গত একশ বছরের মধ্যে গেল বছরই সবচেয়ে কম শিশু জন্ম হয়েছে। এর পাশাপাশি গেল বছর মৃত্যুর সংখ্যাও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি, প্রায় ১৩ লাখ। এর ফলে ক্রমেই জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে সূর্যোদয়ের দেশ জাপানের। কোন রোগ-বালাই বা মহামারিতে নয়, প্রাকৃতিকভাবেই হ্রাস পাচ্ছে দেশটির জনসংখ্যা। জন্মহার না বাড়ায় জাপান এখন বৃদ্ধদের দেশে পরিণত হয়েছে।
জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও জনকল্যান বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির প্রায় সাড়ে ১২ কোটি জনসংখ্যার চার ভাগের একভাগেরও বেশি লোক ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক। এছাড়া গোটা পৃথিবীর মধ্যে জাপানেই শতবর্ষী মানুষ সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে এ সংখ্যা প্রায় ৬৮ হাজার। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, জাপানে এখন শিশুদের ডায়াপারের চেয়ে বৃদ্ধদের ডায়াপার বেশি বিক্রি হচ্ছে।
কম জন্মহারের কারণে জাপানের এই অবস্থাকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন ‘ডেমোগ্রফিক টাইম বম্ব’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। তবে এর সাথে কমতে থাকে জন্মহার। গত শতকের পঞ্চাশের দশকে জাপানের জন্মহার ছিল ২.৭৫। এখন সেটি কমতে কমতে ১.৪ এ ঠেকেছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০৬৫ সালে দেশটির জনসংখ্যা আট কোটিতে নেমে যাবে।
জন্মহার কমতে থাকায় বয়স্কদের পেছনে সরকারের ব্যয় বেড়ে যাবে বহুগুণ। পেনশন, স্বাস্থ্যসেবায় অতিরিক্ত খরচের পাশাপাশি আয়ও কমে যাবে দেশটির। কারণ কাজ করার মত তরুণ জনগোষ্ঠী না থাকলে ট্যাক্স বাবদ সরকারের আয়ও থাকবে না। এর ফলে দেশটির প্রবৃদ্ধিও কমতে থাকবে।
অর্থনীতিতে ধ্বস নামার সাথে সাথে ভিন্ন ধরনের সমস্যাও তৈরি হচ্ছে জাপানের জন্য। দেশটিতে এখন বৃদ্ধ লোকদের দেখাশোনা করার মত কমবয়সী পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ইচ্ছাকৃতভাবেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ছে দেশটির বয়স্করা। অন্তত কারাগারে দেখভাল করার লোক তো থাকবে! জাপানি গবেষক ইউকি শিনকো বলছেন, নিঃসঙ্গতা ও একঘেয়েমী কাটানোর জন্য বৃদ্ধরা সুপারশপ থেকে চুরির মত ছোট ছোট অপরাধে জড়াচ্ছেন। গত এক দশকে বয়স্কদের জেলে যাওয়ার হার বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ফলে জাপানের জেলগুলোও এখন নার্সিং হোমে পরিণত হচ্ছে।
জাপানের কম জন্মহারের পেছনের একটি কারণ হল কর্মজীবী নারী। জাপানের মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার হার ৪০ ভাগের বেশি। পুরুষের পাশাপাশি জাপানে অনেক নারীই এখন কাজ করে থাকে। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ হিরোশি ইয়োশিদার মতে, কাজের চাপের সাথে সন্তান নেয়ার দায়িত্ব সামলাতে রাজি নয় অনেক কর্মজীবি নারী। তার ওপর নারী ও পুরুষের মধ্যে বেতনের বৈষম্য থাকায় কাজ ছেড়ে সংসারে মন দিতেও অনীহা আছে তাদের। কারণ একবার কাজ ছাড়লে নতুন করে একই বেতনের কাজ পাওয়াও কষ্টকর হয়ে যায়।
জাপানের মত কাজ ও মাতৃত্বের মধ্যে টানাপোড়েন বিশ্বের অন্য উন্নত দেশগুলোও মোকাবেলা করছে, কিন্তু তাদের অবস্থা এতটা খারাপ নয়। তবে আগামী বিশ বছরের মধ্যে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড ও ভারতের মত এশিয়ার বেশ কিছু দেশে বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করবে বলে গত বছর এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আইএমএফ।