মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভিসা জটিলতা, সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতাসহ নানা প্রতিকূলতার কারণে ক্রমে সংকুচিত হয়ে এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার। ফলে প্রতি বছর কমছে জনশক্তি রপ্তানি। বছর বিশেক আগেও বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রফতানিতে আস্থার প্রতীক ছিল উপসাগরীয় ছয়টি দেশ। কিন্তু বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে জনশক্তি রফতানি। ২০০০ সালেও মোট শ্রমশক্তির ৮৫ শতাংশের বেশি রফতানি হয়েছে জিসিসিভুক্ত ছয়টি দেশে। অথচ চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে এ হার কমে ৬২ শতাংশে নেমে এসেছে বলে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্রে জানা গেছে। সরকারের এ সংস্থাটির তথ্যমতে, ২০০০ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোট শ্রমিক রফতানি হয়েছিল ২ লাখ ২২ হাজার ৬৮৬ জন। এর মধ্যে জিসিসিভুক্ত ছয় দেশে পাঠানো হয়েছিল ১ লাখ ৯০ হাজার ৭৬৪ জন। আর চলতি বছর প্রথম ছয় মাসে সব দেশ মিলে শ্রমিক রফতানি হয়েছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ২৫০ জন। এর মধ্যে জিসিসিভুক্ত ছয় দেশে পাঠানো হয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৯৩২ জন। যদিও ২০১৭ সালে প্রথম ছয় মাসে এ সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৪৯ হাজার ২৬০। এ হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশে জনশক্তি রফতানি কমেছে ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার চালু করতে না পারা, কূটনৈতিক অদক্ষতা ও প্রচলিত শ্রমবাজারে কর্মীর চাহিদা কমে যাওয়ায় জনশক্তি রফতানিতে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ব্যয় সাশ্রয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী ছাঁটাই ও প্রতিষ্ঠান ছোট করে আনার ফলেও জিসিসিভুক্ত দেশের শ্রমবাজারে জনশক্তি রফতানিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে।
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সৌদি আরবে পাড়ি দিয়েছেন ১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৬৮ জন বাংলাদেশী শ্রমিক, যা আগের বছর একই সময় ছিল ৩ লাখ ২ হাজার ২৭৩ জন। একইভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন ১ হাজার ৫২২ জন, যা আগের বছর ছিল ২ হাজার ৩৯৪ জন। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে কুয়েতে ২৫ হাজার ৬৩৭ জন শ্রমিক রফতানি হলেও এবার হয়েছে ১৯ হাজার ৪১৬ জন। জনশক্তি রফতানি কমেছে ওমানেও। দেশটিতে এ বছর ৩৭ হাজার ৫৬৫ জন পাড়ি দিয়েছেন, যা আগের বছর ছিল ৫০ হাজার ৬৩৭ জন। এছাড়া কাতারে গেছেন ৪০ হাজার ১৮২ জন, যা আগের বছর ছিল ৫১ হাজার ৮৪৯ জন। বাহরাইনে গত বছরের প্রথম ছয় মাসে ১৬ হাজার ৪৭০ জন শ্রমিক রফতানি হলেও এবার গেছেন ৬৭৯ জন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে জানা গেছে জিসিসিভুক্ত শ্রমবাজারগুলোর মন্দা কাটিয়ে ওঠার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হলেও তেমন সুফল আসেনি। আর মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ যেমন ইরাক ও লিবিয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হওয়ায় সেখানেও শ্রমিক পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় বিদ্যমান শ্রমবাজারগুলো ধরে রেখে নতুন বাজার সৃষ্টির ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। আশা করা যায়, চলতি বছরে আরো কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের শ্রমবাজারের সঙ্গে যুক্ত হবে।
তবে আশার বিষয় হলো, সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে ১৯ খাতে কর্মী নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এর পাশাপাশি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ অন্যান্য পেশাজীবী নিয়োগে আগ্রহী দেশটি।
Check Also
১৫ই আগষ্ট আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন জাপানি নভোচারী ফুরুকাওয়া
জাপানের নভোচারী ফুরুকাওয়া সাতোশির দ্রুত হলে ১৫ই আগষ্ট আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে দ্বিতীয় ভ্রমণ নির্ধারণ করা …