ঢাকা ডেস্ক: উপমহাদেশের নারী জাগরণ ও সাংবাদিকতার অগ্রদূত, সাহিত্যিক, নারী বিষয়ক সাপ্তাহিক ‘বেগম’-এর সম্পাদক নূরজাহান বেগমের মরদেহে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়েছেন। রাজনীতিবিদ, লেখক, গবেষক, শিক্ষার্থীসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ সোমবার বিকেলে এ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় শহীদ মিনার চত্বরে জনতার ঢল নামে। শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। সংগঠনটির সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের সঞ্চালনায় মরদেহে শ্রদ্ধা জানান, আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, মহিলা ও শিশু-বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, বাসদের সভাপতি খালেকুজ্জামান, জাসদ একাংশের সাধারন সম্পাদক শিরীন আখতার, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম, মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, লেখিকা সংঘের সভাপতি দিলারা মেসবাহ, কবিতা পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদ, গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান সহ আরও বেশ কয়েকটি সংগঠন।
এর আগে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে নূরজাহান বেগমের প্রথম জানাজা পুরান ঢাকার নারিন্দা বাজারের বাসভবন ‘খাতুন কুটির’-এর আঙিনায় সম্পন্ন করা হয়। এখানে অংশ নেন মরহুমার আত্মীয়-স্বজন, শুভানুধ্যায়ী ও প্রতিবেশী, কবি, লেখক, রাজনীতিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা।
রাতেই গুলশান-১ কেন্দ্রীয় মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন। রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে সোমবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নূরজাহান বেগম। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। গত ৪ মে শ্বাসকষ্টের কারণে নূরজাহান বেগমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় স্কয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
নূরজাহান বেগম ১৯২৫ সালের ৪ জুন চাঁদপুর জেলার চালিতাতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ‘সওগাত’ পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিনের মেয়ে। ১৯৪২ সালে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৪৪ সালে কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ থেকে আইএ ও ১৯৪৬ সালে একই কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৫২ সালে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার প্রতিষ্ঠাতা রোকনুজ্জামান খানের (দাদা ভাই) সঙ্গে নূরজাহান বেগমের বিয়ে হয়। তিনি ভারত উপমহাদেশের প্রথম নারী বিষয়ক সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘বেগম’- এর শুরু থেকে সম্পাদনার কাজ করে আসছিলেন। প্রায় ৬০ বছর ধরে এই পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
গুণী এই সাংবাদিক পেয়েছেন অনেক সম্মাননা। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ১৯৯৬ সালে ‘নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠ চক্র’ এর সন্মাননা, ১৯৯৭ রোকেয়া পদক, ১৯৯৯ সালে গেন্ডারিয়া মহিলা সমিতি থেকে শুভেচ্ছা ক্রেস্ট, ২০০২ সালে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার, ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক নারী সংগঠন ইনার হুইল ডিস্ট্রিক্ট ৩২৮ সম্মাননা, বাংলাদেশ মহিলা সমিতিসহ অনেক সংগঠন থেকে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন।