শাহ মামুনুর রহমান তুহিন:
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পরপর পাকিস্থান থেকে ঔষধ আসা বন্ধ হয়ে গেলে খাদ্য ও বস্ত্রের সঙ্গে ভয়াবহ ঔষধ সংকটে পড়ে বাংলাদেশ। মাত্র ২০ শতাংশ ঔষধ তৈরি হতো তখন বাংলাদেশে। সদ্য স্বাধীন দেশে ডলারের রিজার্ভও শূন্য। সে কারনে ইউরোপ, আমেরিকার বহুজাতিক ঔষধ কোম্পানিও ঔষধ দিতে রাজি হয়নি। কিন্তু সেই দুঃসময়ে শর্তসাপেক্ষে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিলো পূর্ব ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরি। সেখানকার ঔষধ সংস্থা ইগিস, গেইডেন, রিখটার কাইরন, মেডিম্পেস বাংলাদেশে বার্টার সিস্টেমে বা পণ্যের বিনিময়ে ঔষধ সরবরাহে রাজি হয়। হাঙ্গেরিতে বাংলাদেশের পাট আর অন্যান্য কাঁচা পণ্যের বিনিময়ে আসা শুরু হয়েছিল ঔষধ। এর পর ধীরে ধীরে ঔষধ উৎপাদন শুরু হয় বাংলাদেশে। স্বাধীনতা পরবর্তি দেশে অনেক ঔষধ আমদানি করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ ঔষধ আমদানি করা হচ্ছে।
বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে ১৫৭ দেশে যাচ্ছে বাংলাদেশের ঔষধ। সবথেকে বেশি ঔষধ রফতানি হচ্ছে মায়ানমারে। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স, সুইডেন, ইতালি, কানাডা, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরব, ইরান, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিসর, মরক্কো, আলজেরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে আমাদের দেশের ঔষধ। এর অন্যতম কারন, মূল্য প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছে বাংলাদেশের ঔষধ । যে কারণে রফতানির পরিমাণও বাড়ছে। বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশের ৫৩ কোম্পানির তৈরিকৃত ঔষধ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রমতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭১৪ কোটি টাকার ওষুধ রফতানি খাতে আয় হয়। আরও বিগত ছয় বছরে অর্থাৎ ২০১১-২০১৭ অর্থবছর পর্যন্ত মোট রফতানি আয় হয়েছে ৩ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১১-১২ অর্থবছরে আয় ছিলো ৩৮৬ কোটি টাকা, ২০১২-১৩ অর্থবছরে রফতানি আয় ছিলো ৪৭৮ কোটি টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আয় ছিলো ৫৫৪ কোটি টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আয়ের পরিমাণ কিছুটা কমে হয় ৫৪১ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আয় হয় ৬৫৭ কোটি টাকা ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ওষুধ রফতানি করে আয় করে ৭১৪ কোটি টাকা।
ইতিমধ্যে দেশের কয়েকটি ঔষধ কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ঔষধ রফতানির অনুমোদন পেয়েছে। এর ফলে উন্নত বিশ্বে বাংলাদেশের তৈরি ঔষধ রফতানির দরজা আরো বিস্তৃত হবে।