আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ৭০ বছর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে দেশটির পারমাণবিক বোমা হামলায় জাপানের যে নগরী মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছিল, সেই হিরোশিমায় গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, “হিরোশিমার নীরব কান্না আমাদের শিক্ষা দিয়েছে।” তিনি বলেন, “একটি মাশরুম ছবি (বোমার আঘাতে সৃষ্ট) আমাদের বলে দিচ্ছে, আমাদের মানবতা কতটা বিপন্ন ছিল। আমরা আজ সেই বীভৎসতা থেকে শিক্ষা পাচ্ছি।” “আমার কোনও বাক্যই হিরোশিমায় আক্রান্তদের কষ্ট কমাবে না। হিরোশিমার চিত্র আমাদের চিন্তাশক্তিকে শাণিত করছে যে, বিশ্বে যুদ্ধ-বিগ্রহ কতটা প্রয়োজন?”
দুইদিন ব্যাপী জি-সেভেন সম্মলনে যোগ দিতে গিয়ে ওবামা দ্বিতীয় দিন শুক্রবার ইসে-শিমা থেকে স্থানীয় সময় বিকেল ৫ টা ২০ মিনিটে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে সঙ্গে নিয়ে হেলিকপ্টারে করে হিরোশিমা মেরোরিয়াল পার্কে পৌঁছেন। এ সময় রাস্তার দুই পাশে জাপানিদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বিকেল সাড়ে ৫ টা ৪০ মিনিটে হিরোশিমা মেমোরিয়াল পার্কে স্মৃতি সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পন করে নীরবতা পালন করেন তিনি। পরে শিনজো আবেও পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। এরপর স্থানীয় খোলা মাঠে পারমাণবিক বোমায় আক্রান্তদের অংশগ্রহণে এক স্মৃতিচারণ সভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় বারাক ওবামা বলেন, “আমি এখানে কেন এসেছি? এ প্রশ্ন অনেকে করতে পারেন, কিন্তু আমি এসেছি মানবিক বিবেচনায়।”
“আজ যারা এখানে বসে আছে সেই জায়গাটি একাত্তর বছর আগে পারমাণবিক বোমায় ক্ষত-বিক্ষত হয়ছিল, তা আজ আমি অনুভব করছি। ভাষায় এ দুদর্শার কথা বর্ণনা করা কঠিন।”
“যারা এখানে মারা গিয়েছিল, তারা তো আমাদের মতো সাধারণ মানুষ ছিল। সাধারণরা একথা আজ ভাল করে বুঝেছে বলে তারা আর কোন যুদ্ধ চায় না।” ১ লাখের বেশি মানুষ মারা যাওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে ওবামা বলেন, “চলুন আমরা এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সন্তানদের বলি যে, ‘নৃশংসতা কখনও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না’।
“সকালে সন্তানের একটি সুন্দর হাসি কতটা মধুর হতে পারে তা আমি উপলব্ধি করতে পারি। কিন্তু হাজারো হিরোশিমাবাসী তা পায়নি। অনেকে মনে করছে, আমেরিকা আমাদের আত্মীয়দের মেরে ফেলেছে, আমরা সেই বিদ্বেষ ঘুচাতে চাই।” “যুদ্ধের সময় নেতৃত্বস্থানীয়দের ভূমিকা থাকতে পারে। তবে আমরা আজ বুঝতে শিখেছি, এ ধরনের যুদ্ধ মানব সভ্যতার জন্য কতটা হুমকি হতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “আজ হিরোশিমায় আক্রান্তদের অনেকে ‘জীনগত’ পরিবর্তন হয়েছে। বিজ্ঞানের একটি আবিষ্কার যে একটি ‘মৃত্যুপুরী’ সৃষ্টি করতে পারে তা ভাবার সময় এসেছে।”
“গত কয়েক বছর ৬০ মিলিয়নের বেশি মানুষ যুদ্ধে মারা গেছে। এরপরও আমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারিনি।” ক্ষমা চাওয়ার বিষয় আগেই নাকচ করলেও এদিন ওবামা বলেন, “আমরা কৃতজ্ঞচিত্রে যুদ্ধের সময় নিহতদের স্মরণ করছি।” “ইতিহাস থেকে আমরা সরাসরি শিক্ষা নিয়েছি। তাই পারমাণবিক অস্ত্র আর কখনও মানব সভ্যতার প্রয়োজন পড়বে না।”
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেন, “আমরা এ ধরনের ট্রাজিডির পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না। যারা আজ বেঁচে আছেন তাদের কাছে আমাদের অঙ্গীকার হবে, পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন নতুন বিশ্ব।”
জাপানি ও যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের স্মরণ করিয়ে আবে বলেন, “ওবামার ঐতিহাসিক সফর মনে করে দিচ্ছে, পারমাণবিবক অস্ত্র কতটা ভয়ানক।” এরপর ওবামা হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমায় আ্ক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের কষ্টের কথা শোনেন। ওবামার হিরোশিমা সফরের সময় দুই দেশের সরকার প্রধানের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা অংশ নেন। পরে ওবামা হিরোশিমার স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন।
দায়িত্বে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওবামাই প্রথম হিরোশিমা সফর করলেন। গতমাসে কিউবা সফরে গিয়েও তিনি ইতিহাস রচনা করেছেন। ওবামার আগে ১১ এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি হিরোশিমা সফর করেন।