শনিবার রাজধানীতে আয়োজিত ‘ঢাকা মহানগরীর যানজট: আর্থিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা’শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব তথ্য ওঠে আসে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এআরআই-আইটিএন ভবনের সেমিনার হলে এ বৈঠকের আয়োজন করে বুয়েটের দুর্ঘটনা রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) এবং রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
বৈঠকের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এআরআইয়ের পরিচালক অধ্যাপক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। তাতে যানজটের আর্থিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা, যানজটের কারণ, যানজট থেকে উত্তরণের উপায়সহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়।
বৈঠকে বিভিন্ন সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন এবং মতামত তুলে ধরেন। সেমিনারে বারবারই নগরীর যানজট পরিস্থিতির ভয়াবহতার চিত্র ওঠে আসে বিশেষজ্ঞদের আলোচনায়। তারা বলেন, যানজটের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে মানুষ প্রয়োজনীয় বিশ্রামের সময় পাচ্ছে না। স্বজন এবং অন্যের সঙ্গে ‘ন্যায্য’আচরণের বদলে দুর্ব্যবহার করছেন ভুক্তভোগীরা। আবার দুর্ঘটনায় আহত বা শঙ্কটাপন্ন রোগীদেরকেও সময়মতো হাসপাতালে নেওয়া যাচ্ছে না। ফলে পথেই মৃত্যু হচ্ছে অনেক মানুষের।
সেমিনারে জানানো হয়, যানজটের কারণে রাজধানীতে পিক আওয়ারে একটি যানবাহন ঘণ্টায় যেতে পারে গড়ে পাঁচ কিলোমিটার। হেঁটে চললে এই গতিতে কোথাও পৌঁছানো যায়। তাছাড়া ঢাকায় পরিবহন সেবা বিশ্বে সবচেয়ে ব্যয়বহুল বলেও জানানো হয় আলোচনায়। এই আলোচনায় যানজটের আর্থিক ক্ষতি, মোকাবেলার নানা পরামর্শের পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির দিকটি নিয়েও আলোচনা করা হয়।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালের (পঙ্গু হাসপাতাল) সাবেক পরিচালক সিরাজ উল ইসলাম বলেন, যানজটের কারণে সব রোগই হয়। কারণ দেখা যায় একজন যানজটে এসি গাড়িতেও ঘামছেন। এটা তার টেনশন। তিনি চিন্তা করছেন, সময়মতো পৌঁছাতে পারবেন না। এর প্রভাব পড়ে তার শরীরে। তিনি বলেন, যানজট জীবনকে জটিল করে দিচ্ছে। থাইল্যান্ডে দেখেছি কেউ অসুস্থ হলে তাকে তিন মিনিটে সেবা দেয়। কিন্তু আমাদের এখানে ৩০০ মিনিটেও সেটা পারা যাবে কি না সন্দেহ আছে।
গত বছর সারাদেশে সাড়ে ছয় হাজার দুর্ঘটনায় উদ্ধার করা ১১ হাজার ৫০০ জনের মধ্যে আড়াই হাজার মানুষের মৃত্যুর পেছনেও অন্যতম কারণ হিসেবে যানজট দায়ী করেছেন ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (ঢাকা) দেবাশীষ বর্ধন। তিনি বলেন, অনেক সময় যানজটের কারণে দ্রুত হাসপাতালে না নিতে পারার কারণেও অনেকে মারা গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফারাহ দীবা বলেন, যানজটের কারণে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি-দুটোই হচ্ছে। মানসিক যে ক্ষতিটা হয় সেটা হচ্ছে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। আর এর প্রভাব পড়ে তার আচরণে। দেখা যায় বাসায় আসার পর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রাগের সঙ্গে কথা বলে।
আলোচনায় যানজট মোকাবেলায় বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, যানজট নিরসনে সরকারের সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। ফুটপাথগুলো দখলমুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনে হকারদের পুনর্বাসন করতে হবে। পরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়ন করতে হবে। রাজধানীর ওপর চাপ কমাতে নারায়ণগঞ্জ, সাভার, টঙ্গী, গাজীপুরের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ বাড়ানোর পরামর্শ আসে আলোচনায়। অফিস সময়ের আগে ও পরে ১০ মিনিট পরপর এসব রুটে ট্রেন ছাড়লে মানুষ রাজধানীর বদলে লাগোয়া জনপদে বেশি থাকবে বলে মনে করেন মোয়াজ্জেম হোসেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এআই মাহবুব উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক সরওয়ার জাহান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ প্রমুখ।