অক্টোবর বিপ্লবের দুবছর আগে ১৯১৫ সালে ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কি ‘War and peace’ কবিতায় লিখেছিলেন, অবশ্যই বিপ্লবের নেতা লেনিনকে উদ্দেশ্য করে – “And he, the free man of whom I’m yelling – he’ll come, believe me, believe, he will.”-
উন্নত পৰ্বতশ্রেণী আশ্ৰিত জর্জিয়ার একটি গায়ে শৈশব কাটে মায়াকোভস্কির। কুটাইসির স্কুলে পড়াশুনা করার সময়েই ১৯০৫ সালের প্রথম রুশ বিপ্লবের জোয়ারে তিনি ভেসে যান এবং বিপ্লবের কাগজ স্কুলের ডেস্কে লুকিয়ে রেখে বিলি করতে থাকেন। এবং পরবর্তী তিন বছর বিপ্লবের কাজে ভয়ংকরীভাবে জড়িয়ে পড়েন, কারাবরণ করতে হয় বারবার। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি মস্কো স্কুল অব পেইণ্টিং-এ যোগ দেন। তার আগেই অবশ্য কবিতা সম্পর্কে তাঁর ধারণা এবং উদ্দেশ্য খুবই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। কবি ততদিনে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন যে সোসালিস্ট আর্ট করবেন। যদিও ছবি আঁকার দিকে তাঁর ঝোঁক ছিল তবুও ক্রমশ ছবির বদলে আরো বেশী করে কবিতার মধ্যে মগ্ন হয়ে যেতে থাকেন মায়াকোভস্কি। ১৯১৫ সালেই বিপ্লববিষয়ে তিনি বিখ্যাত কবিতা ‘Clouds in trousers’ গোর্কিকে পড়ে শোনান। গোর্কি মায়াকোভস্কির আবেগ ও উদ্দাম বিপ্লব-সচেতনতা দেখে মুগ্ধ হয়ে যান। ১৯১৩ সালে তাঁর নিজস্ব লেখায় যে মহান কবির উপস্থিতির প্রয়োজনের কথা তিনি লিখেছিলেন সেই রকমের একজন মহৎ কবির সম্ভাবনা তিনি মায়াকোভস্কির মধ্যে হয়ত দেখতে পেয়েছিলেন। এবং গোর্কি ঠিকই ভেবেছিলেন। কারণ অতি অল্প সময়ের মধ্যেই কবি সমস্ত বিপ্লব বাহিনীর প্ৰিয় এবং তাঁদের নিজেদের কবির সম্মান লাভ করেন। ১৯১৯-২০ সালে মায়াকোভস্কি টেলিগ্ৰাফ অফিসে কাজ করেন এবং ওই সময়েই প্রিয়তমা নারীর সঙ্গে বিচ্ছেদে মর্মান্তিক আঘাত পেয়ে লেখেন “It” কবিতাটি। ‘Clouds in trousers’-এ মায়াকোভস্কি লিখেছিলেন- “down with your Love” যার অবস্যম্ভাবী পরিণতি “It” এ পরিবর্তিত রূপ পায় –“down with your system”। ঠিক এইরকম সময়েই সামাজিক পরিবেশে লাল নিশানের প্রভাব ব্যক্তিজীবনেও দ্রুত বিস্তারলাভ করতে থাকে এবং তিনি লেখেন “Confiscate, abrogate my suffering”- কিন্তু লক্ষ্য করেন আবহমান কালের দাসত্বের অভ্যাস বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেই। “Slavehood that ages had hammered into our souls”, এক ধাক্কায় যেগুলো কোনদিনই যাবার নয়।
১৯২৩ সালে ব্যর্থ প্রেমের আঘাতে জর্জরিত কবি কিছু সময় মাত্র একাকী নিজেকে ছোট্ট ঘরের মধ্যে বন্ধ করে রাখেন। অতঃপর আবারও বিপ্লবাত্মক কবিতা এবং কাজের মধ্যে ঝাপিয়ে পড়েন। ব্যক্তিজীবনের হতাশা, ব্যর্থতা দূরে ঠেলে তিনি সামাজিক কর্তব্যের মধ্যে আত্মমগ্ন হন। সাত বছর পরে ১৯৩০ সালে তার সেই ছোট্ট ঘরটিতে আত্মহত্যা করেন কবি। নিজেকে গুলি করার আগে স্বহস্তে বিদায়পত্রটি লিখে যান-জীবন থেকে সরে এলাম- আর প্রয়োজন কি অভিযোগ, যন্ত্রণা, অসুবিধার – আমাদের পরস্পরের-কবির সারাটি জীবনই ছিল কবিতা। জীবন এবং মৃত্যুও।