হাসিনা বেগম রেখা // স্বরলিপি কালচারাল একাডেমির রজত জয়ন্তী উৎসব পালন
বাঙালি সংস্কৃতি চর্চায় নিবেদিত সংগঠন স্বরলিপি কালচারাল একাডেমির ৮ অক্টোবর তাকিনোগাওয়া কাইকানে অত্যন্ত আড়ম্বরপূর্ণভাবে রজত জয়ন্তী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিগত কয়েক মাস পূর্ব থেকে দেয়া বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত উৎসব অনুষ্ঠানের তারিখ, সময় ঘোষিত হলে বাঙালিরা অনেক প্রত্যাশা নিয়ে দিনটি উপোভোগের অপেক্ষায় থাকেন। যার ফলশ্রুতিতে স্বরলিপি কালচারাল একাডেমির ২৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শত শত উৎসাহী দর্শকের ঢল নামে।
স্বরলিপি কালচারাল একাডেমি জাপান এর প্রধান উপদেষ্টা মুনশী খন্দকার আজাদ এবং সুলতানা আজাদ রেণু, অধ্যক্ষ হাকিম মো: নাসিরুল, সার্বিক অনুষ্ঠান পরিচালক শেখ রানা বাদলসহ এই একাডেমির সংগে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি সদস্যের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবৎ নিয়মানুবর্তী হওয়ার জন্য প্রতিবছরের ন্যায় এবারও স্বরলিপি কালচারাল একাডেমির শিল্পীদের অংশ নেয়া প্রতিটি পর্বই অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক, সফল হয়েছে।
সন্ধ্যা ৬ টায় অনুষ্ঠান শুরুর ঘোষণা থাকলেও প্রবাসী উৎসুক দর্শকেরা সাজ সাজ রবে দূর দূরান্ত থেকে রজত জয়ন্তী অনুষ্ঠান উপভোগ করার জন্য বহু আগে থেকেই ছুটে এসেছেন সপরিবারে, সবান্ধবে। তাকিনোগাওয়া কাইকান বাঙালিদের পদচারণায় মুখরিত হয়। এদিন দুপুর থেকেই টোকিওর কামিনাকাজাতো নামক রেল স্টেশনটিতে বাঙালিয়ানা সাজে সজ্জিত নর-নারীর আনাগোনা বহুলাংশে বেড়ে যায়।
মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটির প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দি এফেয়ার্স ড. সাহিদা আক্তার, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন এ.পি.এফ.এস. এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাতসুও ইয়শিনারি।
তনুশ্রী বিশ্বাস ও বহ্নির যৌথ উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য রাখেন অধ্যক্ষ এমডি নাসিরুল হাকিম। এরপর যথাক্রমে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কাতসুও ইয়শিনারি, ড. সাহিদা আক্তার এবং মুনশী কে আজাদ।
মূল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি অত্রন্ত দক্ষতার সংগে নাচ, গান, আবৃত্তি, কৌতুক, সম্মাননা জানানো এবং মঞ্চ নাটক দিয়ে সাজানো ছিলো। “মেঘের পালক চাঁদের নোলক” গানের সংগে বড়দের দলীয় নাচটি ছিলো অনবদ্য। “মেঘের কোলে রোদ হেসেছে” গানের সংগে নাচ করা মিমুদের এক এক টুকরো মেঘের মতোই মনে হয়েছে এবং দর্শকরা মূর্হুর্মূহু করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছে। কলির ‘‘কন্যারে কন্যারে বাঁকা চুলেতে খোপা আর কাটিস না—” গানের সংগে সুন্দর নাচটি হলভর্তি দর্শকরা দারুণভাবে উপভোগ করেছে।
তনুশ্রী বিশ্বাস, সালমা আকতার লাকির আবৃত্তি, জাপানি বংশোদ্ভুত বাঙালি বন্ধু তোমোকো’র কণ্ঠে বাংলা গান, মিতালী ঘোষ, মাহাদি মাসুম হিমু, মুহিত, দিপ্ত হুদা, রেইনা, বাদল, তানভির, শাম্মি আখতার, নওরিন হাকিম, সুমি চৌধুরী, বাবু ঢালি, সোমা, জনির গান দর্শক উপভোগ করেছেন।
অনুষ্ঠানটির সর্বশেষে ছিলো নাট্যকার অধ্যক্ষ এমডি নাসিরুল হাকিম এর “ফেইসবুক ক্যারিকালচার’’ নামক নাটক। নাটকটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন নাজমুল হোসেন রতন এবং শাহজাহান রানা। নাটকে অংশ নেয়া শাহিন রহমান, রুমানা সোমা, সুমি চৌধুরী, শাহজাহান রানা, নাজমুল হোসেন রতন, দিপ্ত, তানভির, রাইমা, বাবু ঢালি, খন্দকার আসলাম হিরা অভিনয়ের দক্ষতা দিয়ে দর্শক হৃদয় জয় করতে সক্ষম হন। প্রতিটি সৌখিন অভিনেতা অভিনেত্রীর সংলাপ বলার ধরণটি বাস্তবসম্মত হয়েছে এবং প্রতিটি চরিত্রের সংগে তারা একাত্ম হতে পেরেছেন। বর্তমান সময়ের ফেইসবুকের সবচেয়ে স্পর্শকাতর কঠিন বাস্তবভিত্তিক বিষয়টির নানান ক্ষতিকর দিক চিহ্নিত এবং এর ভালো দিক সম্পর্কে উৎসাহিত করে নাটকটির বিষয়বস্তু নির্ধারণ করায় নাসিরুল হাকিম একজন সফল নাট্যকার হিসেবে অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার দারি রাখেন।
এ বছর স্বরলিপির পক্ষ থেকে মুনশী কে. আজাদ এবং সুলতানা আজাদ রেণুকে আজীবন সম্মাননা জানানো হয়। এছাড়াও জাপানে আরেকটি বাঙালি সাংস্কৃতিক সংগটন উত্তরণকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয় এবং দলীয় নেতা মো: নাজিম উদ্দিন তা গ্রহণ করেন। এসময় মুনশী কে. আজাদ এবং এমডি নাসিরুল হাকিম মো: নাজিম উদ্দিনের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।
রজত জয়ন্তী ১৭ স্বরলিপি কালচারাল একাডেমি কর্তৃক একটি ঝকঝকে সুন্দর প্রচ্ছদ সম্বলিত স্মরণিকা বের হয়। এতে একাডেমি সংশ্লিষ্ট সদস্যদের পরিচিতি তুলে ধরা হয় এবং বিভিন্ন গল্প, কবিতা, বাণী, কৌতুক, স্মৃতিকথা প্রকাশিত হয়। স্মরণিকাটিতে দেখা যায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ বিভাগে একাডেমির বিভিন্ন কার্য সম্বলিত সংবাদ নিয়মিত পরিবেশন এবং সহযোগিতার জন্য নির্দিষ্ট কিছু পোর্টালের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়েছে কিন্তু কিছু পোর্টালকে সযত্নে এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি অনেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। প্রকারন্তরে এতো সফল বৃহৎ একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষে এরকম না করাটিই বাঞ্ছনীয় ছিলো বলে মত প্রকাশ করেন।
পরিশেষে স্বরলিপি কালচারাল একাডেমির সুন্দর, মনোমুগ্ধকর, আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান উপহার দেয়ার জন্য দর্শক-শ্রোতারা সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং আগামী অনুষ্ঠান দেখার মনোবৃত্তি পোষণ করেন।
ছবি – রাহমান মনি