Breaking News

নন্দিত এ আর রহমান, নিন্দিত বিসিবি

ঢাকা ডেস্ক: ভারতীয় নামকরা সংগীত পরিচালক এ আর রহমানের বাংলদেশে কনসার্ট করা নিয়ে কোন আপত্তি থাকবার কথা নয়। মেধা ও গুনে এ আর রহমান অনন্য এবং তার জনপ্রিয়তাকে অস্বীকার করা সংগীতকে খাটো করার শামিল, কোন বিবেকবান সংগীত প্রিয় মানুষতা করবেন না এটাই স্বাভাবিক।কিন্তু টিটুনেটি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও বিসিবি কনসার্টকে একসাথে গুলিয়ে ফেলা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এর মেধা ও যোগ্যতাকে অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এতবড় একটি আয়োজনের গুরুত্বের কথা বেশিভাবে চিন্তা না করে বাণিজ্যিক সাফল্যর কথাইবিসিবি বেশি ভেবেছে বলেই আমার ধারনা।টিকিটের মূল্য দেখে তা আরও সহজে অনুমান করা যায়।এবিষয়েসামাজিক গণমাধ্যম গুলোতেও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিশেষ ভাবে জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলসকে মঞ্চে না পাওয়া, বাংলাদেশের ব্যান্ডদের জন্য নির্ধারিত মাত্র ২০ মিনিট করে সময় বেধে দেওয়া, সউলস, এলারবিএর মতো স্বনামধন্য ব্যান্ডকে প্রধান শব্দ যন্ত্র ব্যবহার করতে না দেওয়া, বাংলদেশি শিল্পীদের নানাভাবে অবহেলা করা ইভেন্ট সংগঠক গ্রে এর ভূমিকা ও দায়িত্বকে চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধকরে। নিজের দেশের সংগীতকে তুলে ধরতে এত কার্পণ্য কেন? ভারতীয় শিল্পীদের পরিবেশনার সময় আলোকসজ্জা ও প্রোজেক্টর এর যে জমকালো ব্যবহার ছিল তা বাংলাদেশি ব্যান্ড এর ক্ষেত্রে বেশ গৌণ ভাবেই ব্যবহার হয়েছে বলে আমার ধারনা।এসকল বিষয় বিসিবির অবশ্যই আগে থেকে ইভেন্টসংগঠক গ্রে এর সাথে কর্ম ও অনুষ্ঠান পরিকল্পনা বিষয়ক তদারকি সভায় ফয়সালা করার দরকার ছিল।আমার মতে উদ্বোধনী ও কনসার্ট দুটি আলাদা আলাদা দিনে আয়োজন করলে ভাল হতো। এতে করে দুটি বিষয়ই নিজ নিজ গুরুত্বে পরিবেশিত হতো এবং আয়োজকরা এধরনের সমালোচনা থেকে মুক্ত থাকতে পারতো অনেকটা। কনসার্ট, সেটা বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন ভাষাভাষী শিল্পীদের পরিবেশনায় হতে পারে। কিন্তু বিশ্বকাপের উদ্বোধন এরমতো গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান নিয়ে এধরনের খামখেয়ালিপনা একবারেই মেনে নেওয়া যায় না। পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে ছিলো হিন্দিগানের প্রাধান্য। মাঝেমাঝে মনে হয়েছে, হটাৎ টেলিভিশন সেটের সামনে এসে বসলে যে কারো বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা অনুষ্ঠানটি কি ভারতে না বাংলাদেশে হচ্ছে।হতাশ হয়ে অনেক নামীদামী শিল্পীকেকটূক্তি করতে দেখা যাচ্ছে ফেসবুক ও টুটারে। শিল্পী তাহসান তারফ্যান পেজে বলেছেন, “এমন এক দেশে জন্মেছি যেদেশে কেউ লিজেন্ড হয়না, আজ আবার তা প্রমাণ করলাম।”আসলেকিতাই, রুনালায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, কুমারবিশ্বজিৎ, এরা কি লিজেন্ড নয়? আসলে তাহসান তার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এভাবেই। এই ক্ষোভ আপনার আমার বিরুদ্ধে যে নয় তা বুঝতে বিসিবির অসুবিধা হবার নয়।

বাংলাদেশের বুকে ICC T20 World cup 2014 অনুষ্ঠিত হবে এটা অবশ্যই একটি গর্বের বিষয়। ক্রিকেট পাগল বাংলাদেশিদের জন্য অবধারিত ভাবে ভীষণ একটি পাওয়া। তেমনি ভাবে রাষ্ট্র তথা সরকারের জন্যও বাংলাদেশকে সারা বিশ্বে সহজেই পরিচিত করার এক সহজ মাধ্যম হতে পারত বৃহস্পতিবারের বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম।ক্রিকেটের এই বিশাল আসরে অংশগ্রহণ করছে ১৬টি দেশ যার সর্বমোট জনসংখ্যা প্রায় ১৮৭০.৪৪৩মিলিয়ন বা ১৮৮ কোটি (বিশ্ব ব্যংক ২০১২ এর হিসাব মোতাবেক)।এই ১৬টি ক্রিকেট দল প্রতিনিধিত্ব করছে বিশ্ব জনসংখ্যায় প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষের। এমনবৃহৎ একটি আয়োজন ও তার গুরুত্বমাথায় রেখে বাংলদেশকে বিশ্বের কাছে আরও উপযুক্ত ভাবে তুলে ধরতে পারত বিসিবি। বাংলদেশের সংস্কৃতি, শিল্প ও রপ্তানিমুখী ব্যবসার তথ্য বিনোদনের মাধ্যমে তুলে ধরে বাংলদেশকে আন্তর্জাতিক ভাবে পরিচিতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে বিশেষ সহায়ক ভূমিকাও রাখতে পারত বিসিবি। বাংলাদেশি সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে একদমই বার্থ হয়েছে বিসিবি।

ফটো সাংবাদিকদের মাঠে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি অনুষ্ঠানের ছবি তোলার জন্য। আয়োজকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা করার পর গ্যালারি থেকে তাদের ছবি তোলার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। আরও জেনে খারাপ লাগল রিপোর্টারদের জন্য সংবাদ লেখার ন্যূনতম ব্যবস্থাও করেনি বিসিবি। প্রেস বক্সে সাংবাদিকদের জন্য বসার কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। বিসিবির নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর নাকিব লেছেন, ‘এ অনুষ্ঠানে নিউজ করার কিছুই নেই। আপনাদের জন্য গ্যালারিতে বসার ব্যবস্থা করা হয়ছে, সেখানেই বসতে হবে।’একথা লিখেছেন, আমার দেশের রিপোর্টার কবিরুল ইসলাম। আমিও হতবাক হলাম, বিসিবির বরং উচিত ছিল দেশ ও আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে আমন্ত্রণ করা,বাংলাদেশের এই আয়োজনকে বিশ্বের কাছে প্রচারে সাহায্য করা।
বাংলাদেশের ক্রিকেট অর্জন উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া নয়, কিংবা কারো দান খয়রাতে বদলতে পাওয়া নয়। বাংলার টাইগাররা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে এ সুনাম অর্জন করেছে।আর এতে সাহায্য করেছে কিছু ক্রিকেট প্রেমী সংগঠক।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিন চার জন মন্ত্রী বিনা কারণে যতোই বক্তৃতা দেন কেন, বাংলাদেশের ক্রিকেট এ রাজনীতির তেমন কোন অবদান কখনই ছিলনা।বরং বর্তমানের রাজনীতিই ক্রিকেট অঙ্গনকে কলঙ্কিত করছে। এসবের দায়দায়িত্ব কোন ভাবেই বিসিবি এড়িয়ে জেতে পারেনা। এধরনের নৈতিক ও আদর্শগত ভুল বিসিবি শুধরে নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এটাই চাওয়া।

গোলাম মাসুম (জিকো)
সম্পাদক
নিহনবাংলা.কম

About admin

Check Also

কিউশুতে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় দুর্যোগের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে

 জাপানের কিউশুতে বুধবার প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত আবারও আঘাত হানছে। অব্যাহত বৃষ্টিপাত ভূমির উপরিভাগ আলগা করে দেয়ায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *