অবশেষে দীর্ঘ ১৬ বছরের অনশন ভাঙলেন ভারতের মনিপুর রাজ্যের লৌহমানবী খ্যাত ইরম চানু শর্মিলা। মঙ্গলবার বিকেলে অনশন ভাঙার পর তিনি আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েন। ২০০০ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে ১০ বেসামরিক নাগরিক নিহতের প্রতিবাদে তিনি অনশন শুরু করেন। তার দাবি ছিল, অবিলম্বে রাজ্যটি থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হোক। যদিও তার দাবি কর্ণপাত করেনি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। মঙ্গলবার বিকেলে শর্মিলা দীর্ঘ অনশনের অবসান ঘটান। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এদিন আদালত প্রাঙ্গণে সমর্থকদের উপস্থিতিতে ফলের রস খেয়ে তিনি অনশন ভাঙেন।
গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এতদিন এই নারী একবারের জন্যেও খাবার স্পর্শ করেননি। মনিপুরের রাজধানী ইম্ফলের একটি কারা-হাসপাতালে এতদিন তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। এই লৌহমানবীকে বাঁচিয়ে রাখতে নাক দিয়ে পাইপ ঢুকিয়ে জোরপূর্বক খাবার দেয়া হচ্ছিলো। তবে অনশন ভাঙলেও এখনই স্বাভাবিক খাবার খেতে পারবেন না তিনি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যগত কারণে আগামী কয়েকদিন শর্মিলাকে তরল খাবার খেতে দেয়া হবে।
সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন India’s Armed Forces Special Powers Act (AFSPA) বাতিলের দাবিতে ২০০০ সালে ২৮ বছর বয়সে অনশন শুরু করেন শর্মিলা। বর্তমানে তার বয়স ৪৪ বছর। এতদিন তাকে কারাগারে এবং কারা হাসপাতালেই কাটাতে হয়েছে। সমর্থকেরা বলছেন, এতদিনেও ভারত সরকার শর্মিলার ডাকে সাড়া না দেয়ায় কৌশল বদলেছেন তিনি। গেলো ২৬ জুলাই এই লৌহমানবী রাজনীতিতে নামার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। শুধু তাই নয় এতদিনের অনশন জীবন শেষ করে বিয়ে করার কথাও জানান।
মনিপুর ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অন্যান্য রাজ্যে এএফএসপিএ-র বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে শর্মিলা ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। বিশ্বে এতো দীর্ঘ সময় অনশনের নজির নেই। আগামী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াবেন তিনি। তবে শর্মিলার সিদ্ধান্তে রাজ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে অনশন ভাঙার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানালেও হতাশ হয়েছেন কেউ কেউ। রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহতদের স্বজনেরা জানিয়েছেন, শর্মিলা অনশন ভাঙলেও এএফএসপিএ আইনের বিরুদ্ধে তারা লড়াই চালিয়ে যাবেন।
অবশ্য শর্মিলার এক ঘনিষ্ঠ সঙ্গী বলেছেন, অনশন ভাঙলেও এএফএসপিএ বিরোধী আন্দোলন থেকে সরে আসছেন না তিনি। গেল ১৫ বছরে কোনো রাজনীতিবিদ শর্মিলার সঙ্গে সাক্ষাত করেননি। তাই আন্দোলনের কৌশল পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন একাকী যোদ্ধা ইরম শর্মিলা।