জনতা ব্যাংকের ব্যাংকের সাবেক এমডির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সরকারি কোনও ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সুপারিশ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর দৃষ্টান্ত এই প্রথম। অতীতে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক এ ধরনের চিঠি পাঠিয়ে এমডিদের অপসারণ করতো। সর্বশেষ অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক এমডি সৈয়দ আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তার আগে বেসিক ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফকরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছিল। প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির জন্য ক্রিসেন্ট গ্রুপের সাথে যোগসাজশের মাধ্যমে সুবিধা দেওয়ার কারনে ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুস সালামকে দায়ী করেছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। শুধু তাই নয়, সাবেক এই এমডির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দিয়েছে জনতা ব্যাংকের বর্তমান পর্ষদ। জনতা ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জনতা ব্যাংক থেকে গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুস সালাম, সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) জাকির হোসেন ও ইসমাইল হোসেনের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে। অবশ্য পর্ষদের কাছে সাবেক এমডি আবদুস সালাম যে জবাব দিয়েছেন তা পর্ষদ গ্রহণ করেনি বলে জানা গেছে। বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
এদিকে, বুধবার (৮ আগস্ট) অনুষ্ঠিত ব্যাংকটির বোর্ডসভায়ও অনিয়ম ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে থাকার ঘোষণা দেওয়া হয়। ব্যাংকের চেয়ারম্যান লুনা শামসুদ্দোহার সভাপতিত্বে বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ক্রিসেন্ট গ্রুপের পাঁচ হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির ঘটনায় পরিচালনা পর্ষদ থেকে একটি তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেই তদন্ত প্রতিবেদনে সাবেক এমডি আবদুস সালাম ও তিনজন ডিএমডির বিরুদ্ধে চরম দায়িত্বহীনতার অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং রীতিনীতি লঙ্ঘন করে পর্ষদকে এড়িয়ে এই তিন কর্মকর্তা ক্রিসেন্ট গ্রুপকে বেআইনিভাবে ঋণ সুবিধা দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রিসেন্ট গ্রুপকে ঋণ হিসেবে দেওয়া অর্থের প্রায় সবই নগদ তুলে নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখার ভল্টে নগদ টাকার ধারণক্ষমতা তিন কোটি টাকা। এ কারণে গ্রাহককে ঋণের টাকা দিলকুশা স্থানীয় কার্যালয় শাখা ও মোহাম্মদপুর শাখা থেকে তোলার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ ব্যাংকের পর্ষদকে জানানো হয়নি। শুধু তা-ই নয়, সীমাতিরিক্ত ঋণ বিতরণ করলেও পর্ষদকে জানায়নি, এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনও নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ক্রিসেন্ট গ্রুপ ২০১৩ সাল থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নেওয়া শুরু করে। ২০১৪ সালে এসে ব্যাপকতা বাড়তে থাকে। ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে গ্রাহককে সবচেয়ে বেশি ঋণ দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, আবদুস সালাম জনতা ব্যাংকের এমডি পদ থেকে গত বছরের ২৭ অক্টোবর অবসরে যান। ২০১৪ সালের ২৮ অক্টোবর এমডি পদে যোগ দিয়েছিলেন আবদুস সালাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির রফতানির বিপরীতে সৃষ্ট ৫৭০টি বৈদেশিক বিনিময় বিল ক্রয় (এফডিবিপি) করে গ্রাহককে এক হাজার ১৩৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়। আগের বিল মেয়াদোত্তীর্ণ থাকা অবস্থায় পরের বিল কেনার নিয়ম না থাকলেও তা কেনা হয়েছে।
Check Also
১৫ই আগষ্ট আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন জাপানি নভোচারী ফুরুকাওয়া
জাপানের নভোচারী ফুরুকাওয়া সাতোশির দ্রুত হলে ১৫ই আগষ্ট আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে দ্বিতীয় ভ্রমণ নির্ধারণ করা …