১৪ ঘণ্টার সফরে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো মঙ্গলবার ঢাকায় এসেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখতে চায় জাপান সরকার । একই সঙ্গে বাংলাদেশে থাকা জাপানি নাগরিক এবং দেশটির বিনিয়োগের সুরক্ষাও চায় টোকিও। এ সময় বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে বলেও দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। বাংলাদেশের তরফে তার কাছে দু’টি বিষয় চাওয়া হয়েছে তা হলো- হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় ভয়াবহ এবং নারকীয় সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে বাংলাদেশ ভ্রমণে জাপানি নাগরিকদের প্রতি দেশটির সরকার যে নিরাপত্তা সতর্কতা জারি রেখেছে তা শিথিল করা। দ্বিতীয়ত: সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বাত্মক লড়াইয়ে (অল অ্যাফোর্ট ফাইট) টোকিও’র আরো ঘনিষ্ঠ সহায়তা। জাপানের মন্ত্রী এ দুটি বিষয়েই ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করে গেছেন। মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশে আসা জাপানি মন্ত্রী তারো কোনো রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে তার দেশের তরফে ৫ দফা প্রস্তাব দিয়ে গেছেন। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে। উভয় বৈঠকেই তিনি টোকিও’র আকাঙ্ক্ষা ও অবস্থান তুলে ধরেন। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নে পাশে থাকা জাপান এখানে আরো বেশি বিনিয়োগ করতে চায়। কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে জাপানি সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন মাতারবাড়ি প্রকল্পের আশপাশের এলাকাগুলোতেই তারা বিনিয়োগে আগ্রহী। সেটি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে জানিয়েছেন মন্ত্রী তারো কোনো। বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- জাপানি মন্ত্রীর সফরটি সংক্ষিপ্ত হলেও এটি অত্যন্ত সফল এবং কার্যকর ছিল। কারণ সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে জাপান এই মুহূর্তে কি ভাবছে তা তিনি স্পষ্ট করে গেছেন। এ সফরের মধ্য দিয়ে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের কাতারে শামিল হতে যাওয়া বাংলাদেশের সঙ্গে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক যে আরো বিস্তৃত এবং গভীর করতে চায় জাপান সেটিও খোলাসা হয়েছে। এক কূটনীতিক বলেন- জাতীয় নির্বাচনের আগে এবং পরে বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিশেষত: রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চেয়ে জাপানের একান্ত চাওয়া সেটি স্পষ্ট করেছেন মন্ত্রী।
একই সঙ্গে তিনি আরো বেশি জাপানি বিনিয়োগের ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের কাছে দু’টি বিষয়ে সমর্থন চেয়েছেন। প্রথমত জাপান এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক গ্রুপ থেকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য (অস্থায়ী) ২০২৩-২০২৪ মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছে। চলতি মেয়াদে জাপানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বাংলাদেশ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য পদ থেকে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। ফলে জাপান এ অঞ্চল থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য নির্বাচিত হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো তার এবারের সফরে ফের বাংলাদেশের সমর্থন চেয়েছেন। দ্বিতীয়ত ওয়ার্ল্ড এক্সপো-২০২৫ এ জাপান, রাশিয়া এবং আজারবাইজান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। নভেম্বরের মধ্যে ওই ভোটাভুটি হবে। এতেও বাংলাদেশের সমর্থন চেয়েছেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে ঢাকা দুটি নির্বাচনে সমর্থন প্রশ্নে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানা গেছে।
তথ্য সূত্র: মানব জমিন