গত বিশ্বকাপেও কলম্বিয়ার সঙ্গে ১-৪ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিলো জাপান। সেই কলম্বিয়াকেই ‘ব্লু সামুরাই’ হারিয়েছে ২-১ গোলে। বিশ্বকাপে লাতিন দলগুলোর বিপক্ষে জয় ছিল না ফুটবলে পিছিয়ে থাকা এশিয়ানদের। লাতিনদের সঙ্গে না পারার অগৌরবও মিটেছে তাতে। জাপানি তারকা কেইসুকি হোন্ডা গর্বিত ছিলেন এ জন্য, ‘জাপান কাউকে ভয় পেয়ে খেলে না। মাঠে খেলে চোখে চোখ রেখে। ’ সেটা প্রমাণ করতেই যেন সেনেগালের বিপক্ষে নেমেছিলেন হোন্ডা। আফ্রিকান দলটির বিপক্ষে দুইবার পিছিয়ে পড়ে তারা। বদলি হয়ে নেমে হোন্ডার গোলে মাঠ ছাড়ে ২-২ সমতায়। এই বিশ্বকাপের অন্যতম রোমাঞ্চকর ম্যাচ উপহার দিয়েছে জাপান। নক আউট পর্বে জাপানই এবার এশিয়ার একমাত্র প্রতিনিধি। সেটা আবার পোল্যান্ডের বিপক্ষে। জটিল সমীকরণ মেটাতে ০-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়া জাপান গোল হজম করতে চায়নি আর। দেখতে চায়নি হলুদ কার্ডও। শেষ ১০ মিনিট একপ্রকার বল দেওয়া-নেওয়া করেছে নিজেদের মধ্যে। এ নিয়ে নিজেই অনুতপ্ত কোচ আকিরা নিশিনো। তবে নক আউটে ‘সত্যিকার’ জাপানি ফুটবলের প্রতিশ্রুতি তাঁর, ‘আমার নিজেরই খারাপ লাগছিল ছেলেদের মাঠে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে। ৪-১-৪-১ ছকে রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলি না আমরা। কিন্তু আর একটা গোল বা হলুদ কার্ডে বিদায় নিতে পারতাম। এর চেয়ে নক আউটে যাওয়া ভালো। সেখানে আসল জাপানকে দেখবে সবাই। ’
এশিয়ার আরেক দল দ. কোরিয়া ছিটকে গেছে গ্রুপ পর্ব থেকে। তবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে ২-০ গোলে হারানোটা শুধু দক্ষিণ কোরিয়ার নয়, গর্ব এশিয়ারই। কারণ বিশ্বকাপে এশিয়ান দলগুলো এত দিন ‘পুঁচকেই’ ছিল জার্মানির কাছে। তাদের বিপক্ষে পাঁচবারের দেখায় সব ম্যাচ হেলায় জিতেছে চারবারের চ্যাম্পিয়নরা। পাঁচ ম্যাচে জার্মানরা গোলই করেছে ১৯টি। এবার বদলে গেল পাশার দান। নিজেদের বাঁচা-মরার ম্যাচটা হেরে বিকল জার্মান মেশিন। ২০০২ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলা কোরিয়ানরা হয়তো বিদায় নিয়েছে; কিন্তু আজীবন গল্প করার মতো কীর্তি গড়ে ফিরবে দেশে।
গ্রুপ ‘ডি’ থেকে আর্জেন্টিনা নক আউটে উঠেছে ৪ পয়েন্ট নিয়ে। গ্রুপ ‘বি’তে সমান ৪ পয়েন্ট নিয়েও বাদ এশিয়ার আরেক দল ইরান, স্রেফ দুর্ভাগ্য। তবে দাগ কেটে থাকবে ইরানের বীরত্ব। মরক্কোর বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে নির্ধারিত ৯০ মিনিট পর্যন্ত সমতা ছিল গোলশূন্যতে। ৯৫তম মিনিটে আত্মঘাতী গোলে জয় পায় তারা। এই জয়ে বাড়ে আত্মবিশ্বাসের পারদ। পরের ম্যাচে স্পেনকে প্রায় আটকেই দিয়েছিল ইরান। কিন্তু ডিয়েগো কস্তার ভাগ্যপ্রসূত গোলে হারতে হয় ম্যাচটা। ৬২ মিনিটে ইরানের সাঈদ এজাতোলাহি বল জালে জড়িয়ে মেতেছিলেন উল্লাসে। সঙ্গে পুরো দল। সেটা মিলিয়ে যায় কয়েক সেকেন্ড পর! ভিএআরে রেফারি নিশ্চিত হন অফসাইড ছিলেন এজাতোলাহি। বীরের মতো খেলেও বুক ভাঙে ইরানের। তবে হেরেও গর্বিত ইরানি কোচ কার্লোস কুইরোজ, ‘আমি নিশ্চিত সমর্থকরা গর্বিত এমন পারফরম্যান্সে। ’
পরের ম্যাচে পর্তুগালকেও কাঁদিয়ে ছেড়েছিল ইরান। মাঠ ছাড়ে ১-১ সমতায়। ইনজুরি টাইমের পেনাল্টিতে সমতা ফেরানোর পর ৯৪তম মিনিটে গোলরক্ষককে একা পেয়ে গিয়েছিলেন ইরানের একজন। অতি উত্তেজনাতেই সেটা মারেন বাইরে। তাতেই বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যায় ইরান। গ্রুপের অন্য ম্যাচে মরক্কোর বিপক্ষে ভিএআরে স্পেন ৯২তম মিনিটে গোল না পেলে নক আউটে যেত ইরানই।
এশিয়ার অংশ হয়ে বিশ্বকাপ খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। কঠিন গ্রুপে পড়লেও শেষ পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখেছিল নক আউটের আশা। শুরুটা ফ্রান্সের কাছে ১-২ গোলে হেরে। এরপর ডেনমার্ককে ১-১ গোলে রুখে দেওয়া। পরের ম্যাচে পেরুকে হারালেই সুযোগ তৈরি হতো নক আউটে যাওয়ার। চাপ সামলাতে না পেরে সেই ম্যাচে হেরে বসে ০-২ গোলে। সৌদি আরব উদ্বোধনী ম্যাচে বিধ্বস্ত হয়েছিল ০-৫ গোলে। গত ৩০ বছরে ৪০ জন কোচ বদলানো দলটির ফেডারেশন তখনই দিয়ে বসে খেলোয়াড়দের শাস্তির হুমকি। কাজ হয় কিছুটা। পরের ম্যাচে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ের কাছে মাত্র ০-১ গোলে হারে সৌদি আরব। শেষ ম্যাচে প্রতিপক্ষ আরেক আরব দেশ মিসর। মোহামেদ সালাহদের বিপক্ষে সেই ম্যাচে সৌদির ‘আরব্য রজনী’। জয় পায় ২-১ গোলে। অথচ শঙ্কা ছিল বিশ্বকাপটা গোলহীন কাটার। সেই সৌদি আরব ১৯৯৪ বিশ্বকাপের পর মর্যাদার টুর্নামেন্টটিতে পেয়েছে প্রথম জয়। তাই মাথা উঁচু করেই দেশে ফিরেছেন খেলোয়াড়রা।
তথ্য সূত্র: কালের কন্ঠ।
Check Also
১৫ই আগষ্ট আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন জাপানি নভোচারী ফুরুকাওয়া
জাপানের নভোচারী ফুরুকাওয়া সাতোশির দ্রুত হলে ১৫ই আগষ্ট আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে দ্বিতীয় ভ্রমণ নির্ধারণ করা …