ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন মামলার আসামি নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন। রোববার বিকেল ৩টায় শুরু হওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তারা এই দায় স্বীকার করেন। আদালতে ওই দুই আসামি প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে জবানবন্দি নির্দেশ। জবানবন্দিতে তারা খুনের পরিকল্পনা, হত্যা মিশন ও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য আদালতকে জানিয়েছেন।
পিবিআই স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাহেরুল হক সোহান ব্রিফ করে জানান, দুই আসামি জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন কারাগারে থাকা অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা নুসরাতকে খুন করার নির্দেশ দেন। অধ্যক্ষের নির্দেশ পাওয়ার পর নুসরাতকে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে মারার সিদ্ধান্ত হয়।
বিকেল ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত জবানবন্দি দেন আসামি নুর উদ্দিন। এরপর জবানবন্দি দেন আরেক আসামি শাহাদাত হোসেন। তার জবানবন্দি চলে রাত পৌনে ১টা পর্যন্ত। ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইন দুই আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে সোনাগাজী ইসলামিয়া মাদরাসা ক্যাম্পাসে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী রাফিকে মাদরাসার সাইক্লোন সেন্টারের ছাদে কৌশলে ডেকে নিয়ে যান। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাফিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ১০ এপ্রিল আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাফির মৃত্যু হয়।
নুসরাতের গায়ে আগুন লাগানোর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে পিবিআই সংবাদ সম্মেলনে জানায়, দুই কারণে নুসরাতকে হত্যা করা হয়। যৌন নিপীড়নের মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ গ্রেফতার হওয়ায় নুসরাতের কারণে আলেম সমাজ হেয় হয়েছে। এছাড়া আসামি শাহাদাত হোসেন বেশ কয়েকবার নুসরাতকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু নুসরাত তা গ্রহণ না করায় তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়।
পিবিআই জানিয়েছে, এ ঘটনায় ১৩ জনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এর মধ্যে দুইজন মেয়ে, যারা ওই মাদরাসার শিক্ষার্থী। আর ছাদে নুসরাতের গায়ে আগুন লাগানোর সময় চারজন অংশ নিয়েছিল।
নুসরাত হত্যা মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ আটজন গ্রেফতার রয়েছেন ।