যে অচল জীবনের লড়াই শুরু হয়েছে মাস তিনেক ধরে হুইলচেয়ারে তার থেমে যেতে নেই, তার হেরে যাওয়া জীবরের অপর নাম নয়।
প্রিয় পত্রিকা তোওকিয়োও শিম্বুন (টোকিও শিম্বুন) এর মাধ্যমে জানতে পেলাম এমন একজন নারীর কথা, এমন একজন কবির কথা—বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠলো! জীবন এক যুদ্ধের নাম, জীবন এক লড়াইয়ের প্রতিভূ! তারই বাস্তব উদহারণ হচ্ছেন ওজাওয়া আয়াকো, যে মাত্র ৩৫!
২০ বছরের সময় ধরা পড়ে তার দূরারোগ্য এক কঠিন অসুখ– muscular dystrophy! বাংলায় জানি না এর প্রকৃত অর্থ কী বা কী ধরনের অসুখ।
শুধু এটুকু জানি যে, এই অসুখ ধীরে ধীরে শরীরের সমস্ত পেশিকোষকে শুকিয়ে ফেলবে বা অকেজো করে দেবে। তারপর জীবনাত্মা মহাশূন্যের অসীম নীল রঙে মিশে যাবে। ডাক্তার তখনই ভবিষ্যবার্তা দিয়েছিলেন, ১০ বছর পর হুইলচেয়ারের জীবনে চলে যেতে হবে। কিছুটা দেরিতে হলেও চিকিৎসকের অনুমান সত্যি বলে পরিণত হলো। সত্যিকার চিকিৎসকই ঈশ্বরের প্রতিভূ।
সম্প্রতি আয়াকো সান ১০ বছর আগের সেই বিস্ময়াহত, থমকানো অসুখের অভিজ্ঞতাকে স্মরণে রেখে প্রকাশ করেছেন একটি কবিতার বই: 「10年前の君へ 筋ジストロフィーと生きる」=জুউ নেন মায়ে নো কিমি এ কিনজিুসুতোরোফি-তো ইকিরু। অর্থাৎ, দশ বছর আগের তোমাকে মাসকুলার ডিস্ট্রোফির সঙ্গে বাঁচা।
কাব্যগ্রন্থটি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে সারা জাপানে। ৫৪০ ইয়েনের বইটির প্রতি কপির বিক্রি থেকে ৫০ ইয়েন দান করে দিচ্ছেন জাপান মাসকুলার ডিস্ট্রোফি অ্যাসোসিয়েশনের তহবিলে। সেইসঙ্গে আয়াকো সান সারা জাপান ঘুরে ঘুরে কবিতা পাঠ করছেন, সঙ্গীতের সুরধুনিতে আপ্লুত করে তুলছেন অগনিত আবালবৃদ্ধবনিতাকে। যারা একই অসুখের সহযাত্রী তাদেরকে জীবনলড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করছেন।
অচল জীবন নিয়ে লড়াই চলছে, পাশাপাশি কাজ ছাড়েননি, চাকরি করছেন, অতলান্ত ভালোবাসার আমৃত্যু জীবনসঙ্গী স্বামীর যথাসম্ভব সেবা করছেন। স্বামীও তাকে বাকী দিনগুলো যাতে আনন্দময় হয়, উৎফুল্লময় হয় তার জন্য সানন্দসঙ্গ দিয়ে চলেছেন। জীবন যেরকমই হোক তাকে মেনে নিয়ে লড়াই করে যাওয়ার নামই জীবন! আয়াকো সানের জীবন থেকে এই বার্তাটাই পেলাম নতুন করে। শুভেচ্ছা আয়াকো সান! শুভকামনা নিরন্তর। ভালোবাসা! ভালোবাসা!
প্রবীর বিকাশ সরকার