সম্প্রতি প্রয়াত জাপানশীর্ষ রবীন্দ্রগবেষক ‘ভারতপথিক’ অধ্যাপক কাজুও আজুমার নতুন বাড়িতে তাঁর বিধবা পতœী মাদাম কেইকো আজুমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে কিছু পুরনো কাগজপত্রের বাক্সে একটি দুর্লভ প্রকাশনা খুঁজে পাই যা বৃহত্তর বাঙালি জনগোষ্ঠীর কাছে অজানা বললেই চলে। প্রকাশনাটি সাধারণ জাপানি দৈনিক সংবাদপত্রের মাপের একটি পত্রিকা বা প্রচারপত্র। নিউজ প্রিন্ট কাগজে সাদাকালো রঙে মুদ্রিত একটি পাতা উল্টো দিক যার শূন্য। মাঝখানে জাপানি ভাষা ও ইংরেজিতে লেখা যথাক্রমে:
কিউউএন তোকুশুউ
বানগুরাদেশু Bangladesh বানগুরাদেশু
আনাতা নো কিয়োওকান তো আই নো তে অ কারেরা নি!!
ওয়ারে ওয়ারে ওয়া কোনো য়োও নি কোওদোও সুরু
বাংলায় অনুবাদ করলে দাঁড়ায়:
জরুরি সাহায্য প্রতিবেদন
বাংলাদেশ Bangladesh বাংলাদেশ
তোমার সমবেদনা এবং ভালোবাসার হাত তাদের প্রতি!!
আমরা এভাবে উদ্যোগ নেবো
এই শিরোনামের সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশের একটি মানচিত্র। এতে দীর্ঘ লাইনগুলো দিয়ে সারা বাংলাদেশের বন্যার স্থান এবং ঘন জাল দিয়ে সঙ্কটাপন্ন স্থানকে নির্দেশ করা হয়েছে। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে যে, মহাবন্যার সময়কার প্রকাশিত বিশেষ প্রচারপত্র এটা। পত্রের একেবারে নিচে মুদ্রিত আছে: গিএনকিন ওকুরিসাকি: নিহোন ইউনেসুকো কিয়োওকাই রেনমেই–তোওকিয়োও তো চিয়োদাকু মারু নো উচি ১-৬-১ মারু নো উচি আসাহি সেইমেই কান নাই দেনওয়া ০৩–২১৪–২৯৯১ অর্থাৎ চাঁদা পাঠাবার ঠিকানা: নিহোন (জাপান) ইউনেসকো ফেডারেশন, টোকিও চিয়োদা-ওয়ার্ড মারু নো উচি ১-৬-১ মারু নো উচি আসাহি জীবনবীমা ভবন টেলিফোন: ০৩-২১৪-২৯৯১। সুতরাং আর দ্বিধা থাকে না যে, এটা National Federation of UNESCO Associations in JAPAN এটার প্রকাশক। কিন্তু সমস্যা আছে প্রকাশকাল নিয়ে। কত সালে প্রকাশিত হয়েছিল তার কোনো তথ্য নেই কোথাও। অধ্যাপক আজুমা বেঁচে থাকলে চটপট বলে দিতে পারতেন। কেইকো মাদামের বয়স এখন ৮০ ছাড়িয়েছে তিনিও যে স্মরণ করতে পারবেন না বলাই বাহুল্য। কাজেই তাঁকে বিব্রত না করে একুশ শতকের তথ্যনির্দেশক ইন্টারনেটের শরাণাপন্ন হলাম। খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেলাম একটি সাইট http://crd.ndl.go.jp/ reference/
নামে, জানতে পারলাম যে, এটা ‘ইউনেসুকো শিম্বুন’ অর্থাৎ ‘ইউনেসকো পত্রিকা’ ১৯৭৪ সালের অক্টোবর মাসের ২৫ তারিখে প্রকাশিত হয়েছে।
এই পত্রিকায় মোট ৭টি বিষয় মুদ্রিত। জাপানি লেখা যেহেতু ডানদিক থেকে পড়তে হয় তাই প্রথম বিষয়টি চমকে ওঠার মতো! বিদ্রেহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সুবিখ্যাত কবিতা ‘কাণ্ডারী হুশিয়ার’ এর জাপানি ভাষায় অনুবাদ! অনুবাদ করেছেন সেইসময়কার খ্যাতিমান রবীন্দ্রগবেষক, বাংলাভাষাপ্রেমী এবং ১৯৭৩ সালে জাপান ভ্রমণের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দোভাষী অধ্যাপক কাজুও আজুমা। অনুবাদকৃত কবিতাটির নাম ‘কাজি তোরু হিত য়ো কোকোরো ছেও’ / কাজি নোজুরুরু ইসুরামু। কবিতাটির শেষে অনুবাদক দুছত্র লিখেছেন, যা বাংলায় ‘নজরুল ইসলাম, (তাঁর) ৩৪ বছর বয়সের কবিতা। এই কবিতায়, ইসলামের স্বকৃত সুর বিদ্যমান এবং জাতীয় গান অনুসারে ব্যাপকভাবে বাংলাদেশের জনগণদ্বারা সমাদৃত ও গীত।’
দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে তৎকালীন টোকিওস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আর.এম.চৌধুরীর বাণী। তাঁর বাণীর শিরোনাম ‘রা–মান শুশোও নো কিনকিউ আপি-রু নি কোতায়েরু দোওমোকু সুবেকি নিচি ইউ কিয়োও রেন নো কাৎসুদোও’ অর্থাৎ ‘রহমান (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) প্রধান মন্ত্রীর জরুরি আবেদনে সাড়া দৃষ্টি আকর্ষণীয় নিহোন ইউনেসকো ফেডারেশনের কর্মকাণ্ড’, এতে তিনি বাংলাদেশের বন্যার পরিস্থিতি সংক্ষেপে তুলে ধরে রিলিফ উদ্যোক্তাদেরকে জাতির প্রতিনিধি হিসেবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে কর্তৃপক্ষের মূলকথা। সেখানে যা বলা হয়েছে তার অনূদিত-ভাষ্য এরকম:
“এশিয়া ফেডারেশন গঠনের সঙ্গে সঙ্গে তিন জন জাপানিকে প্রথম প্রধান প্রতিনিধি করে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। এরা হচ্ছেন জাপান ইউনেসকো ফেডারেশনের প্রধান কর্মসচিব শ্রী তাকেমোতো, ইয়ামাশিতা কুনিআকি এবং কিরিউ ইউনেসকোর শ্রীমতী মারুয়ামা কুনিকো। মহাবন্যার পর তাঁরা বাংলাদেশে গিয়ে যা পর্যবেক্ষণ করেন তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। যা কিনা ইউনেসকোর পত্রিকায় মি.তাকেমোতো কর্তৃক ধারাবাহিক প্রকাশিত রিপোর্ট ‘কোনো এক ঐশ্বরিক নিশানা’য় প্রমাণিত।
এই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া ছিল ব্যাপক। প্যারিসে এইসব প্রতিবেদন পড়ে শ্রীমতী ইনুকাই মিচিকো যিনি বাংলাদেশের পিতৃমাতৃহীন শিশু তথা এতিমদের পোষ্যমাতা জাপান ইউনেসকোর দপ্তরে চাঁদা পাঠান। তাছাড়া গুনমা-প্রিফেকচারস্থ ইউনেসকো-কিরিউ’র প্রতিটি সদস্য মারুয়ামা দম্পতির দৃষ্টি আকর্ষক কার্যশক্তির মাধ্যমে চাঁদা সংগ্রহ তহবিল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে ইতিমধ্যেই প্রথম পর্যায়ে লক্ষ্যার্জিত অর্থ অক্টোবর মাসের ২১ তারিখে রাষ্ট্রদূত আর.এম.চৌধুরীর হাতে তুলে দেয়া হয়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আরও বড় প্রচার আমাদের না করলে নয়। বর্তমান পত্রিকার বিশেষ সংখ্যাসহ ২০ হাজার পাঠককে পরিস্থিতি বুঝিয়ে, প্রত্যেকটি সংগঠনকে এগিয়ে এসে চাঁদা, পরিধান, শিক্ষাপণ্য সংগ্রহ করে সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে পৌঁছে দেওয়ার আবেদনের ওপর নির্ভর করছে।
সংস্থার পত্রিকার ৭৬৯ সংখ্যায় প্রকাশিত বাংলাদেশ-ইউনেসকো ইয়ুথ ক্লাবের চেয়ারম্যান আর. রেহমানের আবেদন ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত আমাদের দেশের তরুণ-তরুণী এবং ছাত্রছাত্রীদেরকে জরুরি সাহায্য করার জন্য অর্থ এবং পণ্যসামগ্রী পাঠানোর সম্ভাবনা বিচার-বিবেচনা যায় কিনা’ যারা পড়েছেন তারা জানেন যে, সবকিছুর চেয়ে আমাদের এখন এই আবেদনে সাড়া না দিলে নয়।
কিন্তু আমাদের তৎপরতা তথাকথিত সাহায্যের ধাপে থেমে থাকার নয়। অগ্রসর দেশের হিরোইজমের বাহ্যিক প্রলেপ হিসেবে জরুরি সাহায্যের দমআটকানো অবস্থা থেকে বেরিয়ে স্থানীয় (বাংলাদেশের) জাপানি স্বেচ্ছাসেবক এবং ইউনেসকো ক্লাবের নেতৃবৃন্দের হাত ধরে বস্তুতান্ত্রিক বন্টনের বিপরীতে মননের বন্টনকে প্রতিষ্ঠা করে নতুন গণতান্ত্রিক ঐক্যতানের কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাওয়া। সেইসঙ্গে থাকবে মনন তথা সংস্কৃতি, শিক্ষা কখনোবা আনন্দ-বিনোদন। আর যাইহোক, আমরা যা করতে যাচ্ছি সেটা শুধু চাঁদা সংগ্রহই নয়। ‘শাপলা নীড়ে’র (বাংলাদেশে কর্মরত জাপানি এনজিও) তরুণ কর্মীদল কাইগাই কিওরিয়োকুতাই (The Japan Overseas Cooperation Volunteers [JOCV]) এর সংস্থাগুলোর সঙ্গে মিলেমিশে জিপ গাড়ির শক্তিতে সংযুক্ত হয়ে ‘সেবিকা আছে, ওষুধ আছে, দর্শন-শ্রবণ যন্ত্রপাতি আছে’ এমন সব মিলিয়ে একটি ইউনিট হিসেবে কাঠামোগত সাধারণ জরুরি সাহায্য পদ্ধতির ক্যারাভান দল গঠন করে প্রকল্পস্থলে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
পাঠকবৃন্দ, স্মরণ করতে বলি, শাপলা নীড়ের তরুণ কর্মীদের মন্তব্য: ‘উপকৃত হবো বরং আমরা!’
এহেন বাংলাদেশের জন্য নতুন উদ্ধারদলটি, প্রকৃতই, (বাংলাদেশের) অভ্যন্তরীণ বিপর্যয় যখন গভীরতর তখন আমাদের আপন সভ্যতার প্রতি সর্বোচ্চ রায়, ঐশ্বরিক দান নয় কি?”
চতুর্থ স্থানে আছে, বিদ্রোহ কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে লিখিত একটি নিবন্ধ। লিখেছেন বিশ্বভারতীর জাপানি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক, রবীন্দ্রগবেষক ও বাংলাভাষাপ্রেমী বিখ্যাত ৎসুকুবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক কাজুও আজুমা। তিনি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিচয় দিতে গিয়ে বাংলা অঞ্চলকে নবজাগরণ এবং বিদ্রোহের সুতিকাগার বলে অভিহিত করেছেন। বলেছেন, “বাংলার বিয়োগান্তক ঘটনা, বাংলার তেজোদ্দীপনার বাহক এবং প্রতীক হচ্ছেন নজরুল ইসলাম। তিনি হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন।”
এক জায়গায় অধ্যাপক আজুমা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা লিখেছেন, “(নজরুল) ইসলাম প্রবল অনুরাগ নিয়ে স্বাধীনতার মেনিফেস্টো ঘোষণা করেছিলেন, সেই দীর্ঘসূত্র ধরে আজকের বাংলাদেশ স্বাধীনতার বাস্তব রূপ লাভ করেছে। ১৯৪১ সালের পর থেকে বিয়োগী (নজরুল) ইসলাম ভাষাহীন জগতে বাংলার সাক্ষী হয়ে আছেন।
(নজরুল) ইসলাম বাংলা ভাষাকে সবকিছু থেকে ভালোবেসেছেন, সবকিছুই বাংলা ভাষায় প্রকাশ করেছেন। সেই বাংলার মাটিতে বাংলা ভাষায় চিন্তা, শিক্ষা গ্রহণ করে বাংলায় প্রকাশ করার অধিকার রক্ষায় বাংলা ভাষা প্রতিরক্ষা আন্দোলন প্রথম ঘটনা হয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার রূপ লাভ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের তিন জন অধ্যাপক স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় লক্ষ্যবস্তু ছিলেন। অপহরণ করে তাঁদেরকে হত্যা করা হয়। আমরা তাঁদের মধ্যে সবচে খ্যাতিমান মুনীর চৌধুরীকে কয়েক বছর আগে জাপানে অভ্যর্থনা জানিয়ে বাংলা সংস্কৃতির কথা বলতে বলেছিলাম এবং গভীর বন্ধুত্ব করেছিলাম। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ঢাকায় গিয়ে বিধবা পতœীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সময় সেই বেদনার গভীরতা অনুভব করে নিজের ভাষা ও সংস্কৃতিকে রক্ষার জন্য জীবন দেয়ার নির্মমতায় মাথা তুলে দাঁড়াতে পারিনি!
সেই বাংলা সাহিত্যের দুটি মহাতারকা হচ্ছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং নজরুল ইসলাম।”
পঞ্চম স্থানে আছে, গুনমা-প্রিফেকচারস্থ কিরিউ-ইউনেসকোর কর্মসচিব শ্রীমতী মারুয়ামা কুনিকোকে নিয়ে একটি ফিচার, লিখেছেন ইউনেসকো-জাপানের কর্মসচিব মি.তাকেমোতো। শ্রীমতী কুনিকো বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর নেতৃত্বে আরও দুজন সদস্যসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ পরিভ্রমণ করেন জুলাই মাসে (১৯৭৪)। বাংলাদেশের ঢাকায় অবস্থানকালে তিনি বন্যাকবলিত পরিস্থিতি যা দেখেছেন স্বচক্ষে ফিরে এসে সেই অনুভূতি গুনমা-টিভি, জাপানের অন্যতম প্রাচীন দৈনিক জোওমোশিম্বুন পত্রিকা এবং কিরিউ টাইমস পত্রিকায় তুলে ধরেন। তাঁর এই বিবরণের প্রতিক্রিয়া ‘বানগুরাদেশু নো কিউউজোও অ আপি-রু সুরু কাই’ অর্থাৎ ‘বাংলাদেশের বিপর্যয়বিষয়ক আবেদনীয় সমিতি’ নামে একটি সংস্থা গঠনের দিকে অগ্রসর হয়। এই সমিতি ছাড়াও স্থানীয় রোটারি ক্লাব, লায়ন্স ক্লাব, বয়স্কাউট, কিরিউ আঞ্চলিক মহিলা সংস্থা প্রভৃতি সংগঠনের প্রধানরা একত্রিত হয়ে অর্থ সংগ্রহ করে তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এবং রাতারাতি প্রথম লক্ষ্য হিসেবে হিয়াকু মান ইয়েন (১,০০ ০,০০০) অর্থাৎ দশ লক্ষ ইয়েন সংগৃহীত হয়। এই উদ্যোগ দ্রুতগতিতে আরও বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য শহরেও। বাংলাদেশভিত্তিক জাপানি বৃহৎ এনজিও সংস্থা ‘শাপলা নীড়ে’র তরুণ কর্মীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাহায্য সংগ্রহ অভিযানে অংশগ্রহণ করতে এগিয়ে আসে।
ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে, ‘শাপলা নীড়’ এনজিওর প্রকাশিত বাংলাদেশের কর্মতৎপরতার একাধিক সংক্ষিপ্ত সংবাদ। লিখেছেন এই সংস্থার অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠাতা কর্মী শ্রীমতী য়োশিদা ইউরিনো। উল্লেখ্য যে, ১৯৭২ সালেই ‘শাপলা নীড়’ ঢাকার নিকটবর্তী পইলা গ্রামে তার প্রথম প্রকল্প স্থাপন করে। বলাই বাহুল্য, চুয়াত্তরের মহাবন্যায় শাপলা নীড়ও বিশেষ পরিকল্পনায় প্রচুর ত্রাণসমাগ্রী নিয়ে মহাবন্যায় বিপর্যস্ত গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সাহায্যকল্পে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
সপ্তম স্থানে আছে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যফিচার ‘বানগুরাদেশু অ শিরু তামে নি’ অর্থাৎ ‘বাংলাদেশকে জানার জন্য’ শিরোনামে ১৯৭১ সাল থেকে প্রকাশিত কয়েকটি গ্রন্থ এবং ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত জাপানের বিভিন্ন জাতীয় সংবাদপত্র ও সাময়িকীতে প্রকাশিত অনেকগুলো প্রতিবেদনের পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সংগ্রহকরা জরুরি বলে মনে করি। টোকিওস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের উচিত এগুলো সংগ্রহ করে দূতাবাসসহ দেশের বিভিন্ন অভিলেখগারে সংগ্রহণকল্পে দ্রুত এগিয়ে আসা কারণ এইসব দুর্লভ তথ্য-উপাত্ত বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের ইতিহাস লেখার আকর হিসেবে বিবেচ্য বলে মনে করি।
জাপান ইউনেসকোর এই একপাতার পত্রিকাতে বিশিষ্ট জাপানি আলোকচিত্রধারক এবং শাপলা নীড় এনজিওর অন্যতম প্রধান কর্মী য়োশিদা শিগেরুর একটি আলোকচিত্র প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি ছোট্ট ছবি তৎকালীন অনেক জাপানির দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। উল্লেখ্য যে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন জাপানে ব্যাপকভাবে পরিচিত তেমনটি নন কাজী নজরুল ইসলাম। তথাপি, জাপানের AALA (Asian Association for Language Assessment) Vol.3 Õ72/DEC বনগারু শিজিন কা-জি নোজুরুরু ইসুরামু তোকুশুউ (বাঙালি কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশেষ সংখ্যা) নামক একটি প্রকাশনায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই কবিতাটির জাপানি অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে বলে জানা যায় বিলুপ্ত বাংলাদেশ সোসাইটি-জাপান কর্তৃক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ পোট্রেট’ (মার্চ ২৬, ১৯৮১) স্বাধীনতা দিবস স্মারক সংকলন থেকে। কবিতাটির শিরোনাম আধ্যাপক আজুমার অনূদিত শিরোনাম থেকে ভিন্ন ‘কি অ ৎসুকেরোয়ো ফুনাচোও’ (সাবধানে নাবিক) নামে মুদ্রিত। এটা যৌথভাবে অনুবাদ করেছেন যথাক্রমে কবি ও শিল্পসমালোচক কুরাহাশি কেনইচি, কাজিওয়ারা নোবুইউকি এবং ইয়ানাই কাজুকো। সম্প্রতি অবশ্য বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার জাপানি অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে, বিস্তৃতভাবে অনুবাদ করেছেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিশিষ্ট অনুরাগী অধ্যাপিকা নিওয়া কিওকো।
প্রবীর বিকাশ সরকার শিশু সাহিত্যিক, কথাসাহিত্যিক ও গবেষক