আলিঙ্গনে
আমার ডান প্রকোষ্ঠে
তোমার বাম হৃদয় নাচে!
বক্ষ জুড়ে আমি ধারন করি,
ভরত নাট্যমের কত প্রলয় নাচন!
কত্থক মুদ্রার বেসামাল ডামাডোলে
নিজেরে হারায়ে খুঁজি,
মহাপ্রলয়ের গভীর মায়ার অতলে!
হে নটরাজ,তুমি চির জাগ্রত থাক এমনই, মুখোমুখি,
তোমার আলিঙ্গনের স্ফুলিঙ্গে!
রওনক হাকিম
চিবা,জাপান।
৭/৪/২০১৭
আয়না
শোবার ঘরের দেয়ালের
একপাশের আয়নাটা
আসা-যাওয়ার পথে
বেখেয়ালেই চোখে পড়ে।
আসলে এত বছরের অভ্যেস তাই…..
এ বাড়ীতে এই একটিই আয়না।
অনেক পুরাতন এই বাড়ী আর আসবাবের মত
আয়নাটিরও বয়স বেড়েছে,
বোধকরি তারও শেকড়
জন্মেগেছে এই দেয়ালে।
আমারই মতো!
দেয়াল চুইয়ে পানির ধারায়
আয়না তার নিজস্বতা হারিয়ে
ঝাপসা, ফ্যাকাশে, কেমন তেল
চিটচিটে হয়ে গেছে,
সেই কোন আমলে।
তবুও এর ভেতরেই, পাঁচ-ছয়
ফাঁক-ফোকরে
প্রতিদিন নিজেকে দেখা।
মনে পরে,প্রথম যেদিন
এবাড়ীতে আসি,
জগত সংসারের কিচ্ছু না জানা
ষোড়শী আমি।
নতুন জীবন,নতুন সবকিছুর
সাথে নতুন এই আয়নাটি।
কখন যেনো এটা হয়ে উঠলো
আমার অবসরের সাথী।
এর সামনে দাঁড়ালেই উল্টো
পাশের জানালা গলে
দূরের সবুজ প্রান্তর আর পুরোটা
নীল আকাশ
পলকেই আমার ছোট্ট ঘরে ঢুকে যেতো!
আমি হাত বাড়িয়ে বার বার
আকাশ ছুঁয়ে দিতাম!
সে খুব দারুন খেলা।
সেই আকাশে পাখীরা যখন উড়তো,
আমারও ওদের সাথে উড়তে
ইচ্ছে হতো।
কি আশ্চর্য,যেদিন বৃষ্টি
হতো,আকাশ নয়,যেনো
আয়না হতেই অবিরাম ঝর্না
বয়ে যেতো!
সময়ের সাথে কত পরিবর্তন এলো,
ঘরের ভিতর-বাহির পূর্ণ হলো।
পূর্ণতার আনন্দের অতিসহ্যে,
শূন্যতা চোখের আড়ালে গেলো সন্তর্পনে!
আমিও কেমন ক্লান্তিবিহীন
ঘড়ির কাঁটার মতো
বছরের বছর পর বছর দৌড়তে লাগলাম।
তারপর একটা সময় দৌড় নয়,
শুধু চলতে থাকা।
আর এখন,
চলা বলতে যা বুঝায়
তা নিতান্ত ঠেকা।
নিজেকে টেনে টেনে নেয়া।।
মাঝে মাঝে,
হয়তো পুরোনো অভ্যাসবশতই,
প্রায় মানব শূন্য এ বাড়ীতে
দেয়ালের মুখোমুখি ঠায় দাঁড়াই,
ঘষটা খাওয়া আয়নায় নিজের
অবয়ব খুঁজি,
আবছায়ায় কেবলই হাসিমাখা
ষোড়শী মুখ উঁকি দেয়;
কিছুতেই সেখানে আর সবুজ
প্রান্তরে নীল দিগন্ত,
শুভ্র ফেনীল বৃষ্টির ঝর্না ধরা দেয়না!
রওনক হাকিম
চিবা, জাপান।