আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গ্রেট খেলোয়াড়দের সঙ্গেই উচ্চারিত হবে তিলকারত্নে দিলশানের নাম। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং, উইকেটকিপিং, অধিনায়কত্ব সব দিক দিয়েই শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের সেবা করে গেছেন তিনি। দলের জন্য সর্বস্ব নিংড়ে দিয়েছেন দিলশান। কিন্তু একটা সময় তো সবাইকেই বিদায় বলতে হয়; থামতে হয়। অন্য অনেকের মতোই থামলেন তিনিও। কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনের মতো তারকাদের ভিড়ে অনেকটা লাইমলাইটের বাইরেই ছিলেন দিলশান। তবে অনেকটা নীরবে-নিভৃতে নিজের কাজটা ঠিকই করে গেছেন তিনি; জায়গা করে নিয়েছেন শ্রীলঙ্কা এবং বিশ্বক্রিকেটের সেরা ব্যাটসম্যানদের কাতারে। পরিসংখ্যান অন্তত সেই কথাই বলছে।
শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ম্যাচ টি-টুয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয় শ্রীলঙ্কা। সেই ম্যাচ দিয়েই শ্রীলঙ্কার দিলশান-অধ্যায়ের ইতি ঘটলো। নিজের বিদায়ী ম্যাচে ৩ বলে মাত্র ১ রান করে আউট হন দিলশান। বিদায়ী ম্যাচের সংগৃহীত রানের সংখ্যা ক’জনই বা মনে রাখে? ডন ব্রাডম্যান নিজের বিদায়ী ইনিংসে তো শূন্য রানেই আউট হয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণ ঘটে দিলশানের। দীর্ঘ ১৭ বছর পর ৩৯ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন তিনি। ক্যারিয়ারের শুরুতে মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান ছিলেন এই লঙ্কান ব্যাটসম্যান। তবে টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে যখন তাকে ওপেনিংয়ের খেলার প্রস্তাব দেয়া হয় তখন সেটি নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবেননি তিনি। মিডলঅর্ডার পজিশনের চেয়ে ওপেনিংয়ে সফল ছিলেন দিলশান।
২০০৯ সালের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে অল্পের জন্য শ্রীলঙ্কার হয়ে শিরোপা জিততে পারেননি দিলশান। তবে সেবার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক বনেন তিনি। তিনটি হাফ সেঞ্চুরির সাহায্যে সাত ম্যাচে ৩১৭ রান করেছিলেন দিলশান। সেবার টি-টুয়েন্টির বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেন এই শ্রীলঙ্কান তারকা। দুই বছর পর ২০১১ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান করেন দিলশান। ৯ ম্যাচে ঠিক ৫০০ রান করেন তিনি। ৩৯ বছর বয়সে অবসর নেয়ার আগে তরুণ ক্রিকেটারদের অনুপ্রেরণা জুগিয়ে গেছেন দিলশান। শুক্রবার নিজের শেষ ম্যাচে আউট হয়ে অনেকটাই আবেবঘন হয়ে পড়েন তিনি। তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অসাধারণ অর্জনের জন্য নিশ্চিতভাবে সেরা খেলোয়াড়দের কাতারে জায়গা পাবেন দিলস্কুপের আবিষ্কারক।
টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি- তিন ধরনের ফরম্যাটেই অসংখ্য রেকর্ড ও বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন দিলশান। যেটি তাকে সেরাদের কাতারে জায়গা করে দিয়েছে। আসুন, সেসবের প্রতি চোখ বুলানো যাক-
টেস্ট: ২০১১ সালে জুনে লর্ডস টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯৩ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেছিলেন তিলকারত্নে দিলশান। লর্ডসে কোনো শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানের এটাই ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
ওয়ানডে:
ওয়ানডে ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে দুবার ১৫০ প্লাস রান করেও হেরে যাওয়া দলের সদস্য হওয়ার রেকর্ড গড়েন দিলশান। পরে অবশ্য ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা এই রেকর্ডে দিলশানের সঙ্গে ভাগ বসান।
২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৬১ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলার পথে একটি ছক্কাও মারেননি দিলশান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনো ছক্কা ছাড়া এটাই কোনো ব্যাটসম্যানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। ওই ইনিংসে ২২টি চার মারেন শ্রীলঙ্কার এই বর্ষীয়ান তারকা। বয়স ৩৫ পেরুনোর পর সবচেয়ে বেশি ৪,৬৭৪ রান করেছেন দিলশান। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২২টি সেঞ্চুরির সবগুলোই করেছেন ৩৩ পেরুনোর পর।
২০১৫ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ান পেসার মিচেল জনসনের ওভারে টানা ছয়টি চার হাঁকিয়ে ‘বিরল’ রেকর্ড গড়েন দিলশান।
টি-টুয়েন্টি:
আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেছেন দিলশান; শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ। টি-টুয়েন্টিতে দিলশানের (১,৮৮৯) চেয়ে বেশি রান করেছেন কেবল নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (২,১৪০)।
আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টিতে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ২০০টি চার মারার বিশ্বরেকর্ড গড়েন দিলশান। মোট ২২৩টি চার মেরেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাটসম্যান ২০০’র কোটা স্পর্শ করতে পারেননি। আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টিতে গর্বের রেকর্ডের পাশাপাশি একটি লজ্জার রেকর্ডও রয়েছে দিলশানের দখলে। রেকর্ড সর্বোচ্চ ১০ বার শূন্য রানে আউট হয়েছেন এই শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান। শ্রীলঙ্কার একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে তিন ধরনের ফরম্যাটেই সেঞ্চুরি করার ‘বিরল’ রেকর্ড গড়েছেন দিলশান।