প্রথাগত বাধা অতিক্রম করে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার সবরিমালা মন্দিরে প্রবেশ করা নারী কনাকা দুর্গা (৩৯) এবার পরিবার থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। ওই নারীর স্বামী তাকে বাড়িতে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এর আগে প্রথা ভেঙে মন্দিরে প্রবেশ করার অভিযোগে ওই নারীর শাশুড়ি তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছিলেন। বুধবার বিবিসির এক প্রতিবেদন এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কনাকা দুর্গা চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে এসে পরিবারের কাউকে পাননি। স্বামী, দুই সন্তান কেউ বাসায় ছিলেন না এবং দরজায় তালা দেয়া অবস্থায় দেখতে পান। এর পর তার সঙ্গে যাওয়া পুলিশ সদস্যরা নারীদের জন্য বরাদ্ধ একটি সরকারি নিবাসে তাকে নিয়ে যান।
পুলিশ সুপার প্রতীশ কুমার জানিয়েছেন, পরের দিন কনাকা ও তার স্বামী কিরিশনান উনিকে থানায় ডেকে আনা হয়। এ সময় তার স্বামীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি স্ত্রীকে বাসায় নিতে অস্বীকৃতি জানান। এরপরই কনাকার স্বামী থানা থেকে চলে যান এবং কনাকা নারীদের জন্য বরাদ্ধ সরকারি নিবাসে গিয়েছেন।
পুলিশ বলছে, কনাকা দুর্গা এর আগে শাশুড়ির হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে মামলা করেছিলেন। এখন বিষয়টি আদালতে সিদ্ধান্ত হবে। তবে কনাকার এক সহযোদ্ধা জানিয়েছেন, বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি চেয়ে তিনি আদালতে পিটিশন দাখিল করবেন। এই ঘটনায় কনাকা ভীষণ উদ্বিগ্ন।
কেরালা রাজ্যের সবরিমালা মন্দিরে প্রথাগতভাবে ১০ থেকে ৫০ বছরের ঋতুমতি নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। এই নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে সেপ্টেম্বরে রায় দেন ভারতের সর্ব্বোচ আদালত। এরপরই এটি নিয়ে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। নারীরা মন্দিরটিতে প্রবেশ করতে চাইলে মন্দিরের পুরুষ ভক্তদের বাধার সম্মুখিন হয়। এই অবস্থার মধ্যেই গত ২ জানুয়ারি কনাকা দুর্গা ও অন্য এক নারী পুলিশি পাহাড়ায় মন্দিরটিতে প্রবেশ করেন।
এই নারীরা মন্দিরে প্রবেশ করে অপবিত্র করে ফেলেছে এই অভিযোগে তখন রাজ্যজুড়ে সহিংস বিক্ষোভ হয়। সে অবস্থায় ওই দুই নারীকে পুলিশি নিরাপত্তায় রাখা হয়। পরবর্তীতে সেখান থেকে বাড়িতে ফিরলে কনাকা দুর্গার শাশুড়ি তাকে মন্দিরে প্রবেশ করার অভিযোগে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন।
সবরিমালা মন্দিরে প্রবেশে লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা কনাকার এক বন্ধু প্রাসাদ আমোরি জানিয়েছেন, মন্দিরে প্রবেশের পর কনাকার পরিবার আর তাকে নিতে চাচ্ছে না। কারণ তারা মনে করে কনাকা তার পরিবারের সম্মান নষ্ট করে ফেলেছে। তার সম্প্রদায়ও মন্দিরটিতে ঋতুমতি নারীদের প্রবেশের বিরোধীতা করে আসছে।
তবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। কারণ মন্দিরে নারীদের প্রবেশের ক্ষেত্রে বিজিপির স্থানীয় নেতারা বিরোধীতা করছেন বলে অভিযোগ নারীদের। ফলে যেভাবে এই বিষয়টি সামনে এগোচ্ছে তাতে আগামী এপ্রিল অথবা মে মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ভারতের সাধারণ নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।