ঢাকা ডেস্ক: সাম্য, মানবতা ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি বিদ্রোহী কবিও। আরো কত উপাধি তার, তিনি চির যৌবনের দূত। তার লেখনির বিদ্রোহী চেতনা এ জাতিকে শিখিয়েছে কীভাবে মাথা উচ্চ করে বাঁচতে হয়। তিনি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বুধবার ১১ জ্যৈষ্ঠ তার ১১৭তম জন্মবার্ষিকী। বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ কলকাতার বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে কবি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা কাজী ফকির আহমদ ও মা জাহেদা খাতুনের ষষ্ঠ সন্তান কাজী নজরুল ইসলাম। তার ডাক নাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। কৈশোরে তিনি বিভিন্ন থিয়েটার দলের সঙ্গে কাজ করতেন। এ সময় তিনি নাটক, কবিতা ও সাহিত্য সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। পরে ১৯১৭ সালের শেষদিকে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। সেনাবাহিনীতে কিছুদিন সৈনিকের দায়িত্ব পালন করার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এ সময় তিনি কলকাতার ৩২ নম্বর কলেজ স্ট্রিটে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে বসবাস করতেন। সাংবাদিকতা পেশায় থাকাকালীন তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। লেখেন বিদ্রোহী ও ভাঙার গানের মত কবিতা; ধূমকেতুর মত সাময়িকী। পরে তার লেখনির কারণ তাকে জেলে বন্দী করা হয়। জেলে বসে তার লেখা রাজবন্দীর জবানবন্দী। এতে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। তার লেখনিতে বাংলার মানুষ পেয়েছিল ভালবাসা, মুক্তি ও বিদ্রোহের মন্ত্রণা। তাছাড়া তিনি ধর্মীয় লিঙ্গভেদের বিরুদ্ধেও লিখেছেন। কাজী নজরুল ইসলাম তার একক প্রচেষ্টায় বাংলা কাব্যে এক নতুন ধারার জন্ম দেন।
একই সঙ্গে তিনি সৃষ্টি করেন গজল, শ্যামাসংগীত ও হিন্দু ভক্তিগীতি। তিনি প্রায় ৩ হাজার গান রচনা করেন যা এখন নজরুল সঙ্গীত বা নজরুল গীতি নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্ম হয়। ১৯৭২ সালের ২৮ মে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরে কবির বাকি জীবন বাংলাদেশে কাটে। ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে তার বিশেষ অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। পরে ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সরকার কবিকে নাগরিকত্ব প্রদান করে। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারিতে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।
পরে ১৯৭৬ সালে কবির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। কবির জীবনের শেষ দিনগুলো ঢাকার পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) কাটে। একই বছরের ২৯ আগস্ট জাতীয় কবির মৃত্যু হয়।
জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে পৃথক বাণী দিয়েছেন। জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান এ বছর হচ্ছে চট্টগ্রামে। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নজরুল ইন্সটিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি প্রফেসর ইমেরিটাস রফিকুল ইসলাম ও জাতীয় কবির পৌত্রী খিলখিল কাজী প্রমুখ।