনি কোরীয় উপদ্বীপে একটি নৌ-স্ট্রাইট গ্রুপ পাঠিয়েছেন। ওই গ্রুপে একটি বিমানবাহী রণতরীও রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০২০ সালের পর যে কোনো সময় যুক্তরাষ্ট্রে হামলা চালানোর সক্ষমতা অর্জন করে ফেলতে পারে উত্তর কোরিয়া। কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা বাড়ে এমন যে কোনো আচরণ থেকে সব পক্ষকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে।