ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ত্যাগে ৭৫ দিনেরও কম সময় হাতে রয়েছে ব্রিটেনের। কিন্তু কোনো চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের সম্ভাবনা বাড়তে থাকায় সব মহলেই ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ফলে বহুদিন ধরে যেসব ধনী ইউরোপীয় যুক্তরাজ্যে আবাস গড়ে তুলেছেন, তারা এখন যুক্তরাজ্য ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। খবর ব্লুমবার্গ।
বিদেশে সম্পদ বা অর্থ স্থানান্তরে বিশেষায়িত কোম্পানি অ্যান্থনি ওয়ার্ড টমাসের প্রতিষ্ঠাতা জানান, ২০১৮ সালে ব্রিটেন থেকে স্থানান্তরের কাজ ৮২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর ২৯৬টি স্থানান্তরের কাজ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্রিটেনত্যাগীদের সবচেয়ে পছন্দের গন্তব্যস্থলের মধ্যে রয়েছে প্যারিস, ব্রাসেলস, জুরিখ ও জেনেভা। এর পাশাপাশি দক্ষিণ ফ্রান্স ও মায়োকার মতো স্প্যানিশ অঞ্চলও তাদের পছন্দের তালিকায় আছে।
ওয়ার্ড টমাস বলেন, এ সময় ব্রিটেন ত্যাগের হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে খোদ ব্রেক্সিটের যতটা না প্রভাব রয়েছে, তার চেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে ব্রেক্সিট আলোচনা নিয়ে বিভক্তি। টমাস জানান, তার পুরনো ক্লায়েন্টদের মধ্যে ব্রিটেনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রেক্সিটের অন্যতম সমর্থক বরিস জনসন রয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, যারা ব্রিটেন ত্যাগ করছেন, তারা প্রায় সবাই ধনী এবং অধিকাংশই ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিক। তারা সর্বনিম্ন ৬৪ লাখ ডলারের (৫০ লাখ পাউন্ড) মালিক। পরিবারসহ এসব ধনী যুক্তরাজ্য ছাড়ছেন। তবে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে উষ্ণ আবহাওয়ার স্থান খোঁজার পাশাপাশি এসব ধনী তুলনামূলক বেশি স্থিতিশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থার দিকে জোর দিচ্ছেন। প্রস্থান নিয়ে টমাস বলেন, আমার মতে ব্রেক্সিট একমাত্র কারণ না হলেও আমরা এ মুহূর্তে একটা বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে রয়েছি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিসা মের ব্রেক্সিট চুক্তি পার্লামেন্ট ভোটে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর দেশত্যাগ আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আপাতত এ জটিলতা নিরসনের কোনো সম্ভাবনা না থাকায় এ পরিস্থিতিতে যাদের কোনো কিছু করার নেই, তারা হয়তো চলে যাবেন বলে মনে করছেন ওয়ার্ড টমাস।
দেশত্যাগীদের পছন্দের স্থানগুলোর মধ্যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীন চ্যানেল আইল্যান্ডগুলো রয়েছে, যেখানে মুনাফা বা উত্তরাধিকারের ওপর কোনো কর আরোপ করা হয় না। লোকেট গুয়ের্নসের পরিচালক জো স্টোডার্ট জানান, গত বছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধে স্থানান্তর অনুসন্ধানের হার ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
লিওনার্দ লাক্সারি রিয়েল এস্টেটের জ্যেষ্ঠ সহযোগী উপদেষ্টা ফ্রান্সিসকো টেসি জানান, ব্রেক্সিট ও দুই বছর আগে নতুন কর ব্যবস্থা চালুর কারণে স্থানান্তরিতদের পছন্দের তালিকায় ইতালিও উঠে এসেছে। এর আগে দেশটি ধনীদের দ্বিতীয় পছন্দের গন্তব্য ছিল। টেসি বলেন, বর্তমানে হেজ ফান্ড ম্যানেজার বা উদ্যোক্তারা বাড়ি কিনছেন, পরিবারকে যুক্তরাজ্য থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন এবং প্রয়োজনে সপ্তাহের কয়েক দিন লন্ডনে কাজ করছেন।
ধনীরা তাদের আবাসস্থল সরিয়ে নিলেও করপোরেট স্থানান্তর এখন পর্যন্ত বেশি বাড়তে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ড টমাস। তবে চুক্তিহীন ব্রেক্সিট যুক্তরাজ্যে তাদের ব্যবসা কার্যক্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে মনে করছে বহু কোম্পানি।