আনন্দ উচ্ছ্বাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে জাপানপ্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রাণের টোকিও বৈশাখী মেলা। ১৬ এপ্রিল রোববার টোকিওর প্রাণকেন্দ্র তোশিমা সিটির ইকেবুকুরো নিশিগুচি পার্কে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী এই মেলা প্রবাসী বাঙালিদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। নতুন বছরকে বরণ করতে ধর্ম-বর্ণ ও দল-মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের প্রবাসীরা এ মেলায় অংশগ্রহণ করেন। শুধু প্রবাসীরাই নয়, মেলায় স্থানীয় জাপানি অতিথি ছাড়াও বিভিন্ন দেশের নাগরিকেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
টোকিও সিটির নিশিগুচি পার্ক রোববার পরিণত হয়েছিল এক চিলতে বাংলাদেশে। মেলায় ছিল বাংলা খাবারের বাহারি স্টল। প্রবাসীরা এ সব স্টলের খাবার খান ও মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। বাংলাদেশে পয়লা বৈশাখ ১৪ এপ্রিল শুক্রবার পালিত হলেও দিনটি জাপানে কর্মদিবস হওয়ায় রোববার অর্থাৎ ১৬ এপ্রিল টোকিওতে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়।
প্রতি বছর জাপানের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি এবং তাদের সুহৃদদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে মেলা আর মেলাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। হয়ে উঠেছিল মহামিলন মেলায়। প্রবাসে বাংলাদেশ কমিউনিটি বাংলাদেশের জাতীয় দিবসগুলো নানাভাবে পালন করে থাকে। এর মধ্যে বৈশাখী মেলার ভিন্নতা রয়েছে। এ মেলায় দল-মত নির্বিশেষে সবাই অংশগ্রহণ করে থাকেন। এই একটি মাত্র আয়োজনেই সবাই একাকার হয়ে যান। ভুলে যান তাদের দলীয় মতামতের ভিন্নতা। আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই আনন্দে মেতে ওঠেন। বৈশাখী মেলা বাংলাদেশি বাংলাভাষীদের প্রাণের মেলা। মেলায় শিশু-কিশোরেরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে তাদের প্রতিভা বিকাশ ও প্রকাশে। তাদের জন্য বেশ কয়েকটি ইভেন্ট রাখা হয়।
মেলায় ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা যেন একটু বেশি। কিছুদিন আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হয় ক্রেতাদের সর্বোচ্চ দৃষ্টি আকর্ষণে। অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয় ক্রেতাদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার জন্য। তাই তো বৈশাখী মেলাকে ঘিরে প্রবাসীদের প্রাণ-চাঞ্চল্য বেড়ে যায়।
সকাল ১০টায় মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী ঘোষণা করা হয়। এবারের মেলাতেও ১০ হাজারেরও বেশিসংখ্যক দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। যার অধিকাংশই ছিলেন বাঙালি। বাকিরা স্থানীয় জাপানি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। আর এখানেই জাপান প্রবাসীদের সার্থকতা। জাপানপ্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত প্রায় প্রতিটি আয়োজনেই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জাপানি নাগরিকদের অংশগ্রহণ থাকে। আর এই সার্থকতা দেখে অভিভূত হন বাংলাদেশ থেকে আগত অতিথিরাও।
এবারের আয়োজন ছিল অষ্টাদশ বা ১৮তম আয়োজন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর একে একে শুরু হয় পরিচিতি পর্ব (মেলা পরিচালনা কমিটি, স্টল ও স্পনসরদের পরিচিতি), বড়দের উন্মুক্ত অনুষ্ঠান, ছোটদের চিত্রাঙ্কন (উন্মুক্ত), ছোটদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নাচ, গান, আবৃত্তি, অভিনয়, কৌতুক, যেমন খুশি সাজো ইত্যাদি। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে জাপানি নৃত্যদল কর্তৃক নৃত্য পরিবেশন ছাড়াও প্রথমবারের মতো স্বাস্থ্য ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় প্রশাসন তোশিমা সিটির ডেপুটি মেয়র। এ ছাড়া আরও কয়েকজন অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। মেলার স্পনসরদের পরিচিত করে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। বৈশাখী কনসার্টে উত্তরণ বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক দল, স্বরলিপি কালচারাল একাডেমির শিল্পীরা গান পরিবেশন করে। এবার দেশ থেকে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন সংগীতশিল্পী ইমরান, রেশমি ও কাইয়ুম। তাদের গান দারুণভাবে উপভোগ করেন দর্শকেরা। সবশেষে সমাপনী ঘোষণা দিয়ে শেষ হয় দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার।
মেলার প্রধান সমন্বয়ক ড. শেখ আলীমুজ্জামানের নেতৃত্বে একদল কর্মী ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন বৈশাখী আয়োজনকে সুন্দর ও সার্থক করতে। কমিটি, সাব কমিটিতে ভাগ হয়ে একাধিকবার আলোচনায় বসে নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে এই বৃহৎ মেলাকে সার্থক করে তোলেন।
ইকেবুকুরো নিশিগুচি পার্ক যে শুধু বৈশাখী মেলা প্রাঙ্গণ হিসেবে সুপরিচিত, তা কিন্তু নয়। এ মাঠেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বাঙালি জাতির গর্ব শহীদ মিনার। এই স্থানে বৈশাখী মেলার সফল আয়োজনের সাফল্যের ধারাবাহিকতা এবং মেলা কমিটির ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও টোকিওর বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় দেশের বাইরে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত প্রথম শহীদ মিনার। টোকিওর নিশিগুচি পার্কের শহীদ মিনারকে কেন্দ্র করেই বাঙালিদের বেশির ভাগ আয়োজন চলে। বাঙালিদের সকল অনুষ্ঠানের প্রাণকেন্দ্র এটি।
সুত্রঃ প্রথম আলো