শাহ মামুনুর রহমান তুহিন // স্বপ্নের পদ্মাসেতু শুধুমাত্র একটি সেতু নয়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এটা অত্যন্ত বড় ভূমিকা রাখবে। সমগ্র বাংলাদেশের সাথে দক্ষিনাঞ্চলের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হবে এই সেতু। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন সহজতর হবে, বাণিজ্যিকভাবে হবে আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমূদ্র বন্দর মংলার সাথে রেল যোগাযোগ এবং পায়রা বন্দরের সাথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যমে এই সেতু নি:সন্দেহে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখবে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে ৪২টি পিলারের উপর বসবে ৪১টি স্প্যান। পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। জাজিরা প্রান্তে পঞ্চম স্প্যান ‘৭ এফ’ বসানোর পর পৌনে ১ কিলোমিটার কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। সেতুর সার্বিক অগ্রগতি এখন ৬২ শতাংশ।
উল্লেখ্য যে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে সেতুর কাজ শুরু হয়। বর্তমানে সেতুর ১৭০টি পাইল ড্রাইভ সম্পন্ন হয়েছে। সেতুর ১ থেকে ৪২ নম্বর পিলার পর্যন্ত মোট পাইল হবে ২৯৪টি। নদীতে ২৬২টি পাইল বসবে। স্প্যান বসানো বাকি ৩৬টি।
পদ্মাসেতু প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, পানি বাড়তি থাকায় ৬, ৭, ৮ নম্বর পিলারে বর্তমানে কাজ চলছে না। বর্ষা শুরুর আগে ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের বটম সেকশন ড্রাইভের কাজ শেষ হয়েছিল। ৯ ও ১২ নম্বর পিলারের পাইল ড্রাইভ কাজ শেষ। ২৬, ২৭, ১০ ও ১১ নম্বর পিলারের কাজ চলছে না। ৩১, ৩২, ৩৩ নম্বর পিলারের পাইল কাজ শেষ পর্যায়ে, পাইল ক্যাপের কাজ শুরু হবে। ৮টি প্লাটফর্ম রয়েছে পাইল ড্রাইভের কাজের জন্য এবং ৮টি প্লাটফর্ম আছে পাইল ক্যাপের। এর মাধ্যমে ১৬টি পিলারের কাজ হচ্ছে। কতগুলোর পাইল ড্রাইভের কাজ চল এবং একই সাথে পাইল ক্যাপের কাজও চলছে। পিলার ৯, ১২, ১৩, ১৪, ১৬, ১৭, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৯, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬ নম্বরের কাজ চলছে বর্তমানে। পদ্মা সেতুর পাইলের কাজে প্রথম দিকে হ্যামারের কারণে কিছুটা কম গতিতে কাজ চলছিল।
তবে বর্তমানে ৩টি হ্যামার কাজ করছে প্রতিনিয়ত। সিরিয়ালে থাকা ৬ষ্ঠ স্প্যানটি ৩৬ ও ৩৭ নম্বর পিলারের উপর বসানো হবে। তবে এর আগে যদি কোনো পিলারের কাজ শেষ হয়ে যায় তবে সেখানেই বসবে স্প্যান। ৩ মাস পর খুব দ্রুত স্প্যান ওঠানো হবে কেননা ইতিমধ্যে ১০টি পিলারের কাজ শেষের দিকে। আগামী ৪ মাসের মধ্যে আরো ১০টি পিলার প্রস্তুত হবে। ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে পদ্মাসেতুর কাজ খুবই দ্রুতভাবে এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদী প্রকৌশলীরা। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ দেখা না দিলে খুব দ্রুতই সেতুর কাজ চলবে। মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে ৮টি স্প্যান প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এসব রং করতে সময় লাগে ১৫ দিন। চীন থেকে স্প্যান আনা হয়েছে ১৫টি যার মধ্যে ৫টি পিলারের উপর বসে গেছে।
পদ্মাসেতুতে ৫টি হ্যামার আনা হয়েছিল। এর মধ্যে ২টি স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন হ্যামার ৩৫০০ কিলোজুল, ২৪০০ কিলোজুল ও ১৯০০ কিলোজুল ক্ষমতার তিনটি হ্যামার দিয়ে কাজ করা হচ্ছে।