Breaking News

সাইতামা বাংলা সোসাইটি,ওয়ারাবী কর্তৃক আয়োজিত বনভোজন প্রসঙ্গে

ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে সাইতামা বাংলা সোসাইটি গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ইং তারিখে কানাগাওয়া প্রিফেকচারের খিয়োগাওয়া রিভারল্যান্ডের পাহাড়ী প্রাকৃতিক অরণ্যে বার্ষিক বনভোজনের আয়োজন করে । দুইটি বাস এবং একটি প্রাইভেট কারে সর্বমোট ১১১ জন অংশগ্রহন করেন । বাস যাত্রার প্রারম্ভে উপদেষ্টা জনাব নূরুল হক-রহমান এবং নৌ-প্রকৌশলী জনাব তাপস বড়ুয়া নিরাপদ এবং আনন্দময় ভ্রমনের শুভকামনা করে শুভ উদ্বোধনী ঘোষনা করেন । 
আড়াই ঘন্টার যাত্রাপথে বনভোজন বহরটি হাইওয়ে ছেড়ে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে সরু আঁকা-বাঁকা পথে প্রবেশ করলে সবার মধ্যে বনভোজনের আমেজ ভর করে । মন্থর গতিতে চলতে থাকা বাসে বসে গভীর অরণ্যে ভরা সুউচ্চ পাহাড়গুলোকে  মনে হচ্ছিলো আকাশের মেঘমালাকের ছুঁয়ে গেছে । বাস থেকে নেমে প্রায় দশ-পনর মিনিট হেঁটে আমাদের বহরটি বনভোজন স্থলে পৌঁছায় । চলার পথে পাহাড়ী পিচঢালা আঁকা-বাঁকা পথ, সুউচ্চ পাহাড়, পাহাড়ী ঝর্ণা এবং পিচঢালা রাস্তার পাশে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত পাহাড়ী প্রাকৃতিক খরস্রোতা ছড়ায় প্রবাহিত পানির রিনিঝিনি শব্দ সবাইকে বিমোহিত করে । 
পাশা-পাশি অবস্থিত তিনটি বিশাল পাহাড় এবং খরস্রোতা পাহাড়ী পাথুরে ছড়ার সংযোগস্থলে কৃত্রিম ভাবে কেটে সমতল ভূমি তৈরী করে বনভোজনের মূল স্পটটি করা হয়েছে । এই স্পটে বরশি দিয়ে মাছ ধরার জন্য জলাধার, উন্মূক্ত রান্না ঘর, বিশ্রামাগার এবং বনভোজনে ব্যবহৃত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রির দোকানেরও বন্দোবস্ত ছিলো । অনেকে এই গভীর অরণ্যে ক্যাম্প করে রাত্রি যাপন করেন ।

আমাদের বনভোজন বহরটি এই স্পটে ভারী জিনিসপত্র রেখে সবাই গভীর অরণ্যে ভরা সুউচ্চ পাহাঢ়, পাহাড়ী ঝর্ণা এবং খরস্রোতা ছড়াগুলোর সৌন্দর্য্য উপভোগে বেরিয়ে পরেন । প্রকৃতির সৌন্দর্য্য পিয়াসী বন্ধুরা পাহাড়ী অরণ্যে দেখতে পান ব্যাপক হিরোদের উপস্থিতি । তবে করোর মধ্যে হিরোদের সাথে সেলফি তোলার আগ্রহ লক্ষণ করা যায়নি বরং এড়িয়ে চলার মানসিকতাই ছিলো স্পষ্ট । তারপরও বেশ কয়েকজন বন্ধু এই জাপানিজ হিরোদের কাছে  আক্রান্ত হয়ে রক্ত ঝরিয়েছেন । এই জাপানিজ হিরোরা গভীর অরণ্যে আমাদের উপস্থিতিকে ভীলেন ভেবেছিলো কিনা জানিনা ! তবে রক্তাক্ত হলেও কেউ উল্টো আক্রমন অথবা থানা-পুলিশ করার চিন্তাও করেনি । আসলে থানা-পুলিশ করার কথাও না, এরাতো নাটক-সিনেমা অথবা যাত্রা-থিয়েটারের মানব হিরো না । এরা হচ্ছে প্রকৃতির হিরো অর্থাৎ জোঁক । জোঁককে জাপানিজ ভাষায় হিরো বলে । আশ্চর্য্য হলেও সত্য, জাপানে জোঁক আছে আমাদের সহযাত্রীরা কেউ কল্পনাও করেননি, আমাদের বনভোজন বহরে থাকা দু’জন ত্রিশোর্ধ কালের প্রবীণ জাপান প্রবাসীসহ নবীন বন্ধুরা কেউ জাপানে জোঁক আছে, এমন গল্পও শোনেননি । আমাদের জন্য এই বাস্তবতা ভীতিকর হলেও বিষয়টা ছিলো রোমাঞ্চকর এবং ব্যাতিক্রম এক নতুন অভিজ্ঞতা ।
এরই মাঝে দুপুর দুইটায় ক্ষুধার টানে সবাই পাহাড়ী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগের সাময়িক বিরতি টেনে রান্নাস্থলে হাজির হয়ে বাঙ্গালী খাবারের স্বাদ (বাসমতি চালের ভাত,বীফ কারী,মাটন কারী,রুই মাছ ভাঁজা,লাউ-চিংড়ীর মাসকলাইর ঢাল, চিংড়ী ভর্তা এবং সালাদ ) আস্বাদন করেন । পেটের ক্ষুধা মিটলেইও চিত্তের ক্ষুধা মিটানোর জন্য অনেকই আবারো অদেখা স্পটগুলো দেখতে বেরিয়ে পরেন,তবে আয়োজকদের ঘোষিত সময় পাঁচটার মধ্যে সবাই ফিরতি প্রস্তুতির জন্য বনভোজন স্থলে ফিরে আসেন । 
বাসের পার্কিং স্থল থেকে বনভোজন স্পটে পৌঁছার দশ-পনর মিনিটের হাঁটা পথে আসা-যাওয়ার সময় সবাই মিলে-মিশে লাকড়ি, বড়-বড় সাইজের হান্ডি-পাতিল গুলো এবং শতাধিক লোকের রান্না-সামগ্রী বহনের দৃশ্য জাপানিজরা বিমুগ্ধ চিত্তে অবলোকন করেছেন এবং দু-চারজন এসে আমাদের সমন্বিত প্রয়াসকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন । 
বনভোজন স্পটে সবাই কমবেশী আনন্দ করলেও অনেকের দৃষ্টিতে আসা-যাওয়ার পথে বাসে বসে সহযাত্রী বন্ধুদের গান, কৌঁতু্‌ক, আবৃতি এবং চুটকীগুলো সুদীর্ঘ বাস জার্নির ক্লান্তি কাউকে স্পর্শ করতে দেয়নি, এটা ছিলো সত্যিকার অর্থেই নিখাদ আনন্দ ভ্রমন । এই বনভোজনে কাইকম সলিউসন্স জাপান কোম্পানী লিমিটেডের গিফট কুপন লটারী এবং মনিকা মাল্টি ট্রেডিং কোম্পানির বিংগু প্রতিযোগিতার পুরস্কার সবার মাঝে বাড়তি আনন্দের খোরাক যোগায় । তাছাড়া যাত্রাপথে সকালের নাস্তা এবং ফিরতি বাসে বিকালের নাস্তায় রহমান ভাইয়ের ভেজিটেবল সিঙ্গারার স্বাদ সর্বজন প্রশংসিত হয় । 
সর্বশেষে বনভোজন বাস্তবায়ন কমিটির আহব্বায়ক এবং সদস্য সচিব বনভোজনে অংশ গ্রহনকারীদের আন্তরিক সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানান । তাছাড়া সংগঠনের সভাপতি এবং সাধারন সম্পাদক প্রতিবারের মত ভবিষ্যতেও সবার সহযোগিতায় বনভোজনসহ বাংলাদেশ এবং জাপানের ঐতিহ্যবাহী কৃষ্টিকালচারাল উৎসবগুলো পালনের দৃঢ় অঙ্গিকার ব্যাক্ত করে বনভোজনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষনা করেন ।
                              
                               প্রচারে,
                               মোঃ কাউছার হোসেন-আক্কাস
                               প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক,
                               সাইতামা বাংলা সোসাইটি, ওয়ারাবী, জাপান ।

About admin

Check Also

১৫ই আগষ্ট আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন জাপানি নভোচারী ফুরুকাওয়া

জাপানের নভোচারী ফুরুকাওয়া সাতোশির দ্রুত হলে ১৫ই আগষ্ট আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে দ্বিতীয় ভ্রমণ নির্ধারণ করা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *