প্রয়াত হয়েছেন মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের কংগ্রেসম্যান জন ডিঙ্গেল। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) মিশিগানের ডিয়ারবর্নে নিজ বাড়িতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। খবর বিবিসির।
ডিঙ্গেলের স্ত্রী ডেবি ডিঙ্গেলের কার্যালয় তার মৃত্যুতে বলেছে, তিনি মার্কিন কংগ্রেসের একজন সিংহ ছিলেন। ছিলেন একটি স্নেহময় ছেলে, বাবা, স্বামী, দাদা ও বন্ধু।
ডিঙ্গেলের মৃত্যুর পর মিশিগান কংগ্রেসওম্যানের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে আমরা এই ঘোষণা দিচ্ছি যে, মিশিগানের সাবেক কংগ্রেসম্যান ও মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় প্রতিনিধি পরিষদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী জন ডেভিড ডিঙ্গেল প্রয়াত হয়েছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব মিশিগানের তার কয়েক দশকের জনসেবা, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকা প্রত্যেকটি মানুষের জীবনমান উন্নত করার প্রতি তার আত্মোৎসর্গের জন্য তিনি সকলের স্মৃতিতে থাকবেন।
ডিঙ্গেল প্রথম কংগ্রেসম্যান নির্বাচিত হন ১৯৫৫ সালে, ২৯ বছর বয়সে। এর আগে তার বাবা জন ডিঙ্গেল সিনিয়র ওই আসনের কংগ্রেসম্যান ছিলেন। আচমকা তার মৃত্যুর পর সে আসন থেকে নির্বাচনে লড়েন ও জয়ী হন জন ডিঙ্গেল। এরপর থেকে ১১ প্রেসিডেন্টের আমলে টানা ৫৯ বছর ধরে মিশিগান থেকে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার সম্পর্কে বলেছেন, তিনি হচ্ছে সর্বকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী আইনপ্রনেতাদের মধ্যে একজন।
ডিঙ্গেল কংগ্রেসম্যান হিসেবে অবসরে যান ২০১৫ সালে। অবসরে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, আমি চাই না কেউ আমার জন্য দুঃখ অনুভব করুক। আমি কংগ্রেসম্যান থাকা অবস্থায় মরতে চাই না। আমি কোন অপর্যাপ্ত কাজ করতে চাই না।
ডিঙ্গেল তার জীবদ্দশায় জানিয়েছিলেন, কংগ্রেসে তার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোট ছিল ১৯৬৪ সালের সিভিল রাইটস এক্টের পক্ষে দেওয়া ভোট। ওই আইন অনুসারে, কর্মসংস্থানে জাত ও লিঙ্গ ভিত্তিক বৈষম্যতা নিষিদ্ধ করা হয়। এই ভোটের কারণে তিনি পরবর্তী নির্বাচনে প্রায় হারতে নিয়েছিলেন।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারি সেবা মেডিকেয়ার প্রতিষ্ঠায়ও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। পরবর্তীতে ওবামার সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
তার উত্তরসূরী হিসেবে ডিঙ্গেলের স্ত্রী ২০১৫ সালে মিশিগান থেকে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
ডিঙ্গেল বেশ ক’দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। তার পাশে থাকার জন্য তার স্ত্রী ডেবি ডিঙ্গেল গত মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে যোগ দেননি।
অবসরের পরও মার্কিন রাজনীতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন ডিঙ্গেল। বিভিন্ন ইস্যুতে নিজের অবস্থান জানাতেন টুইট করে। তার সর্বশেষ পোস্টে লেখা ছিল- এখনই আমার কাছ থেকে আপনারা নিস্তার পাচ্ছেন না।