বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ জাপানের রয়েছে ঐতিহ্যময় সংস্কৃতি। বহু প্রাচীনও বটে। তবে কয়েকশ’ বছর আগেও নিজেদের সেই সংস্কৃতি অনেকটা আড়াল করেই রেখেছিল বিশ্ববাসীর কাছ থেকে। এখনও জাপানের ঐতিহ্যময় সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান সম্পর্কে কমই জানেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে দেশটির ঐতিহ্য সম্পর্কে রহস্য এখনও রয়েই গেছে। এই দ্বীপরাষ্ট্রটিতে যে বহু আগেই মানুষের পদচারণা ছিল, হালেই তা প্রকাশ পেয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিশ্বের প্রাচীনতম বড়শির সন্ধান মেলে জাপানে। গবেষকেরা জানান, ওকিনাওয়া দ্বীপে বড়শি ছাড়াও সেসব নিদর্শনের সন্ধান পাওয়া যায় তা অন্তত ২৩ হাজার বছরের পুরনো। গবেষকেরা আরও দাবি করেন, আজ থেকে অন্তত ৫০ হাজার বছর আগে দ্বীপটিতে মানব বসতি শুরু হয়। শুধু তাই নয়, বিচ্ছিন্ন দ্বীপটির অধিবাসীদের জানা ছিল সমুদ্রপথে চলাচলের উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার। গবেষকদের যে বিষয়টি বেশি বিস্মিত করে তা হল, সমুদ্রপথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা আবিস্কারের বহু আগেই তা জানা ছিল এই দ্বীপের মানুষের। পরবর্তীতে বাইরের পৃথিবী জাপানের সন্ধান পেলেও তাদের সম্পর্কে কমই জানতে পেরেছিল। তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে এখনও রহস্য রয়েছে গবেষকদের মনে। দ্বীপটিতে তাদের আগমন, বসবাস, প্রযুক্তির ব্যবহার ও উৎকর্ষতা সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা এখনও পাওয়া সম্ভব হয়নি। আর তা হয়নি জাপানের মানুষদের অনিচ্ছার কারণেই। দেশটির প্রাচীন মানুষের যে ক’জন এখনও বেঁচে আছেন তারা চান না গোপন বিষয়গুলো ফাঁস হয়ে যাক।
অবশ্য বড়শি আবিস্কারের মতো ঘটনায় কিছু কিছু রহস্যের ঢাকনা খুলছে। কিন্তু তাতে বরং রহস্য বাড়ছেই। আর জন্ম দিচ্ছে বিভিন্ন প্রশ্নের। সম্প্রতি একদল ডুবুরি জাপান সাগরের অতলে কিছু প্রাচীন স্থাপত্যের সন্ধান পেয়েছেন। এরমধ্যে একটি স্মৃতিস্তম্ভও রয়েছে। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে জানিয়েছেন সেটি অন্তত ২ কোটি বছরের পুরনো। অর্থাৎ জাপানে বসতি শুরুর বহুকাল আগেই অস্তিত্ত্ব ছিল সভ্যতার। আটলান্টিসের মতোই এখানেও যে কোনো হারানো সভ্যতা ছিল সে সম্পর্কে এখন নিশ্চিত গবেষকেরা। তারা এর স্থাপত্য পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, কোনো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তারা বিশাল বিশাল পাথর কেটে নিঁখুত সব স্থাপনা নির্মাণ করেন। সাগরের নীচে যে পুরনো অনেক সভ্যতাই নিমজ্জিত হয়েছে এমন দাবি বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরেই করে আসছেন। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এমনই সভ্যতা থাকার দাবি করেছিলেন আগস্টাস লে প্লোনজিওন। বিখ্যাত ওই পরিব্রাজক ১৯ শতকের গোড়ার দিকেই এমন দাবি করেন। মু (MU) নামক সেই হারানোর সভ্যতার বিষয়ে সমর্থন মেলে ১৮শ শতকে জেমস চার্চওয়ার্ড’এর আঁকা মানচিত্রেও।
জাপান সাগরে পাওয়া এই স্থাপত্যগুলো এমনই কোনো সভ্যতার নিদর্শন বলেই মত বিজ্ঞানীদের। তাদের মতে, ভূমিকম্পের মতো কোনো বড় ধরনের প্র্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেই সাগরে বিলীন হয়ে যায় সেই সভ্যতা। যেহেতু এই অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ইতিহাস রয়েছে, সন্দেহটি তাই আরো জোরালো হয়েছে।
সূত্র: ইন্টারনেট