চলতি বছর ডাচ প্রকৌশলীরা আরো একটি আইকনিক নির্মাণ সম্পন্ন করতে যাচ্ছেন। তারা বিশ্বে প্রথমবারের মতো পানিতে ভাসমান দুগ্ধ উৎপাদন খামার নির্মাণ করেছেন। বিশেষত শহরের ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা পূরণের লক্ষ্য সামনে রেখে দেশটির প্রধান বন্দননগরী রটারডামে ভাসমান এ ডেইরি ফার্ম নির্মাণ করা হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের স্থলভাগের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে অনেক নিচু। তাই বাঁধ দিয়ে পুরো দেশকে ঘিরে রাখা হয়েছে। আর এমন ভূপ্রকৃতির কারণে ডাচরা অনেক আগে থেকেই সমুদ্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আসছেন। যার কারণে সমুদ্রশাসন, বাঁধ ও সেতু নির্মাণে তারা বেশ দক্ষ এবং বিশ্বব্যাপী তাদের সুনামও রয়েছে। দেশ-বিদেশে ডাচদের তৈরি সমুদ্র শাসনের জন্য নির্মিত বিখ্যাত অনেক বাঁধ ও সেতু রয়েছে। ডাচ প্রপার্টি কোম্পানি বেলাডন ভাসমান এ খামার নির্মাণ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি রটারডাম বন্দরে একটি কাঠামো নির্মাণ করেছে, যেখানে নেদারল্যান্ডস-জার্মানি বংশোদ্ভূত মিউজ-রাইন-ইসেল জাতের ৪০টি গরু পালন করা হবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে আধুনিক এ খামারে উন্নত প্রযুক্তির সহায়তা নেয়া হবে। যেমন— গরু থেকে দুধ সংগ্রহ করার জন্য থাকবে রোবট। এর বাইরে খামারে ব্যবহার করা হবে বিশেষ এলইডি বাতি। শহরের প্রান্তে অবস্থান হওয়ার কারণে খামারে উৎপাদিত দুধ পরিবহনে যানবাহনের প্রয়োজন হবে কম, যা দূষণ কমিয়ে দেবে। ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা ৯ দশমিক ৮ বিলিয়নে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর তখন মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশের ঠিকানা হবে শহরাঞ্চল, বর্তমানে তা ৫৫ শতাংশ।
তিনতলা উচ্চতাবিশিষ্ট এ খামার সমুদ্রতলে নোঙ্গর করা থাকবে। এ বছরের শেষ নাগাদ চালু হওয়া এ খামার থেকে প্রতিদিন ৮০০ লিটার দুধ উৎপাদন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০১২ সালে এ প্রকল্পের কথা প্রথম তুলে ধরেন ডাচ প্রকৌশলী পিটার ভ্যান ভিনগারডেন। ওই বছর পিটার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থানের সময় হ্যারিকেন স্যান্ডি আঘাত হানে। স্যান্ডির আঘাতে পথঘাট পানিতে তলিয়ে গেলে সেসময় তাজা খাবারের তীব্র সংকট দেখা দেয়। আর তখনই জলবায়ু-অভিযোজিত উপায়ে খাবার উৎপাদনের এ ধারণা তার মাথায় আসে। খামারে ব্যবহার হওয়া বিভিন্ন উপাদান যতটা সম্ভব পুনর্ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। খামারের গরুগুলোকে দেয়া খাবারের ৮০ শতাংশ আসবে রটারডামের খাদ্য শিল্প থেকে। যেমন— স্থানীয় মদ উৎপাদকদের কাছ থেকে শস্যদানা, রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফে থেকে উদ্ধৃত খাবার এবং স্থানীয় গম মিল থেকে সংগ্রহ করা হবে উপজাত। আর এসব বহনে ব্যবহার করা হবে বৈদ্যুতিক ট্রাক। তাছাড়া খামারে চার-পাঁচটি সেলফ/তার ব্যবহার করে দ্রুত বর্ধনশীল, উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ ডাকউইড ও প্রাণীখাদ্য উৎপাদন করা হবে। সৌরবিদ্যুতের সাহায্যে খামারে প্রয়োজনীয় শক্তির চাহিদার একটি অংশ পূরণ করা হবে।
খামারটি চালু হওয়ার পর সেখানে দুধ উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে তা পাস্তুরাইজ করা হবে। একই সঙ্গে খামারেই উৎপাদন করা হবে দই, যা বিক্রি করা হবে রটারডামে। এখানকার গোবর প্রক্রিয়াজাত করে সার উৎপাদন করে বিক্রি করা হবে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা মনে করছে, এ ধরনের খামার গতানুগতিক খামারের তুলনায় বেশ উপকারী, কেননা এগুলো কম পানি, সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি