শাহ মামুনুর রহমান তুহিন:
এনবিআর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ (আমদানি) বিধিমালা ২০১২ বাতিল করে নতুন বিধিমালা প্রণয়ন করেছে । নতুন বিধিমালায় ‘যাত্রী’ বলতে বিদেশ থেকে আসা কোনো যাত্রীকে বোঝানো হয়েছে।
নতুন বিধিমালা Tourist Baggage (Import) Rules, 1981 এবং Privileged Persons (Customs Procedures) Rules, 2003-এর আওতাভুক্ত যাত্রী ছাড়া সব যাত্রীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
এই বিধিমালার ব্যাখ্যায় ‘যাত্রী’ বলতে বিদেশ থেকে আসা কোনো যাত্রীকে বোঝানো হয়েছে। আর ‘ব্যাগেজ’ বলতে কোনো যাত্রীর মাধ্যমে আমদানিকৃত যুক্তিসঙ্গত পরিমাণের খাদ্যদ্রব্য, পরিধেয়, গৃহস্থালি বা অন্যান্য ব্যক্তিগত সামগ্রী বুঝানো হয়েছে, যার প্রত্যেকটি আইটেমের ওজন ১৫ কেজির বেশি হবে না।
নতুন বিধিমালার উল্লেখযোগ্য বিষয়
আকাশ ও জলপথে আসা ১২ বছর বা তার বেশি বয়সের যাত্রীর সঙ্গে আনা হাতব্যাগ, কেবিনব্যাগ বা অন্য কোনোভাবে আনা ব্যাগের ওজন যদি ৬৫ কিলোগ্রামের বেশি না হয়, তবে সেই ব্যাগেজ সব প্রকাশ শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়াই খালাসযোগ্য। অর্থাৎ, ৬৫ কিলোগ্রাম পর্যন্ত ব্যাগেজ শুল্ক ও করমুক্ত।
১. উপ-বিধি (১) উল্লেখিত ব্যাগেজের অতিরিক্ত ৩৫ কিলোগ্রাম পর্যন্ত ওজনের পরিধেয় বস্তু, ব্যক্তিগত ব্যবহারের সামগ্রী, বই, সাময়িকী ও পড়াশোনার সামগ্রী সকল প্রকার শুল্ক ও কর ছাড়াই খালাস হবে বা আনা যাবে।
২. ১২ বছরের কম বয়সী যাত্রীর ক্ষেত্রে ৪০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত ওজনের কার্টন, ব্যাগ বা বস্তায় আনা ব্যক্তিগত ব্যাগেজের জন্য কোনো প্রকার শুল্ক ও কর দিতে হবে না। তবে এই সুবিধা ছাড়া অন্য কোনো সুবিধা ১২ বছরের কম বয়সী যাত্রী পাবে না।
৩. যাত্রীর সঙ্গে আনা হয়নি এমন ব্যাগেজের (Unaccompanied Baggage) ক্ষেত্রে তফসিল-১-এ নির্ধারিত ফরমে ঘোষণা প্রদান এবং এই বিধিমালার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে সকল প্রকার শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়াই খালাস করা যাবে। তবে ব্যাগেজ খালাসের সময় ঘোষণাপত্রের একটি অনুলিপি সংশ্লিষ্ট কাস্টমস কর্মকর্তার কাছে দাখিল করতে হবে।
৪. এই বিধিতে ভিন্নরূপ যাই থাকুক না কেন, একজন যাত্রী তফসিল-৩-এ উল্লেখিত পণ্যের প্রত্যেকটির একটি (মোবাইল ফোন দুটি) করে পণ্য সকল প্রকার শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়াই এবং তফসিল-২-এ উল্লেখিত পণ্যের প্রত্যেকটির একটি করে পণ্য তফসিলে উল্লেখিত শুল্ক ও কর পরিশোধ করে আনতে পারবে।
৫. একজন বিদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী এক লিটার পর্যন্ত মদ বা মদজাতীয় পানীয় (বিয়ার, স্পিরিট ইত্যাদি) সকল প্রকার শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়াই আনতে পারবে।
৬. একজন যাত্রী তার পেশাগত কাজে ব্যবহারের জন্য সহজে বহনযোগ্য সব ধরনের যন্ত্রপাতি যেকোনো ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়াই আমদানি করতে পারবে।
৭. একজন যাত্রী ১০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের স্বর্ণালঙ্কার অথবা ২০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের রৌপ্যের অলঙ্কার
সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়াই আনতে পারবে। তবে এক প্রকার অলঙ্কার ১২টির বেশি আনা যাবে না।
৮. একজন যাত্রী বিদেশ থেকে দেশে আসার সময় ২৩৪ গ্রাম (২০ তলা) পর্যন্ত ওজনের স্বর্ণবার বা স্বর্ণপিণ্ড অথবা ২৩৪ গ্রাম (২০ তলা) ওজনের রৌপ্যবার বা রৌপ্যপিণ্ড সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়াই আনতে পারবে।
৯. স্থলপথে আসা একজন যাত্রী সর্বোচ্চ ৪০০ মার্কিন ডলার মূল্যের ব্যাগেজ সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়াই আমদানি করতে পারবে।
১০. আকাশ, স্থল বা জলপথে আসা একজন অসুস্থ, পঙ্গু বা বৃদ্ধ যাত্রীর ব্যবহারের জন্য চিকিৎসা যন্ত্রপাতি বা হুইল চেয়ার আনার জন্য কোনো ধরনের শুল্ক ও কর দিতে হবে না।
১১. এই বিধিমালায় যাই থাকুক না কেন, কোনো বাংলাদেশি নাগরিক বিদেশে মৃত্যুবরণ করলে তার ব্যাগেজ সব ধরনের শুল্ক ও কর থেকে অব্যাহতি পাবে।
১২. পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বিদেশ থেকে আগত বাংলাদেশি এয়ারলাইন্সে কর্তব্যরত কোনো বাংলাদেশি ক্রু বা কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশের কোনো বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনাকারী কোনো বিদেশি এয়ারলাইন্সে কর্তব্যরত কোনো বাংলাদেশি ক্রু বা কর্মকর্তা সর্বোচ্চ ৩০০ মার্কিন ডলার মূল্যের ব্যাগেজ সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়াই আমদানি করতে পারবেন।
১৩. বিদেশি সমুদ্রবন্দর থেকে আগমনকারী কোনো জাহাজের বাংলাদেশি নাবিক বা কর্মকর্তা সর্বোচ্চ ৩০০ মার্কিন ডলার মূল্যের ব্যাগেজ সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়াই আমদানি করতে পারবেন।
১৪. উপ-বিধি (২)-এ উল্লিখিত নাবিক বা কর্মকর্তা সাইন অফ (sing off) করলে তিনি অনূর্ধ্ব দুই হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের ব্যাগেজ আরোপযোগ্য সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধক্রমে আমদানি করতে পারবেন।
১৫. বিদেশ থেকে আগত যাত্রীবাহী বাসের চালক ও স্টুয়ার্ডদের (হেলপার বা এ্যাসিস্টেন্ট) পরিধেয় বস্ত্র, বিছানা (বেডিং) ও রন্ধনকৃত খাদ্যসামগ্রী এবং সর্বোচ্চ ৫০ মার্কিন ডলার মূল্যের ব্যক্তিগত ও গৃহস্থালি পণ্য সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়াই আমদানি করতে পারবেন।
১৬. কোনো যাত্রী শুল্ক ও কর আরোপযোগ্য পণ্য বহন না করলে তিনি বিমানবন্দরের গ্রিন চ্যানেল (যদি থাকে)
ব্যবহার করতে পারবেন।
১৭. গ্রিন চ্যানেল অতিক্রমকারী সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ যাত্রীর ব্যাগেজ দৈবচয়নের ভিত্তিতে কাস্টমস কর্মকর্তার মাধ্যমে স্ক্যানিং ও পরীক্ষা করা যাবে।
১৮. উপ-বিধি (১) ও (২)-এ যা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো কাস্টমস কর্মকর্তা, যুক্তিসংগত সন্দেহবশত গ্রিন চ্যানেল অতিক্রমকারী যেকোনো যাত্রীর ব্যাগেজ স্ক্যানিং ও পরীক্ষা করতে পারবেন।
সব যাত্রীর জন্য কাস্টমস ঘোষণাপত্রের বিধান করা হয়েছে। ব্যাগেজসংক্রান্ত নতুন বিধিমালা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করতে পারেন http://nbr.gov.bd/