২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙালিদের হৃদয়ে এক আবেগের দিন। এই দিনটির সাথে জড়িয়ে আছে সন্তান হারা মায়ের বুক ফোটা আর্তনাদ এবং সেই সাথে দিনটি বাঙালির জন্য গর্বেরও। এই দিনটি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে ১৯৫২ সালের এই দিনে অর্থাৎ ২১শে ফেব্রুয়ারি রাজপথে আন্দোলনরত অবস্থায় পুলিশের নির্বিচার গুলিতে নিহত হয় আবুল বরকত, আব্দুল জব্বার, আব্দুল সালাম, রফিক সহ আরো অনেক প্রাণ। সেই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ভাষা শহীদ দের স্মরণে টোকিওর ইকেবুকোরো শহরে নির্মিত স্থায়ী শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে ভাব গাম্ভীর্যের সাথে পালিত হয় শহীদ দিবস। গভীর ভালোবাসা ও বিনম্র শ্রদ্ধার সাথে প্রবাসীরা স্মরণ করেছে শহিদ সন্তান দের।
এবারের ২১শে ফেব্রূয়ারি দিনটি বুধবার হওয়ায় সাপ্তাহিক কর্মদিবস হওয়া সত্ত্বেও দূর দূরান্ত থেকে প্রবাসীরা প্রাণের টানে জড়ো হয়েছিলেন টোকিও এর শহীদ মিনার বেদীতে।
প্রবাসীদের সাথে প্রভাত ফেরিতে অংশ নিয়েছেন রাষ্ট্র দূত রাবাব ফাতিমা। দূতাবাস কর্মকর্তা কর্মচারী বৃন্দ এবং স্থানীয় প্রশাসন তোশিমা সিটি কর্পোরেশন এর প্রতিনিধি ডেপুটি মেয়র মির্যুশিমা মাসাহিকো এবং সংশ্লিষ্ট অন্নান্ন কর্মকর্তা বৃন্দ।
সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে রাষ্ট্রদূত এবং তোশিমা সিটি ডেপুটি মেয়র মাসাহিকো মির্যুশিমা শহীদ মিনার চত্বরে হাজির হয়ে শহীদ মিনার বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে দাঁড়িয়ে নীরবে শ্রদ্ধা জানান। এই সময় খন্দকার ফজলুল হক রতনের কণ্ঠের সঙ্গে সুর মিলিয়ে সকল প্রবাসী “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রয়ারি “গানটি পরিবেশই করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ -জাপান শাখা ও তার অঙ্গ সংগঠন সমূহ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল -জাপান শাখা ও তার অঙ্গ সংগঠন সমূহ, সার্বজনীন পূজা কমিটি জাপান, জাতীয় পার্টি -জাপান শাখা, বাংলাদেশ চেম্বার এন্ড কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজ ইন জাপান, মুন্সিগঞ্জ বিক্রমপুর সোসাইটি জাপান, কুমিল্লা এসোসিয়েশন জাপান, বৃহত্তর ফরিদপুর এসোসিয়েশন জাপান, বরিশাল এসোসিয়েশন জাপান, বৃহত্তর খুলনা সোসাইটি জাপান, বাংলাদেশ সাংবাদিক লেখক ফোরাম -জাপান, উত্তরণ বাংলাদেশ কালচারাল শিল্পী গোষ্ঠী , শহীদ পরিবার জাপান, স্বরলিপি কালচারাল একাডেমি টোকিও, প্রবাস প্রজন্ম, বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি -জাপান, ঢাকা ক্লাব জাপান, এন আরবি জাপান সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সমূহ, বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, সাপ্তাহিক, নিহন বাংলা ডট কম সহ বিভিন্ন প্রত্রপত্রিকার প্রতিনিধিগন সহ সর্বস্তরের প্রবাসীরা শহীদ মিনার বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।
ছবি বড় করে দেখতে ছবির উপর ক্লিক করুন
অনেকে ব্যক্তিগত ভাবে শহীদবেদীতে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদ দের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। প্রতি বছরের মতো এবারও বেদী পরিচালনায় ছিলেন কবি ও লেখক জুয়েল আহসান কামরুল এবং তাকে সহযোগিতা করে নুর খান রনি ও রাসেল মাঝি।
এছাড়াও বাংলাদেশ দূতাবাস যথাযোগ্য মর্যাদায় ২১শে ফেব্রূয়ারি দিবসটি পালন করে। রাষ্ট্রদূত কর্তৃক দূতাবাস প্রাঙ্গনে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্ধ নির্মিত করন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, ভাষা শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও বাংলাদেশের শান্তি, সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
দিবসটির তাৎপর্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত বাণীসমূহ পাঠ, রাষ্ট্রদূত কর্তৃক শুভেচ্ছা বক্তব্য, সমবেত কণ্ঠে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটি পরিবেশন, ভাষা আন্দোলন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ওপর প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন, মহান শহীদ দিবসের ইতিহাস এবং বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ইউনেস্কো কর্তৃক প্রচারিত ভিডিও প্রদর্শন এবং সবশেষে চা-চক্রের মধ্য দিয়ে দূতাবাস আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার সমাপ্তি ঘোষণা হয়
প্রতিবেদনঃ হাসিনা বেগম রেখা // ছবিঃ রাহমান মনি।