অনলাইন ডেস্ক: রমজান মাস আসার আগেই দেশের বাজারে প্রতিদিন বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। এ নিয়ে অনেকটা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সাধারণ মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে বিশেষ করে পেঁয়াজের ঝাঁঝ দিন দিন বেড়েই চলছে। বাংলাদেশের পেঁয়াজের দাম নিয়ে কলকাতার জনপ্রিয় পত্রিকা আনন্দবাজার একটি প্রতিবেদন করেছে। অমিত বসুর করা প্রতিবেদনটির শিরোনাম ‘বাংলাদেশে পেঁয়াজের দামে এত ঝাঁঝ কোন যুক্তিতে?’ পরিবর্তন পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনটি হুবহু তুলে ধরা হল :
ভারতের পেঁয়াজ বাংলাদেশে যাচ্ছে আট টাকা কেজি দরে। বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। খুচরো বিপণনে দাম বেশি হয়। তাই বলে তফাৎ এতটা! কেনা দামের চার গুণ! শুল্ক মূল্য ধরে ১৬ টাকাই ঠিক ছিল। কলকাতায় এখন ১৬ টাকাই কিলো। এক সময় পেঁয়াজ ৮০ থেকে ১০০ টাকায় উঠেছিল। টাস্ক ফোর্সও টেনে নামাতে পারেনি। পেঁয়াজের ঝাঁঝে অস্থির মানুষ পেঁয়াজ না খাওয়ার সংকল্প নিয়েছিল। পেঁয়াজের ফাটকাবাজি রোখা খুবই কঠিন। তার ওপর ফলন কম হলে তো হয়েই গেল। গোটা ভারতে শুধু নয়, বিদেশেও পেঁয়াজ যোগায় মহারাষ্ট্রের নাসিক। সেদিকে তাকিয়ে থাকতে হয় পেঁয়াজের আশায়। তারা ডোবালে ভাসাবে কে। বাংলাদেশে যে পেঁয়াজ হয় তার সাইজ ছোট। মশলাদার ভারী রান্নায় চলে না। দরকার নাসিকের পেঁয়াজ। খুদে পেঁয়াজের দামও বেশি। ৪৫ টাকা কেজি। উৎপাদন ভাল। বছরে চাহিদা ২২ লাখ টন। বাংলাদেশের উৎপাদন ১৭ লাখ টন। এ বছর আমদানি পাঁচ লাখ টন। যোগান যথেষ্ট হওয়া সত্ত্বেও কিনতে গিয়ে হাত পুড়ছে।
রমজানে পেঁয়াজের চাহিদা বাড়বে। তার আগেই ১০ শতাংশ দাম বৃদ্ধি। আগেভাগে দাম বাড়িয়ে মুনাফার গ্যারান্টি। রসুনও নাগালের বাইরে। বাংলাদেশের রসুন ১০০ টাকা কিলো। চিনের রসুন ২০০। দামের ফারাক গুণগত কারণে। তা হলেও, চিনের রসুন এতটা ওপরে উঠবে কেন। চিন থেকে আমদানি ১৩০ টাকায়। সেখানেও যুক্তি, পেঁয়াজের চেয়ে রসুনের বিক্রি কম। এক কেজি পেঁয়াজ নিলে রসুন নেয় ১০০ গ্রাম। এত কম বিক্রিতে দাম একটু বেশি না হলে নাকি চলে না। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথায় কে পারবে। তারা বাজারে নামে কোমর বেঁধে। ক্রেতারা শরমে মরে। ঢাকা-কলকাতা বাজার দরে খুব একটা তফাৎ নেই। কেনা মানে জ্বলন্ত আগুনে হাত দেওয়া। বাঙালি ঝাল খেতে ভালবাসে। তার ওপরও কোপ। লঙ্কা ক’দিন আগে ছিল ৬০, এখন ১৪০। লঙ্কা হয় মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। বৃষ্টি নেই, সেচ নেই। গাছ শুকিয়েছে। লঙ্কার ঝালও বেড়েছে। আলু ১৪ থেকে এক লাফে ২৮। বেগুন, ঝিঙে ৪০। টমেটো, উচ্ছে ৫০। পটল, ঢেঁড়শ ৩০। মুরগির কেজি ১৯০, রুই ১৬০, কাতলা ২০০। গরমে লাইম ওয়াটার খাওয়ার উপায় নেই। পাতিলেবু ৪ টাকা। দাম আর দম দুই-ই বাড়ছে আদার। কেজি ১২০। ঢাকাতে দাম উনিশ-বিশ।
রমজানে সবচেয়ে বেশি দরকার ডাল, ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, খেজুর। তাদের দেমাক দেখে কে। খেজুরের মেজাজ বোঝা দায়। ১২০ থেকে বেড়ে ৩০০। চাহিদা ১৫ হাজার টন। আমদানি ২০ হাজার টন। টান পড়ার কথা নয়। তাতেও আয়ত্বের বাইরে। মসুর ডালের উৎপাদন ২ লাখ ৬০ হাজার টন। আমদানি ১ লাখ ৩৬ হাজার টন। চাহিদা ৩ লাখ টনের বেশি। উপযুক্ত সরবরাহ সত্ত্বেও দামে আগুন। আন্তর্জাতিক বাজারে কেজি ৬৮, বাংলাদেশে ১৫৫। ছোলা ৭৫ থেকে বেড়ে ৮৫। অবস্থা সামাল দিতে মাঠে নেমেছে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবি। রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্য তারা বিক্রি করবে ১৭৪টি ট্রাকে। ন্যায্য দামে মিলবে প্রয়োজনীয় সব কিছুই। তা না হয় হল। বাজার কী চড়তেই থাকবে। পকেট কাটা বন্ধ হবে না। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েও পার পাবে। এখনও পর্যন্ত একটাই সান্ত্বনা, ভোজ্য তেলের দাম বাড়েনি। শুধু তেলে তো রান্না হয় না। আরও যে অনেক কিছু চাই।