-হাসিনা বেগম রেখা
এ এক অন্য রকম আনন্দ। বাবা মায়ের শাসন থেকে বেরিয়ে স্বাধীনভাবে বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা,সদ্য তরুণীর নতুন শাড়ির ভাঁজে ভিন্ন রূপে নিজেকে খুঁজে পাওয়া, দেবীর আশীর্বাদ নিয়ে প্রথম হাতে খড়ি বাড়ির ক্ষুদে সদস্যদের। এসব ছোট ছোট কিছু মুহূর্ত , কিছু স্মৃতি আর বাঁধন ছাড়া আনন্দ মানেই তো সরস্বতী পূজা। যেকোন উৎসবের দিন হোক কিংবা আনন্দের মুহূর্ত চুটিয়ে আনন্দ উপভোগ করতে সর্বদাই প্রস্তুত বাঙালি মন। মাঘ মাসের শ্রী পঞ্চমী তিথিতে বিদ্যা ও সংগীতের দেবী সরস্বতীর আরাধনায় মেতে উঠে সকলে।
বরাবরের মতো বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা,উৎসবমুখর পরিবেশ এবং নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে ২৮ জানুয়ারী ২০১৮ রোববার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী সরস্বতী পূজা উৎযাপিত হয়েছে জাপানে। এবারের আয়োজন ছিল সার্বজনীন পূজা কমিটির জাপানের ২৩ তম আয়োজন। প্রচন্ড শীত কে উপেক্ষা করে টোকিওর অদূরে সাইতামা কেন এর ওয়ারাবি সিটির কিতামাচি কুমিনকান এ অস্থায়ী পূজা মণ্ডপে সকাল থেকেই ছোট ছোট ছেলে মেয়ে তরুণ তরুণীরা তাদের অভিভাবকদের সাথে সংস্কৃতি দেবীর আরাধনায় পূজা মণ্ডপে হাজির হতে থাকে। কৃপা লাভের আশায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিদ্যাদেবী সরস্বতীর পদপদ্মে পুষ্পাঞ্জলি দিয়েছে শিক্ষার্থসহ নানা পেশা ও নানা বয়সের মানুষ। শিক্ষার্থীরা তাদের বইগুলো রেখে দেন মায়ের চরণে আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য। প্রথম শিক্ষা জীবন শুরু করার জন্য অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে আসেন পূজা পরিচালনার ঠাকুরের কাছে। বিদ্যানুরাগীরা ও ভক্তরা দিনটি শুরু করেছেন দেবীর চরণে অঞ্জলি দিয়ে।
দুপুরে পূজার প্রসাদ বিতরণ শেষে দ্বিতীয় পর্বে শুরু হয় পূজা বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠান ।
তনুশ্রী বিশ্বাসের পরিচালনায় আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমার প্রতিনিধিত্ব করেন দূতাবাসের কমার্স কাউন্সিলর মো:হাসান আরিফ।
পূজায় আগত অতিথি পূজারী ভক্তদের স্বাগত জানিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সার্বজনীন পূজা কমিটির জাপান এর সভাপতি শ্রী সুনীল রায়। তিনি বলেন দেবী সরস্বতী অষ্টশক্তিময়ী । যুগ,স্বত্ব,বিমল,প্রজ্ঞা,বুদ্ধি,সৃষ্টি এবং মেধা। দেবী সরস্বতী শেত পত্রে আসীনা,শেত পুষ্পে সুভিতা,শেত বস্ত্র পরিহিতা,শেত চীনা ধারিনি,শেত অলংকারে ভূষিতা তাই তিনি শুভ্র বর্ণা। তাছাড়া দেবী সরস্বতী বিভিন্ন রূপে এবং বিভিন্ন দেশে তার পূজা উদযাপিত হয়ে থাকে। যেমন সরস্বতী ও বৌদ্ধ্যাতাং এ পদ্মাসীনা সরস্বতী,ময়ূর বাহন সরস্বতী,মেষ বাহনা সরস্বতী,সিংহ বাহনা সরস্বতী,ললিতা আসনে আসীনা সরস্বতী,এবং বিভিন্ন দেশ বলতে যেমন-দক্ষিণ ভারত,তিব্বত,এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন-জাপান,জার্মান ইউরোপের অন্যান্য দেশে দেবী পূজা প্রচলন চলে আসছে। যুদ্ধ নয়,ধ্বংস নয়,আমরা যেন হতে পারি সৃজনশীল,আমরা যেন প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করে সুখ সমৃদ্ধি এবং ঐক্যের সন্ধান পাই সেই কামনায় মায়ের পায়ে পুষ্পাঞ্জলি অর্পনের মাধ্যমে প্রার্থনা জানাই।
এরপর যথাক্রমে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী রতন বর্মন,উপদেষ্টা শ্রী সুখেন ব্রহ্ম, বিশেষ অতিথি জাপান রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ স্বামী মেধ সানন্দ। প্রধান অতিথির রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমার প্রতিনিধি হাসান আরিফ প্রমুখ।
সার্বজনীন পূজা কমিটির জাপানের সাংগঠনিক সম্পাদক ড: অতুনু সাহার ধন্যবাদ জ্ঞাপন এর মধ্যে দিয়ে আলোচনা সভার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।আলোচনা অনুষ্ঠান শেষ হলে শিশু কিশোরদের সাংস্কৃতিক পর্বটি পরিচালনা করেন তনুশ্রী বিশ্বাস।শিশুদের অংশ নেয়া নাচ,গান,আবৃতি,পিয়ানোতে সুর তোলা শুনে সকল দর্শক শ্রোতা মুগ্ধ হন। শিশু শিল্পী তনুতা ঘোষ ও তার মা পপি ঘোষের যৌথ গানটি বেশ উপভোগ করেছে উপস্থিত সকলে। অন্যান্য শিল্পীদের গান নির্বাচন ও পরিবেশনা ছিল শ্রুতিমধুর।পূজায় ভক্তিমূলক গান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান খন্দকার ফজলুল হক রতনের পরিচালনায় উত্তরণ অংশ নেয়। উত্তরণের শিল্পীরা অতিথি দর্শকদের গান দিয়ে মাতিয়ে রাখতে সক্ষম হন।
সবশেষে ধুপ,শঙ্খ ধনি,প্রদীপের শোভায় সন্ধ্যা আরতি,আলিঙ্গন এবং ফল মিষ্টি বিতরণের মধ্য দিয়ে ২৩তম সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।
-হাসিনা বেগম রেখা