হাসিনা বেগম রেখা // ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত নয়টার পর হঠাতই গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় জঙ্গিরা। জিম্মি করা হয় বিদেশি নাগরিকসহ বেশ ক’জন দেশী নাগরিকদের। রাতভর ১৭ বিদেশিসহ ২১ জন কে হত্যা করা হয়। জাপান প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটি হামলার শিকার নিহত সকলকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছেন। এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডে ৭ জন জাপানিজ ছিলেন যারা বাংলাদেশে উন্নয়নমূলক কাজে জড়িত ছিলেন।
১ জুলাই রোববার টোকিওর কিতা সিটি আকাবানে বুনকা সেন্টার বিভিও হলে আয়োজন করা হয় এক স্মরণ সভার। এই আয়োজিত সভায় অংশ নিয়েছিলেন জাপানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের দূতালয় প্রধান ও প্রথম সচিব মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন সহ প্রবাসী রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, প্রবাসী মিডিয়া কর্মীবৃন্দ এবং সর্বস্তরের প্রবাসীরা।
সভার শুরুতে দূতাবাস প্রধান মোহাম্মদ জোবায়ের হোসেন সহ উপস্থিত প্রবাসীরা নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে শোক নমুনা স্মরণ পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
সাংবাদিক রহমান মনির তত্বাবধানে স্মরণ সভাটি পরিচালনা করেন নিহন বাংলা ডট কমের সম্পাদক গোলাম মাসুম জিকো । উপস্থিতিদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট হাসিনা বেগম রেখা, আনাফ হিরোকি, আবুল খায়ের, আব্দুল কুদ্দুস, মোল্লা দেলোয়ার হোসেন, বিমান পোদ্দার, এ জেড এম জালাল, এনামুল হক চৌধুরী লিটন, চৌধুরী শাহীন, আশরাফুল ইসলাম শেলী, মীর রেজাউল করিম রেজা, সালেহ মো: আরিফ এবং দূতালয় প্রধান মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড তিব্র নিন্দা জানাই। পৃথিবীর কোথাও যেন না ঘটে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা। প্রত্যেকের জন্মই নিরাপদ হোক। এটি একটি দুর্ঘটনা না ষড়যন্ত্র সেটার থেকে বড় বিষয় দেশে বিদেশী নাগরিকদের নিরপত্তা, সুষ্ঠ বিচার ব্যবস্থা দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে। চার্জশীট দ্রুত ও সঠিক ভাবে প্রদানের জন্য আবেদন জানান প্রবাসীরা। এই দিনে যারা নিহত হয়েছেন তাদের আত্মার প্রতি মাগফেরাত কামনা করেন সবাই। তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়। বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় কারণে এটি হয়েছে বলে বিশ্বাস করি না। এখানে হিন্দু মুসলিম সবাই একসঙ্গে বাস করি সুতরাং দেশে আমাদের সন্তান বা পরিবারকে সতর্ক করতে হবে এই ধরনের জঙ্গি সংগঠন এর কার্যক্রমে না বুঝে ধরা না দিতে।
এছাড়া জাপানে আমরা দীর্ঘ দিন যাবৎ বসবাস করছি। এখানে উপার্জন করছি। ১৯৭২ সাল থেকে রাজনৈতিক সম্পর্ক আছে। বন্ধু দেশ, ভালোলাগার দেশ সেই জন্য বা সেই উদ্দেশ্যে আজকের এই স্মরণ সভা। যে নারকীয় হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তাতে আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনেক সমস্যায় পড়েছিলাম। বাংলাদেশ দূতাবাস সাহায্য করেছে পরিস্থিতি উন্নয়নে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিহত ৭ জন জাপানিজদের প্রত্যেকের বাসায় গিয়েছইলেন, সমবেদনা জানিয়েছেন। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা সহযোগিতামূলক আচরণ করেছেন।
উপস্থিত বক্তারা আরও বলেন, যে ৭ জন জাপানি নিহত হয়েছে, তাদের সবার নামে একটি করে মেট্রো রেল স্টেশনের নাম রাখার দাবী জানান। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে এলাকার নামের সাথে নিহত জাপানিদের নাম জুড়ে নাম রাখার প্রস্তাব রাখেন।
দূতাবাস প্রধান মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন বলেন, দুই বছর আগে স্বাধীন বাংলার ইতিহাসে যে নরকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটে, সে সম্পর্কে আমরা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। অর্থনৈতিক দিক থেকে জাপানের সঙ্গে উন্নত সম্পর্কে প্রভাব পড়ে। আমরা দেখেছি দূতাবাস সর্বোচ্চ চেষ্টা দেখিয়েছে। আমরা কতটা ব্যাথিত এই ঘটনায়। তদন্ত হচ্ছে ঘটনাটির। সরকার সংশ্লিষ্ট সবাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। ২৬ শে জুলাই প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে কোর্ট। পুলিশের অগ্রগতি অসন্তোষজনক নয়। আমরা আউটপুট দেখতে পারছি তার কারণ এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশে আর হয়নি। যথোপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে আরো কিছু ঘটতে পারতো।
আশার আলো হচ্ছে জনগণের সার্বিক সহযোগিতায় আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অনেকটাই সতর্ক রয়েছেন। আমরা প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিতে সক্ষম হয়েছি।
আলোক চিত্রঃ রাহমান মনি