অবশেষে একটি সফল সমাপ্তি ঘটলো বিশ্বকাপ উত্তেজনার। তবে এই বিশ্বকাপে কিছু ঘটনা পরিক্রমা ছিলো সারা বিশ্বের নজরকাড়া,বিশ্বকাপের বাইরে যিনি সবথেকে বেশী নজর কেড়েছেন, তিনি আর কেউ নন ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট অনিন্দ্য সুন্দরী কোলিন্দা গ্রাবার। সোশ্যাল মিডিয়া, নিউজ মিডিয়া, ইউটিউব এমনকি চায়ের আড্ডায় ও গ্রাবার। শুধুমাত্র তারই কারনে ক্রোয়েশিয়ার সমর্থক বেড়েছে অনেকগুন। ফ্রান্স বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলেও টি আর পি সবথেকে বেশী ক্রোয়েশিয়ার। তবে সত্যিই বীরের মতো লড়েছে ক্রোয়্যেশিয়া। কিন্তু কালকের দিনটি তাদের ছিলোনা। বিশ্বের মানুষের কাছে অনেক উপভোগ্য ছিলো গতকালের ম্যাচ। টানা তিনটি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন বিদায় নিয়েছিলো গ্রুপ পর্ব থেকে। তরুণ এই ফরাসি দলের সামনে চার বছর পর কাতার বিশ্বকাপে বড় সম্ভাবনার পাশাপাশি থাকল তাই চ্যালেঞ্জও। মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়ামে রোববার রাতে ৪-২ গোলে জিতেছে দিদিয়ের দেশমের দল।
মারিও মানজুকিচের আত্মঘাতী গোলে ফ্রান্স এগিয়ে যাওয়ার পর সমতা ফিরিয়েছিলেন ইভান পেরিসিচ। প্রথমার্ধেই পেনাল্টি থেকে ফ্রান্সকে আবার এগিয়ে দেন অঁতোয়ান গ্রিজমান। দ্বিতীয়ার্ধে দারুণ দুই গোলে ব্যবধান বাড়ান পল পগবা ও কিলিয়ান এমবাপে। গোলরক্ষক উগো লরিসের মারাত্মক ভুলে বল জালে পাঠিয়ে ক্রোয়েশিয়াকে আশা দেখিয়েছিলেন মানজুকিচ। তবে নক-আউট পর্বের আগের তিন ম্যাচের মতো শেষ পর্যন্ত আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ক্রোয়াটরা। শুরু থেকে বল দখলে রেখে আক্রমণে এগিয়ে ছিল ক্রোয়েশিয়া। তবে ভালো কোনো সুযোগ তৈরি হয়নি। খেলার ধারার বিপরীতে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ১৮তম মিনিটে ডি-বক্সের অনেক বাইরে থেকে গ্রিজমানের ফ্রি-কিক হেডে বিপদমুক্ত করতে চেয়েছিলেন সেমি-ফাইনালের জয়সূচক গোলদাতা মানজুকিচ। বল তার মাথায় ছোঁয়া লেগে জালে ঢোকায় কিছুই করার ছিল না গোলরক্ষক দানিয়েল সুবাসিচের। বিশ্বকাপের ইতিহাসে ফাইনালে এটাই প্রথম আত্মঘাতী গোল।
নক-আউট পর্বের তিনটি ম্যাচেই আগে গোল খেয়ে ম্যাচে ফিরেছিল ক্রোয়াটরা। এবারও ফিরতে দেরি হয়নি। ২৮তম মিনিটে ডি-বক্সের ভেতর থেকে দুর্দান্ত শটে গোল করেন পেরিসিচ। ফ্রি-কিক থেকে ডি-বক্সে আসা বল জটলা থেকে দোমাগোই ভিদা কাটব্যাক করেছিলেন। ডান পা দিয়ে বল আয়ত্তে নিয়ে বাঁ পায়ের জোরালো শটে লরিসকে ফাঁকি দেন সেমি-ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও সমতা ফেরানো পেরিসিচ। টুর্নামেন্টে এটি এই মিডফিল্ডারের তৃতীয় গোল। দশ মিনিট পর আবার এগিয়ে যায় ফ্রান্স পেনাল্টি থেকে। কর্নার থেকে ডি-বক্সে আসা বলে লেগেছিল পেরিসিচের হাতের ছোঁয়া। রেফারি মাঠের বাইরে গিয়ে ভিডিও রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত দেন স্পট-কিকের। ঠাণ্ডা মাথায় টুর্নামেন্টে নিজের চতুর্থ গোলটি করেন গ্রিজমান। ছয় মিনিট পর দুর্দান্ত গোলে ব্যবধান আরও বাড়ান এমবাপে। বাঁ দিক থেকে লুকা এরনঁদেজের পাসে প্রায় ২২ গজ দূর থেকে নিচু শটে করেন টুর্নামেন্টে তার চতুর্থ গোল। পেলের পর প্রথম টিনএজার হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল পেলেন ১৯ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড।
এরপরই লরিসের মারাত্মক ভুল। ব্যাকপাসে বল পেয়ে অযথা এগিয়ে আসা মানজুকিচকে কাটাতে চেয়েছিলেন। পারেননি, মানজুকিচের বুটের টোকায় বল চলে যায় জালে। নির্ধারিত সময় শেষের তখনও ২১ মিনিট বাকি। আশা জাগে ক্রোয়াট শিবিরে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর ইতিহাস গড়া হয়নি মদ্রিচ-রাকিতিচদের।
এরপর ক্রমেই বাড়তে থাকা বৃষ্টির মধ্যে কেবল অপেক্ষা; সান্ত্বনার রূপার পদক গলায় ঝোলানোর জন্য ক্রোয়াটদের। ট্রফি উঁচিয়ে ধরার জন্য মধুর অপেক্ষা ফরাসিদের। প্রায় ছয় কেজি ওজনের সোনার ট্রফিটা হাতে পেতেই উড়ল বুনো উল্লাসে মেতে উঠল ফ্রান্সের তরুণরা। বৃষ্টিতে আতশবাজির ডিসপ্লে তেমন ফুটল না, কিন্তু ভেজা মাঠে আনন্দ যেন বহুগুণে বেড়ে গেল শিরোপাজয়ীদের। শুধু সেখানেই নয়, সারা পৃথিবীতে ফ্রান্সের ভক্ত সমর্থকরা ফেটে পড়লো আনন্দে।