শ্রীলঙ্কাকে তার বিদায়ী ম্যাচে কলম্বোতে বৃহস্পতিবার উড়িয়ে দিয়ে ৪৫ রানে ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। বিদায়ী অধিনায়ককে দিল স্মরণীয় জয় উপহার। খেলাশেষে টেলিভিশনে পুরস্কার বিরতরণী অনুষ্ঠানে প্রেজেন্টার ভাবলেন অবসরের এই দিনে হয়তো আবেগ ছুঁয়ে যাবে মাশরাফির সব কথাতেই। কিন্তু আবেগের খুব একটা ধার কাছ দিয়ে গেলেন না এদিনই টি-টুয়েন্টিতে সাবেক খেলোয়াড় হয়ে যাওয়া মাশরাফি। মনটা খুব খারাপা দেখাচ্ছিল এমন জয়ের পরও। মলিন চেহারায় যেন ক্লান্ত-শ্রান্ত একজন মানুষ। ২০ ওভারের ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার মাটিতে এমন জয় উপহার পেয়ে অবশ্য সতীর্থদের কারণে অভিভূত। সতীর্থদের কারণেই তো নেতা ও খেলোয়াড় হিসেবে টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা জয় দিয়ে শেষ করতে পারলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সফরের শেষ সিরিজটাও টেস্ট আর ওয়ানডের মতো ১-১ এ ড্র হলো। দল দুর্দান্ত এমন ব্যাপার ঘটানোর পর মাশরাফির সামনে লাইভে শেষ ম্যাচ খেলে ফেলার আবেগ কতোটা তা জানতে চাইলে শতভাগ পেশাদারের মতোই মাশরাফি বলে গেলেন, ‘আসলে জয় দিয়ে এভাবে শেষ করতে পারাটা তো অসাধারণ ব্যাপার। আশা করি এটা ভবিষ্যতে আমাদের কাজে আসবে।’ এরপর নিজের ব্যাপারে বললেন সামান্যই। মাশরাফির ভাষায়, ‘আর আমার ব্যাপারে…আমি গর্বিত যে এই ছেলেদের সাথে খেলেছি, অসাধারণ তারা। অসাধারণ দলের সবাই, সাপোর্টিং স্টাফরা। ধন্যবাদ ওদের। আমি আমার ক্রিকেট বোর্ডকে তো অবশ্যই ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমার ভালো খারাপ সময়ে সবসময় সমর্থন পেয়েছি। আর অবশ্যই ধন্যবাদ আমার পরিবারকে।’
ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে ব্যাট হাতে গোল্ডেন ডাক। বল হাতে ৪ ওভারে ৩০ রানে ১ উইকেট। বলার মতো খুব কিছু না হলেও এবারের শ্রীলঙ্কা সফর নিয়ে উচ্ছসিত মাশরাফি। কারণ, মুশফিকুর রহীমের টেস্ট দল ২ ম্যাচের সিরিজের একটিতে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কাকে, প্রথমবারের মতো। এরপর মাশরাফি এসে ওয়ানডে দলের হাল ধরেই প্রথম ম্যাচে জয় পেয়েছে। বৃষ্টিতে দ্বিতীয় ম্যাচ পরিত্যক্ত। তৃতীয়টা শ্রীলঙ্কা জিতে সিরিজ হার বাঁচিয়েছে। মাশরাফির জন্য শ্রীলঙ্কা কোনো নতুন জায়গা না। বহু সফর করেছেন। কিন্তু এবারেরটা তার জন্য যেমন অন্যরকম, অন্য সবার জন্যও বটে। এই প্রথম শক্তিশালী কোনো দলের বিপক্ষে পূর্ণাঙ্গ সিরিজে এভাবে তিনটি সিরিজই ড্র করে দেশে ফিরছে দল। যার দুটির নেতা ছিলেন মাশরাফি। কলম্বো তার টি-টুয়েন্টি অবসরের শহর হয়ে থাকল। কষ্ট তো কিছু আছে। তবে এটাকে সরাসরি ইতিহাসে নিজেদের সেরা সফর না বললেও মাশরাফি বললেন, ‘এই সফরটা আসলে খুব ভালো গেল। টেস্ট সিরিজ থেকেই। এরপর আমরা ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি সিরিজটাও ড্র করলাম। আমাদের ছেলেরা অসাধারণ চারিত্রিক দৃঢ়তা দেখিয়েছে। আশা করছি আগামী সফরে এটা কাজে আসবে। এখানে আমরা আগেও এসেছি, খেলেছি। কিন্তু এবারই সবচেয়ে বেশি উপভোগ করলাম।’
৩৩ বছরের মাশরাফির টি-টুয়েন্টি ক্যারিয়ার ২০০৬ সালে শুরু হয়ে ২০১৭’র ৬ এপ্রিল শেষ হলো। এই সময়ে ইনজুরির সাথে লড়ে বারবার ফিরে ৫৪ ম্যাচ খেলেছেন। এর মধ্যে ২৮ ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে জয় পাইয়ে মাঠ ছেড়েছেন ১০ বার। বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ সাফল্যের রেকর্ড। আর যাওয়ার সময় মাশরাফির সাথে থাকলো ৪২টি উইকেট ও ৩৭৭ রান।